somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের প্রথম বিজ্ঞান বক্তৃতা : বিজ্ঞান একটি চলমান প্রক্রিয়া

১০ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় বলে, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আবার এটাও তো ঠিক, ইতিহাস ছাড়া বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুটিই অন্ধকার। এই ইতিহাস জানিয়েই বর্তমানের বিজ্ঞানচর্চায় একটু আলো ধরার জন্য গত ৩০ অক্টোবর আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার আয়োজন করেছিল এক বিজ্ঞান বক্তৃতার। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ বক্তৃতা। বিষয় ছিল 'বৈজ্ঞানিক ধারণার ক্রমবিবর্তন : থেলিস থেকে নিউটন।' এতে প্রথমবারের মতো পেশাদারিত্বের বিজ্ঞান বক্তৃতা করলেন বিজ্ঞানকর্মী জাহাঙ্গীর সুর। বিজ্ঞানের ক্রমধারায় কী করে আধুনিক সব মতবাদ প্রতিষ্ঠা পেল, তা জানতে হলে চোখ ফেরাতে হবে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান-সাধকদের ইতিহাসের দিকেই। সেসব ইতিহাসই গল্পচ্ছলে উঠে এসেছিল এদিনের বিজ্ঞান বক্তৃতায়। হাইস্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ১৬ জন দর্শক-শ্রোতা দর্শনীর বিনিময়ে অংশ নিয়েছিলেন। বিজ্ঞান বক্তৃতা ছিল প্রাণবন্ত।
বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের জন্য এত দীর্ঘ সময়ের যে পথচলা তা নেহাৎ সোজাসাপটা ছিল না সব বিজ্ঞানীর জন্য। এর জন্য সবাইকে পোহাতে হয়েছে নানা ভঙ্গুর পথ। হাইপেশিয়ার মতো একজন নারী গণিতবিদ সেই সময়ে নিজের জীবন দিয়েছিলেন বিজ্ঞানের জন্য। জিওর্দানো ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, কারণ তিনি বলেছিলেন, 'পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।' এমন অনেক ইতিহাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল জাহাঙ্গীর সুরের বক্তৃতায়। আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের একক উদ্যোগ ও আয়োজনে এটাই প্রথম বিজ্ঞান বক্তৃতা। ২০০৮ সালের ৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয় আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার। যদিও এটি জাহাঙ্গীর সুরের একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার। কিন্তু এখান থেকে যে কোন সময় যে কেউ বই সংগ্রহ করে পড়তে পারেন। তাছাড়া আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার বিজ্ঞান চর্চা উদ্বুদ্ধকরণে বিজ্ঞান মেলা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা, বিজ্ঞান বক্তৃতা, বই লেখা ইত্যাদি নানা ধরনের কাজ করে চলেছে। গ্রন্থাগারের নাম কেন 'আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার' দেয়া হলো তা তুলে ধরেন মানিকুল ইসলাম। জমিনপুর গ্রামের বাসিন্দা আকিমুদ্দিন ছিলেন শিক্ষক। গ্রামে প্রথম তিনিই প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম ১২ বছর বিনা বেতনে বাড়ি বাড়ি চাল ও মসুরের ডাল মুষ্টি তুলে তিনি স্কুলটা চালাতেন। তার শ্রদ্ধার্থেই গ্রন্থাগারের নামকরণ করা হয় আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার।
দর্শনী দিয়ে এদিন বিজ্ঞানের বিবর্তনের পথের ওপর বক্তৃতা শোনার সুযোগ পেয়েছিল দর্শকরা। 'আপনাকে যদি আমি একটা কথা বলি তাহলে কথাটা হয়তো আপনি শুনবেন কিন্তু তেমন মনোযোগ দিয়ে শুনবেন না। কিন্তু সেই একই কথা যদি আপনি দর্শনীর বিনিময়ে শোনেন তাহলে কথাগুলোর গুরুত্ব হবে আপনার কাছে অন্যরকম। তাই আমরা দর্শনীর বিনিময়ে বিজ্ঞান বক্তৃতা করছি। বাংলাদেশে এখনও এভাবে বক্তৃতার রেওয়াজটা চালু হয়নি। পেশাদার বিজ্ঞানবক্তা আসিফ প্রথম এভাবে দর্শনীর বিনিময়ে বিজ্ঞান বক্তৃতা করে থাকেন। তবে বিদেশে এটা ব্যাপক প্রচলিত। আমরা সেই প্রচলনটা আনতে চেষ্টা করছি। এতে করে সবার মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার কৌতুহল সৃষ্টি হতে পারে।' এমনই মত ব্যক্ত করেন বিজ্ঞানবক্তা জাহাঙ্গীর সুর।
শুধু বসে বসে কথা শোনাই নয়। এই বক্তৃতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছিল প্রশ্ন করার সুযোগ। রাজশাহী সিটি কলেজের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাইমের আগ্রহ ছিল হিগস বোসন কণা নিয়ে। বিনোদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ুয়া ফরহাদের আগ্রহ অন্য গ্রহে প্রাণের সন্ধান নিয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মাহফুজুর রহমান জানতে চেয়েছিল সূর্যের আলো সম্পর্কে। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইনজামামুল হক বুঝতে চাইল, কী করে পৃথিবীতে এক দেশে দিন অথচ একই সময়ে আরেক দেশে রাত। বক্তৃতা শেষে তাদের এসব জিজ্ঞাসার উত্তর দেন বক্তা জাহাঙ্গীর সুর।
একটু একটু করেই তো সামনের পথে এগোতে হয়। আর কিছু হোক না হোক এই বিজ্ঞান বক্তৃতা উপস্থিত সবাইকে নিজের জীবন ও এই বিশ্বকে নিয়ে ভাবতে সাহায্য করবে। এমনটাই মনে করেন আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগারের বিজ্ঞানকর্মীরা।

সুত্রঃ দৈনিক সংবাদ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×