somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেবুর একটা লেখা খুব ভালো লাগল বলে শেয়ার করলাম

০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অপ্সরা , অধরা , অপার বিস্ময় ।

কোঁকড়ানো চুল । টলটলে চোখ । বাবার কোলে আড়াই বছরের ছোট্ট প্রিন্সেস । ‘অপ্সরা, আংকেলকে সালাম দাও’ , কয়েক সেকেন্ড ধরে EYE CONTACT এর চেষ্টা করছি বদ বুড়ি পাত্তাই দিচ্ছেনা । কড়ে আঙ্গুলে তুলতুলে স্পর্শে পেছন ফিরে দেখি দেখি হ্যান্ডশেকের জন্যে হাত বাড়িয়েছে আরেক রাজকন্যা ।
‘ওর নাম অধরা , ও অনেক মিশুক’ ।
“ওমা ওটা আবার কে” !
‘তোমাদের ভাবী ওর নাম রেখেছে অপার বিস্ময়’ ।
আমার দেখা প্রথম ট্রিপলেট । ট্টিপলেটের বাংলা শব্দ জানিনা , তবে আমার কাছে ট্টিপলেট মানে অপার বিস্ময় । নিউনেটাল ওয়ার্ডে দ্বিতীয় বারের মত অবাক বিস্ময়ের দেখা পেলাম ।
NICU তে চার দিনে তৃতীয় নাইট করছি । তৃষ্ণা কাকে বলে , ক্লান্তি কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি । বেবি ওয়ার্মারের তাপে , সাকার মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দে তখন আমি সপ্তম স্বর্গে । একটু পরপর বাচ্চা খারাপ হচ্ছে । CPR,UMBO BAG ADRENALINE AMINOPHYLLIN । এক বেডে ৩টা ৪টা করে পুটলি , কোনটা কাঁদে বুঝিনা , কান্নার হেভি মেটাল মিউজিক । বিরক্ত হয়ে বাচ্চা ঠান্ডা করতে মিনি রাউন্ড দিলাম । লাইন ধরে একেকটার মুখে লিটল ফিঙ্গার ধরছি আর এটেন্ড্যান্টগুলোকে ধমকাচ্ছি –শুধু শুধু বুড়ো হইছেন কিম্বা আপনি কেমন মা, একটা বাচ্চার কান্না থামতে পারেন না । মনে মনে হেভি পার্ট নীরব দা গ্রেট PACIFIER । যে গল্পে ছিলাম – সেই তিন রাজপুত্র । দেড় কেজি করে ওজন , NVD হয়েছে , একজন PNA STAGE-1 । সারা রাত বাচ্চার বেডের পাশে বসে থাকা সেই সব মা , তুলোয় মোড়া আদরের টুকরা ANGEL এবং EVER FRUSTRATED DOCTORS নিয়ে এই লেখা ।

পিউ চোখ আর মিউ চোখ । থার্ড ইয়ারে পেডি ওয়ার্ডের সময় এই নাম দেই । যে সব পিচ্চিগুলোর চোখ বড় বড় , কেমন বোকা বোকা ভোঁতা দৃষ্টি , টলটলে ঝাড়ি দিলে মনে হয় কেঁদে ফেলবে তারা হচ্ছে মিউ চোখ । কারো আবার চোখ শার্প , দুষ্ট দুষ্ট , দৃষ্টি অনেক ডিপ । মনে হয় চোখ দিয়ে কিছু বলছে সব সময় । এরা হচ্ছে পিউ চোখ । আমি মিউ চোখ , আপনি ?

বাচ্চাগুলো কত নিশ্চিন্তে ঘুমায় । কোন এক ঘুম পরীর দেশ পেরিয়ে এসে গুমোট NICUতে কী সুন্দর করে আড়মোড়া ভাঙে । SUCKING REFLEX দেখার জন্যে বাচ্চাগুলোর মুখে আঙুল দিলে আঙুল টেনে নেয় আলতো করে । কী অদ্ভুত সেই স্পর্শ । অনেক নরম DELICATE তাই খুব কম ছোট বাচ্চা কোলে নেবার সাহস করেছি আগে । অথছ শুধুমাত্র ডাক্তার হয়েছি বলে নির্দ্বিধায় বাচ্চা খারাপ হলে বুকে চাপ দিচ্ছি (CPR) , মুখে UMBO করছি । বাচ্চা SHOCK এ থাকলে বা EXPIRE করলে বুকে আঙুলের দাগ বসে থাকে । PNAর বাচ্চাগুলোর SECRETION এসে যখন নাক মুখ ভরে যায় সাকার মেশিনের NOZZOLE যান্ত্রিক হাতে ওদের বুক পরিষ্কার করি । প্রত্যেকটা DEATH CERTIFICATE লেখা কষ্টের , প্রত্যেক মৃত্যু কান্নার । অনেক হাসি অনেক কান্না লুকিয়ে আমরা কসাই(ডাক্তার) হই ।

‘হাসপাতালে একমাত্র OBSTETRICIANরাই রোগীর লোকদের সুখবর দেন , তাই আমি এই গাইনী এন্ড অবসের ডাক্তার হতে চেয়েছি’ । থার্ড ইয়ারে থাকতে কোন এক MALE GYNAE & OBS CONSULTANT বলেছিলেন । সে হিসেবে নিউনেটের ডাক্তাররা সম্ভবত সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ দেন । পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র মানুষের স্পর্শ তাঁরা পান আবার কুৎসিততম মানুষের দেখাও তাঁরা পান । প্রফেসর স্যারকে বলতে শুনেছি প্রায়ই কিছু বাচ্চা পাওয়া যায় যাদেরকে বাবা/মা(!) হাসপাতালে ফেলে রেখে গেছে । ‘বেওয়ারিশ’ শব্দটা জীবিত মানুষের সাথে মানায় না লাশ হলে অন্য কথা ।

‘দুই সন্তানের বেশী সন্তান নিলে সরকার পরবর্তি সন্তানকে চিকিৎসা দেয়া বন্ধ করে দিবে সামনে’ – সাথের সিনিয়র নতুন রোগী রিসিভ করতে করতে বলছিলেন পার্টিকে । যমজ বাচ্চা কিন্তু তারা তাদের পিতামাতার ৫-৬নম্বর সন্তান । রাত ১২টার পর ভাল-খারাপ যত রোগী পেডি বা নিউনেটে ভর্তি হয় সবগুলো ক্লিনিক থেকে ফেরত দেয়া । এক বেডে ৩-৪জন করে যায়গা দেয়া হয় , সরকারী হাসপাতাল এমন একটা যায়গা যেখানে কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হয়না । মিডিয়া-কখনো কখনো সরকার নিজেই সরকারী হাসপাতালের বদনাম করে আমি তাই সুযোগ পেলে একটু ADD দেই । আপনি যত রাত করেই আসুন না কেন , হয়ত মাটিতে থাকতে হবে , মাসি ওয়ার্ডবয় বখরা চাইতে পারে , নার্সেরা হয়ত ততটা চকচকে না , আমি নিজেই হয়ত আপনাকে ঝাড়ি দিয়ে কথা বলব কিন্তু আপনি চিকিৎসা পাবেন প্রায় বিনামূল্যে । চিকিৎসা একটা টিম ওয়ার্ক ডাক্তার কখনো একলা কসাই না ।


কিছু গল্প কখনো বলা হয় না । কিছু অনুভূতি কখনো প্রকাশ করা যায় না । ধরেন আপনি NICU (NEONATAL ICU) তে ডিউটি করছেন । সকাল ৮টা । ওয়ার্ডে ঢুকেই দেখলেন একটা বাচ্চা খারাপ । কোন দিক না তাকিয়ে CPR(CARDIO PULMONARY RESUSCITATION) এবং UMBO BAG চাপা শুরু করলেন । একদিনের অপুষ্ট বাচ্চা (PRETERM 7MONTH) । তার সর্বশক্তি দিয়ে বুকে বাতাস টেনে নিতে পারছেনা । নীল হয়ে আসছে শরীর । যন্ত্রের মত ছোট বুকে চাপ দিচ্ছেন , SUCKER MACHINE দিয়ে SECRETION CLEAR করছেন , দিদিকে ADRIN-AMINOPHYLLIN দিতে বলছেন , মাসিকে OXYGEN HOOD ঠিক করতে চিৎকার করছেন , বাচ্চার মাকে UMBO চাপতে শেখাচ্ছেন । যে মা পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছেন ৩টা মেয়ের পর অবশেষে এটা তাঁর প্রথম ছেলে সন্তান । পুতুল খেলার বয়স থেকে একটা ছেলে পুতুলের বড় শখ তাঁর । কৈশোর পেরোতেই যখন সংসারের জোয়াল কাঁধে , একটা ছেলে সন্তানের জন্য কত চাবুক পড়েছে পিঠে তার হিসেব কেউ রাখেনি । বার বার মেয়ে পেটে আসায় একটা মেয়ে ভ্রুণকে ওরা জন্মের আগেই মেরে ফেলেছ । আর আপনি গত রাতে ডিনার করতে পারেননি , আজ সকালে কখন নাস্তা করবেন , কখন FOLLOW UP দিবেন , ROUND এ স্যারের কাছে BED এর রোগী মারা যাওয়ায় জবাবদিহি করতে হবে , DISSERTATION এর কাজও বাকি-এই টেনশন করছেন । বাচ্চাটা যুদ্ধ করছে , তার মা যুদ্ধ করছে , হতাশার সাথে যুদ্ধ করছি আমরাও , আমরা সবাই সহযোদ্ধা ।

“দিদি 30CC NORMAL SALINE RUNNING দেন”-বলে CA আপু অন্য পাশে রুটিন ফলো আপ দেয়া শুরু করছেন । ‘আপু আমি করি’ ? (মনে মনে চাচ্ছি-আপু প্লিজ আর দুই মিনিট CPR , UMBO করেন)

NICUতে জয়েন করতে মাত্রই এসেছি , সাত দিনের প্লেসমেন্ট । CPR দেয়ার শুরু এভাবেই । আপু এই বাচ্চাগুলোর FATE জানেন GONE CASE , আমি জানিনা তাই আমি চেষ্টা করবো , যতক্ষণ থাকে । এভাবেই ঐ বাচ্চা এবং পরের টানা দুই রাতের ডিউটিতে একই কাজ করেছি । একই কাজ আমার সিনিয়রেরা HMO IMO CAরা মাসের পর মাস করে যাচ্ছেন ক্লান্তিহীন , আমাদের স্যারেরা রাউন্ডের সময় কতটা দরদ দিয়ে বাচ্চাগুলোর পাশে বসছেন , প্রত্যেকটা বাচ্চার অক্সিজেন কানেকশন ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখছেন তাঁদের ধন্যবাদ দিতে এই লেখা ।

যে মুহুর্তে আপনি এ লেখাটি পড়ছেন , বাংলাদেশের কোন না কোন হাসপাতালে ক্লিনিকে কিম্বা ব্যাক্তিগতভাবে একজন কসাই আপনারই কোন বন্ধু-আত্মীয়ের বাচ্চাকে CPR দিচ্ছে, চেষ্টা করছে যেন বাচ্চাটা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে । সবকিছু টাকায় কেনা যায়না , ধন্যবাদ না দিন অন্তত কসাইয়ের গালি দিয়েন না ।
(বি.দ্র. বদ পিচ্চি গুলার দুইটা মাত্র রিফ্লেক্ষ ঘুম ভেঙ্গে কাঁদবে , মুখে আঙুল দিলে ঠান্ডা(এই কথা অনেক বার বলেছি) আর ওরা ব্যাথা পেলে বা ভয় পেলে হিসু করবে , বদ তিনটাকে CBG করতে গিয়ে ওদের হিসুতে মাখামাখি হয়ে গেছি)

চিকিৎসক সমাচার পেজ থেকে নেয়া..
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×