অনেক গরিব মানুষকে দেখেছি জীবনে,ধনীদের ঘৃনা করতে,বলে ওরা অহংকারী|অনেক ধনীদেরকে দেখছি গরিবদের লোভী-ছোটলোক বলতে। অনেক নাস্তিককে দেখেছি আস্তিকদের গোড়ামিতে চাপানো ধর্মে তারা মহা বিরক্ত|বলে আমিই নিজেইতো সব বুঝি|ধর্ম চাপিয়ে দেবাটা এক মস্ত অপরাধ|আস্তিকদের দেখেছি নিজের মা না থাকায় আরেকজনের মাকে গালি দেবার কষ্ট ওরা বুঝবে কি করে?আমি অনেক নারী দেখেছি রক্তে-মাংসে পুরুষ বিদ্বেষী,তারা পশু,পশুই। তারা নারীদেরকে পাইকারী জিনিস ভাবে। পুরুষতন্ত্র চাপিয়ে দেয় তাদের বুকে। অনেক পুরুষ দেখেছি তারা শুধুই নারী বিদ্বেষী যে,নারীকে তারা কখনই বিশ্বাস করে না। বলে,নারীর জাত ছলনাময়ী আর চরম স্বার্থপর ব্লা ব্লা...। অনেক কিশোর বালককে দেখেছি এরকম ধারনায় যে,বড়দের অথবা শিক্ষকদের ঘৃনা করতে কারণ অপ্রয়োজনীয় শাসন যাচ্ছেতাই ব্যাবহার,উঠতে বসতে লাঠি-জুতো এসব এত্তো এত্তো নিয়ম কানুন অসহ্য। আমরা দেখি বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা,ভাংচুর। কেউ ভাবে ইসলাম মানেই রক্ত,কল্লা ফেলানো,সহিংসতা ইত্যাদি ইত্যাদি। মসজিদ ভাঙ্গলে গৌতম বুদ্ধের অহিংসা দর্শনের চৌদ্ধ গুষ্টি উদ্ধার। মাদ্রাসাহ, মসজিদের অনেক হুজুর ইমাম সাহেবদের দেখেছি অনেক অনৈতিক কাজে কর্মে লিপ্ত তারা|তাই দাড়ি টুপিটাকে মানদন্ড ধরে বাংলা ভাই আর হাশিম আমলাও চলে যায় এক কাতারে। আর এই সমস্ত কষ্ট গুলোই জন্ম দেয় সাম্প্রদায়িতার জীবানু। তাই আস্তে আস্তে তরুণ থেকেই সবাই হয়ে পড়ছে বিষয়ভিত্তিক সাম্প্রদায়িক। কিন্তু তরুণ-যুব সমাজ কবে বুঝবে এইসবগুলো সমস্যার মূল কারণ শুধুমাত্র মুর্খতা!!
By: Asif Khan-mdh
বেশ কিছদিন আগে পোস্টটি পড়েছিলাম।সেখান থেকে কিছুটা অনুপ্রেরণা নিয়েই লেখাটা লিখে ফেললাম।
আমরা নিজের অজান্তে নিজেরাই সমাজে নতুন আরেকটি সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছি।মাথায় টুপি,লম্বা জামা,মুখে দাড়ি সোজা ভাষায় যাকে বলে হুজুর বা মোল্লা।সম্মান বা অপমান উভয় দিক থেকেই তাদেরকে ভিন্ন চোখে দেখায় হয় ।আর দুটি দিকই আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি।
মানুষ ভুলের উর্ধে নয় একথা আমরা সবাই জানলেও ভুলকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত নই।এটা জেনে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে,মানুষদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ অর্থাৎ নবী রাসুলদেরও ভুল হত।কিন্তু তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য এই যে তাদের ভুলগুলোও আল্লাহর পক্ষ হতে ঘটে এবং তাতে উম্মাতদের শিক্ষণীয় বিষয়াবলী থাকে,যা আমাদের মত সাধারণ মানুষ এমন কি বড় বড় আলেম উলামদের ভুলের মধ্যেও থাকে না। যেমন ধরুন রাসুল সাঃ যদি নামাজে ভুল না করতেন তাহলে সাহু সেজদার বিষয়টি আসত না। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে,ভুল ততক্ষণই তা ভুল যতক্ষণ পর্যন্ত তা না জেনে বা মনের অজান্তে ঘটে থাকে।জেনেশুনে ভুল করলে তা ভুল নয়,তা অন্যায়।
এটা ভাবলেই অবাক লাগে,যখন হুজুর নামের এই সম্প্রদায় কোন ভুল করে বসে সমাজ তখন একচোখা হয়ে যায়। আসেন ।কি বিশ্বাস হচ্ছে না?আসেন হজমলার ব্যবস্থা করা যাক। ধরুন একটা ছেলে প্রায় বিকেলেই অথবা রাত্রে লোডশেডিং হলে বারান্দায় আসে একটু হিমেল হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ফুরফুরা হতে।হঠাৎ একদিন দেখা গেল সামনেই অথবা আশেপাশের এক বারান্দায় একটি মেয়ে দাঁড়ানো আছে।সাধারণ ভাবে ভাবলে কি দাড়ায় ?আজ দেখাদেখি,কাল চোখাচোখি ,পরশু কফি শপ ।ব্যাস আরকি........হাবুডুবু খাওয়া শুরু। এখন গল্পের নায়ক যদি চেঞ্জ করে একটা হুজুর টাইপের ছেলে দাঁড় করিয়ে দেই তাহলে কেমন হয়?মোড়টাই ঘুরে যাবে,প্রথমে নালিশ পরে শালিস শেষকালে রায় "বেদ্দব পোলা,মাথায় টুপি দেও,আর এই সব কর"। ব্যাপারটা এমন যে ক্যাপের বদলে গোল টুপি,ফ্রেঞ্চ কাটের বদলে গালভর্তি দাড়ি আর প্যান্টকে টেনে নিচে নামিয়ে সিটি কর্পোরেশনের উপকারার্থে না লাগিয়ে টাখনুর উপরে রাখার অপরাধে তার পাপ দ্বিগুণ হয়েছে তাই শাস্তিও দ্বিগুণ হওয়া উচিত। কি পাঠক বিব্রতবোধ হচ্ছে?কিছু করারও নেই। আমাদের সমাজে এটাই স্বাভাবিক।
কল্পনার রাজ্য থেকে এবার বাস্তবে আসি। ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী হালাল-হারাম সবার জন্য একই । হালাল-হারাম ব্যাপারটা এতটাই পরিষ্কার যে তা বুঝার জন্য মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাশ করার দরকার হয় না।তাই হুজুরের জন্যে যা হালাল আপনার জন্যেও হালাল ,হুজুরের জন্যে যা হারাম তা আপনার জন্যেও হারাম। নফস আপনার যেমন আছে তেমন হুজুরেরও আছে।আপনার যেমন কামনা-বাসনা বলে কিছু আছে,তেমনটি তারও আছে ।তবে এটা জেনে নিন,যার ঈমান যত মজবুত তার পরীক্ষাও তত কঠিন,যার ঈমান যত কম তার পরীক্ষাও তত কম ।এই হিসেবে যদি হুজুরের ঈমান যদি বেশি হয় তবে তার পাপ করার প্রবনতাও বেশি হবার কথা। কেননা শয়তান তাকে বেশি বেশি কুমন্ত্রণা দেবে,আর শয়তানের ফাঁদে পা না দিয়ে পাপ থেকে বেঁচে থাকাটাই হল তার পরীক্ষা ।এখন সুদ,ঘুষ,মাদক,দুর্নীতি,নারী এইসব যদি আপনি নিজের জন্য হালাল মনে করেন তাহলে তা হুজুরের জন্যেও হালাল মনে করা উচিত।হুজুরকে এইসব করতে দেখে বিব্রত হওয়া বা "হুজুররা যদি এইসব করে তাহলে সাধারণ জনগণ কি করবে" এরকম একচোখা মন্তব্য সত্যিই অশোভনীয়। আর এভাবেই আপনি প্রকৃত মানবতাবাদী হতে পারবেন।রাগে গর গর করার দরকার নেই,ইহাই সত্য।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে,মাদ্রাসা নয় বরং অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা এক ছাত্র যদি হঠাৎ করে মুখে দাড়ি রেখে,টাখনুর উপর কাপড় পরে ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা বা কথাবার্তা শুরু করে তখন তাকেও হুজুর আখ্যায়িত করে ঐ সম্প্রদায়ে ফেলে দেয়া হবে।নিশ্চয়ই বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া মহাপাপ,কিন্তু তা করলে জাহান্নামে যাবেই একথা রাসুল সাঃ বলেন নি।নিশ্চয়ই জিনা করা মহাপাপ,কিন্তু জিনা করলে জাহান্নামে যাবেই একথা রাসুল সাঃ বলেন নি।কিন্তু টাখনুর নিচে প্যান্ট পড়লে সরাসরি জাহান্নাম,একথা রাসুল সাঃ ঠিকই বলেছেন।মানবেন না মানবে এটা আপনার ব্যাপার।কিন্তু আপনি নিজেও মানবেন না আবার যে মানার চেষ্টা করছে তাকে অবাধ্য করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাবেন এটা কোন ধরণের আধুনিকতা।
মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো মারাত্মক।সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা আধুনিকা কোন মেয়ে যখন হঠাৎ করে নিকাব বা পর্দা করা শুরু করে ঠিক তখনি আমরা ছেলেরাই তাদেরকে এমন সব শব্দে বা ব্যাকে বিশেষায়িত করি যা লিখনযোগ্য নয় ।আমার এটা ভেবে কষ্ট হয় যে,এরা ইসলামকে শুধু মুখেই ধারণ করেছে,অন্তরে নয়।
হাদিয়া নিয়ে কিছু না বললেই নয়।এই ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে।ইমামতি বা কুরআন শেখানোর বিনিময়ে আপনি হুজুরকে যে বেতন দিচ্ছেন তা কখনোই বিনিময় হতে পারে না আর ইসলাম নিজেও তা সমর্থন করে না ।আপনি তার শ্রমের বিনিময় দিচ্ছেন মাত্র।আপনি নিজে যদি ইমামতির যোগ্যতা অর্জন করেন কিংবা নিজেই আপনার সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দেন তবে এটাই উত্তম।
একই ভাবে হুজুরকে দাওয়াত দিয়ে আপনার মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন বা মিলাদ পড়িয়ে মিষ্টি বিতরণ করবেন তাও ইসলাম সমর্থন করে না।যে হুজুররা করে তারা হয়ত নিজের অথবা আপনার মন রাখতেই এগুলো করে।হুজুর "রাব্বির হাম হুমা কামা....." পড়লে তার মাতাপিতার জন্য দোয়া হবে আপনার মাতাপিতার জন্য না। তবে হ্যাঁ প্রচলিত একবেলা এতিমখানার ছাত্রদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করার বিষয়টি অনুমদিত এবং তা সদকাহ হিসেবে গণ্য হবে।ইচ্ছা করলে পথচারী শিশুদের নিয়েও কাজটি করতে পারেন।এই ব্যাপারে এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ
আবার দেখুন আমাদের অনেকেরই হয়ত জানা নেই যে নিজের কুরবানি নিজ হাতে করাই উত্তম। তাহলে আর কুরবানি করার হাদিয়া নিয়ে আপনাকে বিব্রত হতে হবে না।
এই হুজুর সম্প্রদায়ের আরো একটি বিশেষ্য নিয়ে সারা বিশ্বেই তর্জন-গর্জন আছে।এই বিষয়ে আমার নিজেরও ভালো লেখাপড়া নেই ।শুধু এতটুকু বলছি সবাইকে এক মনে করে প্যারাসিটামল দুই বেলা খেতে বলাটা যেমন ভুল তেমনি ইসলামের এই রুকুন নিয়ে কেউ কথাবার্তা বললেই তাকে বিশেষ্যে বিশেষায়িত করাটা মূর্খতা।মূর্খতা এই কারণে যে ,এই বিষয়ে অনেক বিজ্ঞও আলেমও বিভ্রান্ত হয়েছেন,এই ব্যাপারে হককথা বলার কারণে অনেক সালাফি আলেম হয়েছেন নির্বাসিত। তাই যাদের এই বিষয়ে গভীর জ্ঞান নেই তারা পথভ্রষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক।
পরিশেষে একটি ব্যাপার বলি,আজকে যাদের আমরা হুজুর বলি বা উপাধি দেই তারা প্রকৃত অর্থে হুজুর বা মোল্লা কিছুই নয়।খ্রিস্টান পোপ ও ফাদারদের যতটুকু ক্ষমতা ও সম্মান,মুসলিমদের ইমাম ও হুজুরদের তারচেয়ে বেশি হওয়ার কথা ছিল।তাদের হওয়ার কথা ছিল সমাজের নেতা ও হোতা।কিন্তু আজ তা হচ্ছে না। কেননা তারা শুধু ধর্মীয় আচার নিয়েই ব্যস্ত,এর বাহিরে তারা কিছু বুঝতে নারাজ।কেউ করছে পীর-মুরিদি নয়ত কেউ করছে বাহাস।আর সমাজও তাদেরকে কায়দা করে কুয়ার ব্যাঙ বানিয়ে রেখেছে।এটাও সত্য যে "যোগ্যতা প্রমাণ করে দেখাতে হয়"।কিন্তু যারাই ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পেরেছে তারাই হয়েছে নির্বাসিত।আমি নিজেও বুঝি না যে,"শেষ সময়ে একা একা ঘরে বসে থাকার" সেই কালো অধ্যায় শুরু হয়ে গেছে কিনা ?
আর একটি অনুরোধ ,দয়াকরে আপনার দূরদৃষ্টিকে সংকুচিত করবেন না। পারলে স্বাভাবিক ভাবে ভাবুন,না পারলে নিজ কাঁধে অতিরিক্ত বোঝা নেয়াটা বোকামি।