ঘটনা-৭:
অবস্থানঃবরিশাল,বাবুর হাট
লোকটার নাম ছিল কানা মামা।আমার মা এবং আমার খালারা তাকে কানা মামা বলেই ডাকত।লোকটা আজন্ম অন্ধ।আমি জানতাম,অন্ধদের একটা ভালো গুন আছে।তারা যে রাস্তা দিয়ে বারবার যাতায়াত করে সে রাস্তায় দিনের যে সময়েই তাকে রেখে আসা হোক না কেন তারা ঠিকই রাস্তা চিনে আসবে।কিন্তু কানামামার ক্ষেত্রে তা ছিল ব্যতিক্রম।তিনি নিজে থেকেই কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অন্য গ্রামে চলে যেতেন,আবার নিজে নিজেই গভীর বেলা বাড়ি ফিরতেন এবং দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর ঝারতেন আর "যাহ,যাহ"বলে ধমকি দিতেন।
আসলে তিনি ছিলেন একজন ওঝা গোছের লোক।লোকেমুখে জানা যায় তিনি কালোজাদু জানতেন,তার সাথে কিছু জ্বীন আর পেত্নি সর্বদা চলাফেরা করে।তারাই তাকে রাতের বেলা পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে আবার চলে যায়।তার আরেকটি দক্ষতা ছিল তিনি মানুষের স্বর শুনেই বলে দিতে পারতেন লোকটা কে।আমার মা প্রায় ১৬ বছর পর গ্রামে গিয়ে একদিন তাকে দেখে বললেন,"কানা মামা,কেমন আছেন?" তখন কানা মামা সাথে সাথেই উত্তর দেয়,"কিরে রেনু,এত বছর পর এলি।"
কথিত আছে,আজ থেকে প্রায় ২০-২২ বছর আগে এলাকাতে একটা পুরানো পোড়া বাড়ি ছিল,যেখান থেকে নাকি প্রতিদিন রাতের বেলা অদ্ভুত সব আওয়াজ আসত,কোনদিন হয়ত বাচ্চার কান্নার আওয়াজ,আবার নুপুর পায়ে কারো হাটার আওয়াজ,গোঙ্গানির মত আওয়াজ পাওয়া যেত।এমনকি ওই বাড়ির বারান্দায় প্রায়শি নাকি শাদা কাপড় পরিহিত একটা ছায়া দেখা যেত।তখন কানা মামা কেবল মাত্র কালোজাদুর চর্চা শুরু করেছেন।তিনি সবাইকে বললেন যে তিনি একা রাতের বেলা সেই বাড়িতে যাবেন এবং ওইখানে যদি অশরীরী কিছু থাকে তাহলে তিনি তাদের বন্দি করে আনবেন।কথামত তাই হল,তিনি একা রাতের বেলা গেলেন কিন্তু সেদিন তিনি আর ফিরে আসেননি।তার দেহ অচেতন অবস্থায় দুইদিন পর পুকুর পাড়ে পাওয়া যায়,তবে তারপর থেকে ওই বাড়ি থেকে আত কোন আওয়াজ আসেনি।
তার যারা ক্ষতি করে তাদের উপর তিনি জ্বীন দ্বারা প্রতিশোধ নিতেন।এমনকি জ্বীনরা তার অনুপস্থিতিতে ক্ষতি করত।তার মৃত্যূর পর এমনি একটা ঘটনা ঘটে।
এক সদ্য বিবাহিত মেয়ে রাতের বেলা হাতমুখ ধুতে কল পাড়ে যায়।কিছুক্ষন পরে তার আর্তচিতকারে তার স্বাশুড়ি মা বাইরে বেরিয়ে আসে।তিনি গিয়ে দেখেন তার বউমাকে কে যেন হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং কিছুক্ষন পরে পুকুরে ফেলে দেয় আর পানিতে চুবাতে থাকে।সে ঠিকমত চিতকার করতে পারছিল না কারন তার গলার সোনার চেইন কে যেন গলায় চেপে ধরেছিল।তখন তার শ্বাশুরি মা লোকজন জড়ো করে মেয়েটাকে পানি থেকে উঠায়।পরে তার ভাষ্যে জানা গেল,সে একটা পিদিম হাতে নিয়ে কলপারে যায়।চারপাশে কোন বাতাস না থাকা সত্তেও হঠাত পিদিমটা নিভে যায় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে পাজকোলা করে কে যেন হাওয়ায় ভাসিয়ে পানিতে নিয়ে ফেলে পানিতে ডুবানোর চেষ্টা করে।ধারনা করে সবাই যে,তার শ্বশুর জমিজমা সঙ্ক্রান্ত ব্যাপারে কানা মামার ক্ষতি করেছিল তাই তার মৃত্যূর পর এভাবেই প্রতিশোধ নেওয়া হয়।
ঘটনা-৮:
অবস্থানঃবিদেশ(সঠিক জায়গার নাম জানা নেই)
এটা এক বন্ধুর মুখে শোনা।একবার এক লোক ব্যবসার কাজে বিদেশে যায়।তিনি একটি ফাইভস্টার হোটেলে ওঠেন।সেখানে তখন মাত্র দুটি রুম খালি ছিল একটি দক্ষিন্মুখী আরেকটি ঠিক তার পাশে।তিনি ম্যানেজারের কাছে দক্ষিনমুখী রুমটা চান।কিন্তু ম্যানেজার তাকে রুমটা দেয়না,পাশের রুমটা দেয়।কারন জানতে চাইলে ম্যানেজার বলে ওই রুমে নাকি কিছু কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে।ওই লোক নিজের রুমে চলে যায়।
রাতের বেলা ২-৩ টার দিকে তিনি ধ্রিম ধ্রিম আওয়াজ পান,কেউ যেন পাশের দেয়ালে আঘাত করছে,সেই সাথে মৃদু কান্নার আওয়াজ আসছে।তিনি ব্যাপারটাতে তেমন পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।পরেরদিন ঠিক একই সমস্যা।এবার অনেক জোড়ে জোড়ে কান্নার আওয়াজ আসছে।সেই সাথে কেমন জানি ধস্তাধস্তির আওয়াজ,পানি পড়ার শব্দ।তিনি জানেন ওই রুমে কেউ থাকে না তারপরেও তিনি উঠে গিয়ে ওই রুমে নক করেন আর সাথে সাথেই আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।তিনি চলে আসতে যাবেন তখন আবার আওয়াজ।এবার তিনি দরজার চাবির ফুটোয় চোখ দেন কিন্তু ভিতরে কিছুই দেখতে পাননা,শুধু অন্ধকার।সেদিনের মত তিনি রুমে চলে যান
পরের দিন এবার আগে ভাগেই তিনি ওই রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন যাতে আওয়াজ হলেই চোখ রেখে দেখতে পারেন,কিন্তু সেদিন আর আওয়াজ হয়নি।তারপরেও তিনি কৌতুহলবশত চাবির রিং এর ফুটোয় চোখ রাখেন।দেখেন পুরো রুম লাল হয়ে আছে।এটা দেখে এবার তিনি ভয় পেয়ে যান।।
পরের দিন তিনি হোটেলে ঝারু দেয় এমন একজনের সাথে কথা বলেন।তার ভাষ্যটা ছিল এমন,"ওই রুমে অনেক বছর আগে একটা মেয়েকে রেপ করে তাকে খুন করে লাশ ফেলে যাওয়া হয়।এরপর থেকে সেখানে নানা রকম আওয়াজ আসতে থাকে।হোটেলের সুনাম খারাপ হবে বলে আপনাকে বলা হয়নি।"
লোকটি তার রুমে ফিরে আসবে এমন সময় ঝারুদার তাকে ডেকে বলে,"জানেন স্যার মেয়েটার একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ছিল।মেয়েটার চোখের রঙ ছিল লাল"
ঘটনা-৯:
অবস্থানঃবরিশাল
এই ঘটনাটা আমার মায়ের কাছ থেকে শোনা।তিনি যখন ছোট ছিলেন ওই সময়টাতে গ্রামাঞ্চলের দিকে মানুষের প্রধান পেশা ছিল পুরোপুরি ভাবে কৃষি।এখন যেমন ব্যবসার প্রচলন ব্যাপকভাবে ঘটেছে তখন তেমন ছিল না।সে সময় রাতের বেলা প্রায়শি ক্ষেত থেকে ধান চুরি হয়ে যাবার ঘটনা শোনা যেত।এ কারনে গ্রামের লোকজন মিলে ঠিক করে যে তারা কাউকে পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ দিবে এবং মাস শেষে সবাই মিলে কিছু টাকা দিয়ে তার বেতন পরিশোধ করবে।যেই কথা সেই কাজ।তাকে নিয়োগ দেওয়া হল।পাহারাদার ছিল যুবক একজন লোক কিন্তু গরীব যে কারনে রাতের বেলা কাজটি করতে সে রাজি হয়।সে যখন পাহারায় আসত তখন দৌড়ে দৌড়ে পুরো ক্ষেত একবার চক্কর দিত আর "কে রে ওখানে" বলে চিতকার দিতে দেখার জন্য কোন নড়চড় চারপাশে দেখা যায় কিনা।
প্রথম একমাস তেমন কোন সমস্যা হয় না।কোন চুরির খবর পাওয়া যায় না।কিন্তু একদিন ভোরবেলা এক কৃষক ক্ষেতের পাশে একটা ডোবায় তার লাশ খুজে পায়,তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছিল আর হাত-পা বাধা।ক্ষেতের ক্ষানিকটা অংশ রক্তে ভরে ছিল।লোকেরা ভাবে হয়ত চোরেরা এই কাজ করেছে।
এই ঘটনার পরও চুরির ঘটনা তেমন পাওয়া যায় নি,হয় না বললেই চলে।কিন্তু নতুন একটা ঘটনার আবির্ভাব হয়।প্রায় রাতে যারা হাট থেকে বাড়ি ফিরে তারা নাকি দেখেছে প্রতি রাতে কে জানি লন্ঠন হাতে ক্ষেতের পাশ দিয়ে দৌড়ায় আর ঘ্রঘ্র আওয়াজ করে।এবং প্রতিদিন সকালে ক্ষেতের ঐ নির্দিষ্ট জায়গায় যেখানে ওই পাহারাদারের লাশ আর রক্ত পাওয়া গিয়েছে সেখানে তাজা রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়।প্রতিদিনেই একই ঘটনা ঘটে।তাই কিছু লোক মিলে ঠিক করে এবার তারা রাতের বেলায় ক্ষেতের মাঝে লুকিয়ে দেখবে ঘটনা কি।এক রাতে তারা তাই করে।রাত ঠিক তিনটার দিকে ঘটে ঘটনাটা।
দূর থেকে তারা দেখতে পায় লাঠি ও লন্ঠন হাতে সাদা পোশাকের কে জানি এদিকে দৌরে আসছে আর দূর থেকেও ঘ্রঘ্র আওয়াজটা পাওয়া যাছে।কিছুটা কাছে আসতেই তারা ভয়ে শিউরে ওঠে।এটা ওই পাহারাদার যে মারা গেছে,ঘাড়ে মাথা নেই তাই ওইখান থেকেই আওয়াজ টা আসছে।তারা যেখানে লুকিয়ে ছিল সেখানে এসেই আত্মাটা দাঁড়িয়ে পড়ে,তাদের দিকে কাধ ফিরে তাকায় যেন তাদেরকেই দেখছে এবং আরও একবার ঘ্রঘ্র আওয়াজ করে দৌড়ে চলে যায়।এই ঘটনা দেখে তারা সবাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এই ঘটনা বেশ অনেকদিন ধরে চলে,এখনও মাঝে মাঝে নাকি দূর থেকে সাদা পোশাকের কাউকে দৌড়াতে দেখা যায়
সংযুক্তিঃ
১/চারটি সত্য ভৌতিক ঘটনা (পর্ব-১)- Click This Link
২/দুটি সত্য ভৌতিক ঘটনা (পর্ব-২)- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৯