somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসম্ভব বলে কিছু নেই

০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপরাহ উইনফ্রে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী, ধনী ও কৃষ্ণাঙ্গ উপস্থাপক। তাঁর বিশ্বখ্যাতি স্বপরিচালিত দি অপরাহ উইনফ্রে শোর জন্য। ১৯৮৬ সালে শুরু হওয়া এই শো শেষ হয় ২০১১-তে। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপিতে ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। ১৯৯৭ সালে ওয়েলেসলি কলেজের সমাবর্তনে তিনি এই বক্তব্য দেন।

তোমাদের সবাইকে আমার অভিবাদন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। আজ এখানে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। একসময় আমিও এই কলেজে পড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার কোনো স্কলারশিপ ছিল না বলে তা হয়ে ওঠেনি। আমি তোমাদের নিয়ে সত্যিই গর্বিত।
আজ আমি তোমাদের কাছে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরব, যা আমাকে জীবন সাজাতে শিখিয়েছে। প্রথমত, জীবন একটা ভ্রমণ। ওয়েলেসলির একটি দিক আমার খুবই ভালো লাগে। এখানে মেয়েদের তাদের জীবনের সবটুকু সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করতে দেওয়া হয়; নিজেদের সত্তাকে চিনতে উৎসাহিত করা হয়। আমার এ ব্যাপার বুঝতে বেশ দেরি হয়েছিল যে প্রতিদিনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতাগুলো দিয়েই নিজেকে আবিষ্কার করে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া যায়। আমি বহুদিন ধরে নিজেকে চিনতে পারিনি। নিজে যা নই, তা-ই হতে চেয়েছি। আমার বয়স যখন ১০, টিভিতে ডায়ানা রসকে দেখে আমি ঠিক তাঁর মতো হতে চাইতাম। অনেক দিন পর বুঝলাম, আমি যতই ডায়েট করি, আমার দৈহিক গড়ন ডায়ানার মতো হবে না। টেলিভিশনে কাজ শুরুর প্রথম দিকে আমার বার্তা পরিচালক আমাকে এমন কিছু একটা বানাতে চেয়েছিলেন, যা আমি নই। তাঁর মতে, আমার চুল ছিল অতিরিক্ত ঘন। তাই আমি নিউইয়র্কের এক বিউটি পারলারে গিয়ে হাজির হলাম। তারা আমার চুলে যে কসমেটিকস ব্যবহার করল, তাতে আমার মাথার তালু পর্যন্ত জ্বলে যাচ্ছিল। কিন্তু তখনকার আমি আজকের অপরাহ ছিলাম না। আমি মুখ ফুটে বলতে পারিনি যে আমার চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। পরের এক সপ্তাহের মধ্যে আমার মাথার প্রায় সব চুল পড়ে গেল। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যার মাথায় চুল বলতে কিছুই নেই, সেই অবস্থায় আমি টেলিভিশনে উপস্থাপক হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তখন আমি নিজেকে চিনতে পারি, বুঝতে পারি আমি ডায়ানা রস কিংবা বারবারা ওয়াল্টারস নই, যাঁদের মতো আমি হতে চেয়েছিলাম।
এভাবে ভুল করতে করতেই অনেক কিছু শিখেছি আমি। অনেক ভুল করার পর বুঝেছি, নিজেকে ‘বারবারা’ বানানোর চেয়ে দারুণ একজন ‘অপরাহ’ বানানোই অধিকতর যুক্তিসংগত। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, বারবারাকে দেখে আমি শিখব, কিন্তু আমি ‘অপরাহ’কে ছাপিয়ে বারবারা হতে চাইব না। আজ আমার এই সাফল্যের মূলে রয়েছে নিজেকে চিনতে পারা, নিজের মতো থাকা। নিজের গভীরে লুকিয়ে থাকা সত্যকে আবিষ্কার করা এবং সেই সত্যের কাছে দায়বদ্ধ থাকা।
আমার বন্ধু মায়ার কাছ থেকে আমি আরেকটি চমৎকার জিনিস শিখেছি। এটা তোমরা আয়ত্ত করতে পারলে জীবনের অনেক মূল্যবান সময় বাঁচাতে পারবে, অনেক ভুল সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। যখন কারও প্রকৃত চেহারা তোমার সামনে উন্মোচিত হবে, সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করো। প্রথমবারেই বুঝে নাও, সতর্ক হও; ২৯ বার দেখার বা সহ্য করার পর নয়। বিশেষ করে সম্পর্কের বেলায় এটা খুবই সত্য। যখন কেউ প্রথমবার তোমাকে আঘাত করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে, জেনে রাখো, একই কাজ সে আবার করতে পারে। হয়তো বারবার করবে। তোমার জীবন বিষিয়ে তুলবে। তাই প্রথমবারেই সাবধান হও। সত্যকে অবলম্বন করে বাঁচো। বাকি সবকিছুই তুমি সামলে নিতে পারবে। সব বাধাই কাটিয়ে উঠতে পারবে। দেরিতে হলেও আমি এটা আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম যে একমাত্র সত্যই আমাকে মুক্তি দিতে পারে।
শোককে শক্তিতে পরিণত করো। জীবনে অনেক আঘাত পাবে, অনেক ভুল করবে। এসব দেখে অনেকে তোমাকে বলবে, তুমি ব্যর্থ। কিন্তু বিশ্বাস করো, যা তুমি ব্যর্থতা বলে মনে করছ, তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আসলে তোমাকে বলছেন, ‘তুমি ভুল পথে চলছ।’ নিজেকে ব্যর্থ ভেবে হতাশ হয়ো না। এটা একটা অভিজ্ঞতা মাত্র। একে কাজে লাগাও।
একসময় বাল্টিমোরে আমাকে টেলিভিশনে সাংবাদিকতা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাকে বলা হয়েছিল, আমি এ কাজের যোগ্য নই। কারণ, আমি নেতিবাচক খবর উপস্থাপন করতে করতে কেঁদে ফেলতাম। ধরো, কোথাও আগুন লেগেছে আর সাংবাদিক নিজেই তা বলতে বলতে গৃহহারা মানুষের জন্য কেঁদে ফেলছে। ব্যাপারটা মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। কিন্তু যত দিন পর্যন্ত না আমার পদাবনতি হলো আর আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ‘টক শো’ করার জন্য, তত দিন পর্যন্ত আমি বুঝতে পারিনি, আমার ভেতরে কী সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। সেই ১৯৭৮ সালে যেদিন আমি প্রথম টক শো উপস্থাপনা করি, এক অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ভরে গিয়েছিল। যেন নিজের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি নিজের ভুলেই সাংবাদিকতা থেকে বাদ পড়েছিলাম, যেটাকে আমার ক্যারিয়ারের এক বিরাট ব্যর্থতা মনে হতে পারে, কিন্তু আমি সেই ভুল থেকেই টক শোর জগতে প্রবেশ করি। আর এই ক্যারিয়ার আমাকে নিঃসন্দেহে ব্যর্থতা দেয়নি!
নিজের ভেতরে কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত করো।
আমার বয়স যখন ১৫, তখন থেকে আমি ডায়েরি লেখা শুরু করি। ১৫-১৬ বছরের লেখাগুলো সব প্রেমঘটিত জটিলতায় ভরা! কিন্তু যত বড় হয়েছি, তত আমি বর্তমানকে গ্রহণ করতে, ভালোবাসতে শিখেছি। আমি বলব, তোমরাও প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকাকে উপভোগ করো। যেসব জিনিসের জন্য তুমি জীবনের কাছে কৃতজ্ঞ, তা একটা ডায়েরিতে লেখো। আজ সারা দিনে ঘটে যাওয়া যেসব ঘটনার জন্য তুমি কৃতজ্ঞ, এমন পাঁচটি ব্যাপার লিখে রাখার অভ্যাস করো। এতে সারা দিন নিয়ে, এমনকি জীবন নিয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে। তোমার যা আছে, তার প্রতি তুমি যখন মনোযোগ দিতে শিখবে, তখন দেখবে পৃথিবীতে কোনো কিছুর কমতি নেই। আর যদি কী নেই, কী পেলাম না—সে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত থাকো, তা হলে কোনো কিছুই আর তোমাকে সুখী করতে পারবে না।
জীবনে স্বপ্ন দেখার কোনো সীমা নেই। তোমার লক্ষ্যকে ও স্বপ্নকে আকাশ ছাড়িয়ে যেতে দাও। কারণ, তুমি যা বিশ্বাস করবে, তুমি তা-ই হবে। আমি যখন মিসিসিপির এক অতি সাধারণ ছোট্ট মেয়ে, আমি দেখতাম, আমার দাদি বড় এক ডেকচিতে কাপড় সেদ্ধ করে পরিষ্কার করছেন। আমাদের কোনো ওয়াশিং মেশিন ছিল না। জানি না, কেন তখন দাদিকে দেখতে দেখতে আমার মনে হতো—যদিও আমি খুব সাধারণ এক কালো মেয়ে, তাও আমি চোখের সামনে যা দেখছি—সেটাই আমার জীবনের পরিণতি হবে না। আমি বড় হব, অনেক বড় কিছু হব। চার-পাঁচ বছরের আমি সেই গভীর অনুভূতিকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারতাম না। কিন্তু আমি সমস্ত মন দিয়ে তা অনুভব করতাম এবং সেই উপলব্ধিকে বিশ্বাস করে পথ চলতাম।
আমি যেখানে জন্মে, যেভাবে বড় হয়ে আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, যত দূর আসতে পেরেছি, এ থেকেই বোঝা যায় অসম্ভব বলতে কিছুই নেই। আমার মধ্যে অসাধারণ কিছুই ছিল না; তবু আমি পেরেছি।
স্বপ্ন দেখো। নিজের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে পিছিয়ে যেয়ো না। নিজের চেয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে হবে তোমাদের। জীবনের লক্ষ্যকে যত দূর সম্ভব সামনে নিয়ে যাও। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, স্বপ্ন সফল হবেই। ধন্যবাদ।
সূত্র: ইন্টারনেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত
অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার
সুত্রঃ প্রথম আলো
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×