somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অতীতের মিতালী

০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-রিতুকে এভাবে ফিরে পাবো,কখনো ভাবেনি!
শায়ন্ত উত্তর দেয়না।অস্তগামী সূর্যের দিকে তাকিয়ে পাশা-পাশি তারা দু'জন।গাঢ় অন্ধকার নেশায় বুঁদ হয়ে, পিছনে ফেলে আসা একটি অতীতের সাথে মিতালী করতে এই নির্জন বেলাভূমিতে আসা।
-বুঝলি সাকিল,আরেকটি দিন অতীত হতে চলছে।
শায়ন্তর ভাব গাম্ভীর্য্য কথার উত্তর দিতে গিয়ে সাকিল থেমে যায়।
কূয়াশা মোড়ানো দূপুরে চাদর জড়ানো রিতুর সাথে শেষ দেখা হয়েছিলো।থালার মতো সূর্যটা স্বাক্ষী! মাঝখানে এক বছর।
সাকিলের ঢিল পুকুরের পানিতে রিতুর ঝলসানো প্রতিচ্ছবিকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়।রিতু থেমে যায়,নব বধূর চৌকাঠ পেরোনের মতো পা এগিয়ে দিয়ে বললো- সম্ভব না।
মঙ্গলযাত্রা,যেমন খুশি তেমন সাজ আর পান্তা ভাতের পর্ব সেরে- মেলাতে যখন এলোরে পহেলা বৈশাখ বেঁজে উঠলো,ঠিক তখনই ভীরের মধ্যে লাল টিপের দর্শন।অনুসরন,তারপর লাল চুড়িতে হাত বোলানো।লোক-লজ্বার ভয়ে হাত ধরা হয়নি।নাগর দোলা আর চরকিতে চড়া,যা শুধু আক্ষেপরই বিষয়।সূর্যের ডুবু ডুবু ভাব।রাত চোরার দল উড়ে যায়।শুষ্ক বালুর উপর এক ফোটা মদ ফেলতেই জেগে উঠে জমাট বাঁধে।সাকিল উচ্চস্বরে হাসে,তার হাসি প্রতিধ্বনিত হয়।শায়ন্ত তাগাদা দেয়- বেশি দেরি ঠিক হবে না।সাকিল মদহীন বোতল সূর্যের দিকে ছুঁড়ে মারে,শুষ্ক বালুর উপর শব্দহীন ভাবে আছড়ে পরে।
ভালবাসার দ্বিতীয় দর্শন মেলার কিছুদিন পরে।সবে মাত্র ওড়্না নিতে শুরু করা রিতুর মাংসল বুক ঘোষনা দিচ্ছিলো।কামড়ে,ছিঁড়ে নিতে চাওয়া সাকিলের মন বুক থেকে চোখ ফিরিয়ে মূখের উপর নিবিষ্ট করে।মূখে সলজ্ব হাসির আভাস ফুটিয়ে রিতু বলে-কেমন আছেন? সাকিল কি উত্তর দেবে ভাবার আগেই দ্বিতীয় প্রশ্ন- ভালো আছেন তো? সাকিল প্যান্টের পকেটে হাত চালিয়ে নিজেকে সংযত করে।আশে-পাশে তাকায়।যে যার মতো ব্যস্ত- রিকসা,বাস,মানুষজন।বই দোকানদার সায়ফুল শলাকা দিয়ে কান চুললায়।তারা অনেক্ষন নীরবে বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। রিতুদের বাড়ির সামনের আমগাছটায় ঝোলানো দোলনায় রিতু রোজ বিকেলে দোল খেতো।বাতাসে উড়ে চলা গাঢ় কালো চুল গুলোর সাথে সাকিলের মনও দোল খেতো।দূরে ঝাউ গাছের আড়াল থেকে সাকিল সব দেখতো- চুল,হাসি,ওড়্না,বুক,কোমর,পায়ের আকুতি আর হাতের ইশারা।তখন,পৃথিবী অন্যসব কিছু সাকিলের নিকট অস্পষ্ট।খেয়ালহীন ভাবে অন্ধকার নেমে আসতো।
শায়ন্ত খুব জোরে হাত চালায়,বেলচা দিয়ে গর্ত করা বেশ কষ্টের।কোমর পর্যন্ত গর্ত হতে মিনিট বিশেক সময় লাগবে।যত তাড়া-তাড়ি বস্তা লুকিয়ে ফেলা যায়।
সাকিল ভার্সিটি ভর্তি হবার পর রাজনীতি,বড় ভাই,নেতৃত্ব,নাস্তিকতার চর্চা ইত্যাদি নানান রকম ঘটনার মধ্য দিয়ে ভার্সিটি জীবন অতিবাহিত করতে থাকে।অপর থেকে রিতু তখন সবেমাত্র ধর্মভীরুতার লাগামচিহ্ন বোরখা পরতে শুরু করেছে।সম্ভবনার শেষ আশাটুকু নিয়ে সাকিল যখন রিতুর সামনে দাঁড়ালো।রিতু তখন ধর্মের দোহাই দিয়ে ছেলে মানুষি উত্তর দেয়- সম্ভব না।সাকিল পুকুরের পানিতে ঢিল ছুঁড়ে রিতুর প্রতিচ্ছবিকে এলোমেলো করে দেয়।রিতু তখন পা এগিয়ে দিয়ে নতুন পথে যাত্রা শুরু করে।তাদের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে ধর্মভীরু আর ধর্ম বিমূখতার জন্য।অথচ,তাদের সম্পর্কের সূত্রপাত-গোলাপ,বৈশাখী মেলা আর প্রথম দেখার মধুর স্মৃতি থেকে।
গর্ত খোঁড়া শেষ,সাকিল শেষ বারের জন্য বস্তা খুলতে উদ্যত হয়।শায়ন্ত বাঁধা দিয়ে বলে- খুলিস না,অনেক পাগলামী হয়েছে।এই শায়ন্তই সাকিলের কোন কাজে কখনো, বাঁধা দিতো না,সেটা ভালো বা খারাপই হোক।ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর প্রথম বন্ধুই শায়ন্ত।সূখে দূখে হলের একই রূমে ভার্সিটির দিন গুলো পার করেছে।চোখে কালো ফ্রেমের চশমা সাটিয়ে শায়ন্ত সারাদিন বইয়ের মধ্য গুঁজে থাকতো।ব্যক্তিগত সহকারীর মতো এখনো, সাকিলের সাথে থেকে ভালো কে ভালো,মন্দকে মন্দর মতো দেখে, কোন মন্তব্য করে না।অথচ,শায়ন্তই বস্তা খুলতে বারন করছে,কাজ শেষ করার তাগাদা দিচ্ছে।
গর্তে বস্তা ঢুকিয়ে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করার পর তারা দ্রুত বেলাভূমির উপর পদ চিহ্ন এঁকে অন্ধকার ফুঁড়ে যেতে থাকে।প্রতিটা মুহূর্ত অতীত হয়ে যাচ্ছে।ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ফাঁসের জটিলতা নিয়ে দুটো রাজনৈতিক দলের কোন্দলের কারণে- মারা-মারি,গোলাগুলি আর ধাওয়া- পালাটা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পরীক্ষা দিতে আসা অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হয়।রিতুর বুকে গুলি লাগে।পরিসংখ্যান বিভাগের সামনে পরে থাকা মৃত রিতুকে চিনতে দেরি হয় না সাকিলের।প্রিয় মানুষটিকে পোস্ট মোডামের কাঁটা ছেঁড়া থেকে বাঁচাতে বস্তা বন্দী করে এই নির্জন বেলাভূমিতে নিয়ে আসা।সাকিল পিছন ফিরে তাকায়,বিদঘুঁটে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারে না।অথচ,গর্তে বস্তা বন্দী তারই ফেলে আসা অতীত।







মেহরাব হাসান জাহিদ
গোবিন্দগন্ঞ্জ ০৫।১১।১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×