somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেগম জিয়ার ভারত সফর কেবল তখনই সফল বা কার্যকর হবে যখন তিনি জামায়াতে ইসলামী এবং আমিনীর সঙ্গ পুরোপুরি ছাড়তে পারবেন

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সাফল্য বা ব্যর্থতা এখন দেশের রাজনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সফরটিকে চূড়ান্তরূপে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। গতকাল বিএনপি নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ এমনটাও বলেছেন যে, বেগম জিয়ার এ সফরের কারণে সরকারের একতরফা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে। অপরদিকে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রথমদিকে সফরটিকে গুরুত্বহীন বললেও সফরের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এটিকে গুরুত্বে নিয়েছেন। তিনি এমনটাও বলেছেন যে, সফরকালে বেগম জিয়া ভারতকে যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। ভারতকে খুশি করার প্রক্রিয়ায় আমাদের রাজনীতিবিদরা এটাও ভুলে গেছেন আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার আনুযায়ী ভারত আমাদের কোন্ কোন্ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে আর কোন্ কোন্ বিষয়ে পারে না।

ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ বা বিএনপি নেতৃবৃন্দ যতই আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন না কেন এ সফরের কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে রাজনীতির একজন শিক্ষানবিশ ব্যক্তিও এটা অনুধাবন করতে পারেন যে বিষয়টা এতো সহজ নয়। আওয়ামী লীগের গত চার বছরের শাসনামলে এমন কোন ঘটনা ঘটে যায়নি যে ভারত বা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস আওয়ামী লীগের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। বরঞ্চ আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এ কারণে যে, গত চার বছরে আওয়ামী লীগ এ দেশের ভূমিকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে দেয়নি। বেশ কয়েকজন শীর্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এ সময়ে ধরা পড়েছেন। উপরন্তু ধর্মীয় উগ্রবাদকেও আওয়ামী লীগ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে।

ভারত কেবল তখনই বিএনপির প্রতি বিশ্বস্ত হতে পারে যখন সে এ নিশ্চয়তা পাবে যে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন প্রকার প্রশ্রয় দেয়া হবে না। বেগম জিয়া বা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও এটা ভাল বুঝেন। সে কারণেই বেগম জিয়া ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে এমনটা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে তিনি ক্ষমতায় গেলে এদেশের ভূমিকে ভারতের স্বার্থবিরোধী কোন কাজে ব্যবহৃত হতে দিবেন না। কিন্তু এ বিষয়টিতে ভারতকে পূর্ণরূপে আশ্বস্ত করা তার জন্য সহজ কোন কাজ নয়। কারণ মুখের প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে তার ইচ্ছার যথার্থতা দেখাতে হবে।

সত্যিকার অর্থেই বেগম জিয়ার জন্য কাজটি কঠিন। কারণ বেগম জিয়ার চারদলীয় জোটের অন্যতম অংশীদার হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোট নামের দুটো উগ্রপন্থী ইসলামী মৌলবাদী দল। ধর্মীয় উগ্রবাদের সৃজনগৃহ হচ্ছে এই জামায়াতে ইসলামী। দেশের ধৃত শীর্ষ ধর্মীয় চরমপন্থীদের প্রায় সকলেই কোন না কোন সময়ে জামায়াত বা তার ছাত্র সংগঠন শিবিরের সাথে যুক্ত থেকেছেন। অপরদিকে প্রধানত কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষিত মোল্লাদের নেতৃত্বাধীন মুফতী ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটও ধর্মীয় উগ্রতা বা ভারত বিরোধীতা লালনে খুব একটা পিছিয়ে নেই। প্রায় একই ধরণের মতাদর্শের কারণে দেশের এসব উগ্রপন্থী ইসলামী দলগুলোর সাথে ভারতের ইসলামী মৌলবাদী চক্র এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। কাজেই এমন সব দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা রেখে আপনি প্রতিশ্রুতি দিবেন যে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবেনা আর ভারত তাতে আশ্বস্ত থাকবে তেমনটা চিন্তা করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
শুধু ভারতের স্বার্থে নয়, আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই বিএনপির এসব মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিত্যাগ করতে হবে। একটা সময়ে ভারত ও আফগানিস্তানে গোলযোগ সৃষ্টি এবং নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য পাকিস্তান তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়েবা, জয়েশ-ই-মুহম্মদের মতো উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর সৃষ্টি এবং লালন করেছিল। আজ সেই সংগঠনগুলোই পাকিস্তানকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও যদি চারদলীয় জোট ২০০৮ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসত তাহলে জামায়াতে ইসলামী জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ এর মতো সংগঠনগুলোর ছদ্মাবরণে এ দেশকে পাকিস্তানের পর্যায়ে নিয়ে যেত। কাজেই এখানে ভারতের স্বার্থের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের স্বার্থেও বিএনপির জামায়াত সঙ্গত্যাগ অতি আকাংখিত।

এখন এখানে যেটা বিবেচনায় আসতে পারে তাহলো ভোটের রাজনীতি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে কখনই মনে হয় না ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত বা জোট খুব একটা ফ্যাক্টর। ১৯৯১ সালে জামায়াতকে ছাড়াই বিএনপি জিতেছে। আওয়ামী লীগ ৮ দলীয় জোটের ব্যানারে নির্বাচন করে হেরেছে। তেমনি ২০০৮ সাথে জামায়াতের সাথে জোট থাকা সত্ত্বেও বিএনপি হেরেছে। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফলগুলোতে কেবল প্রভাব বিস্তার ইমিডিয়েট আগের ক্ষমতাসীন দলগুলোর অপশাসন, কোন প্রকার জোট নয়। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করলেও একই ফলাফল হত। জোট রাজনীতির সুবিধাভোগী মূলত ছোট দলগুলোই। জোট রাজনীতির এই কালচার চালু না হলে জাতীয় পার্টি, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছে যেতো।

অবশ্য আমি যেভাবে ভাবছি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও তেমনটা ভাবছেন এমনটা আশা করার কোন উপলক্ষ্য নেই। তবে ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশের কারণে জামায়াত বা আমিনীকে ত্যাগ করা যদি বিএনপির পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে ভারতের সাথে বিএনপির সম্পর্কের পরিবর্তন অলীক কল্পনা মাত্র।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×