১। অর্বাচীন নভোযাত্রী
নক্ষত্রপুঞ্জের মাঝে
কে মনে রাখে
একটি নক্ষত্র দুটি নক্ষত্র তিনটি নক্ষত্র
আমার দুঃখ এক দুই তিন,
যারা বেনামী নভোযানে উঠে পড়ে
প্রতিদিন সহস্র আলোকবর্ষ পথ
পরিভ্রমণ শেষে
ফিরে আসে আমার কাছে।
কদাচিৎ আমাকে নিয়ে ভ্রমণ করে
মহাবিশ্বের ভাঁজে ভাঁজে
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ।
সৃষ্টির অপার বিস্ময় মানুষ
কত কিছুই না বানালে তুমি
ঝান্ডা হাতে পৃথিবীর ক্ষুধা দারিদ্রতা তাড়ালে
বোতাম টিপলেই
ঝলমলে পর্দা জ্যান্ত মানুষ,
মাউস চাপলেই
পৃথিবী মহাপৃথিবী
হাতের মুঠোয়।
অথচ
আমার মনের আকাশে
জমে থাকা মেঘপুঞ্জটাকে
সরিয়ে ভিনগ্রহে নিতে পারলে না
ঝকঝকে সুনীল সুখাকাশ
দেখার জানালা করে দিলেনা।
হায় আমার দুঃখ
অর্বাচীন নভোযাত্রী!
২। পৃথিবী জীর্ণ সন্তান
পৃথিবীর ঠোঁট ছুঁয়ে
হৃদয় নিঙরে
বজ্রমুষ্ঠিতে বাহু উচিয়ে
একটি সন্তান এসেছিল।
সন্তানের চোখে মুখে আদর মেখে
জলের ফোয়ারা টেনেছিল মা বসুধা,
কোমল সুশ্রী সন্তানের গায়ে পড়িয়েছিল
হলদে সবুজ চাদর
ষড়ব্যাঞ্জনে হাসি ফুটিয়েছিল
ষড় গাঁয়ের রাখাল।
পূর্ণিমা তিথি
জোছনা ফোয়ারা
নদীবুক
থইথই জল
রুপোলী মাছ
শীত জাদুকরের বাঁশী
তাল খেজুরে ভরা
গাছ রাশি রাশি।
বাঁশবাগান
লক্ষীপেঁচার ডাক
কার্তিকের নবান্ন
কৃষানীর গান
বাউলের একতারা
পাখির গানে মূখরিত হতো
সন্তানের স্বজীব উঠান।
কোথায় হারালো তার দিন
কোথায় হারালো তার যৌবন!
৩। ল্যাবিরিন্থ
আমি ফুল চিনিনা ফুলের গন্ধ চিনিনা, যে গন্ধ শুকে বলতে পারবো
দিনপঞ্জিকায় এখন কোন মাস চলছে। মৌমাছিরা এ বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী। তারা গন্ধ শুকে ইঙ্গিতে বলে দিতে পারে। তারা মাস শেষে কুটুরীতে সঞ্চয় করে মধু। মধু পাহারা দেয় সৈন্য সামন্ত। মৌচাকে রানীরা সব ভারিক্কি হালে চলে।
এখানে বলে নেয়া ভাল গোলাপ ফুলটা দুধের শিশুও চেনে। কেননা গোলাপের কোলেই তার প্রথম বিকাশ। এক লিচুচোর পোকার কবলে পরে মরফিন জগতে তার আগমন। এই মরফিনে আসক্ত হয়ে পড়ে একদিন মানব শিশুর বমির উদ্রেক হয়। তখন ফুল বিষয়ে সে বিশেষ নজর বোলায়। স্লিভলেস জামার তলে গোলাপ খোঁজে। অন্য ফুল নিয়ে তেমন আসক্তি দেখা যায় না। সস্তা ফুল সস্তা বাজারে সৌন্দর্য বিকোয়। আসল ফুল ভুলেও তার করতলে আসেনা। ইদানীং তাকে কাগুজে বা প্লাষ্টিক ফুলের দিকে নজর বোলাতে দেখা যাচ্ছে।
এতদিনে মৌমাছিরা উড়ে অন্য কোন বাগানে যেতে পারে। বাগানে সস্তা ফুলে মধু নেই এই বিষয়ে তারা বিশদ রক্তবমি করে। হাজতখানায় থেকে পাখা অবশ হয়ে গেছে তাদের। নতুন বাগানই শ্রেয়তর মনে করে তারা। এই আশায় ঢোল কলমির দিকে পা বাড়ায়। ওদিকে এক নব্য প্রেমিক বাসা বেঁধে আছে। মৌমাছিরা এখন নিরেট মূর্খের মত আচরণ করছে।
ছবিঃ নিজস্ব এ্যালবাম।