somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এস্কিমো
আমি সুশীল ব্লগার না..নিরপেক্ষও না।

ক্রশরোডে জামায়াতের রাজনীতি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(ছবির সূত্র - ডেইলি স্টার ০৫ নভেম্বর ২০১২)

জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা আআরো ঢাকা ব্যস্ততম মতিঝিলে সন্ত্রাস করলো - দেখানো চেষ্টা করলো তাদের শক্তিমত্তা। জামায়াত যে রাজনৈতিক দল না - একটা ক্যাডার ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন তা আবারো প্রমানিত হলো এই দিনেদুপুরে সন্ত্রাসের মাধ্যমে। একটা বিধিবদ্ধ আদালতের বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল করে গাড়ী ভেংগে আগুন দিয়ে আইনশৃংখল বাহিনীকে আক্রমন করে জনমনে সন্ত্রাসের জন্ম দিয়ে যদি কোন দলে নিজেদের গনতান্ত্রিক দল হিসাবে দাবী করে - তা নিতান্তই হাস্যকর আর প্রতারনা চেস্টা।

যাই হো, বৃটিশ উপরিবেশিক শাসকদের কোলে জন্ম নিয়ে পরবর্তীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লালিত এই গোষ্ঠিটি ধর্মের নামে রাজনীতি করার চেষ্টা করলেও - কোন দিনই রাজনৈতি দল হিসাবে গড়ে উঠার সুযোগ নেয়নি। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যখন বাংলাদেশের নিরষ্ত্র মানুষ হত্যা আ ধর্ষনের উৎসবে মেতে উঠেছিরো - তখন জামায়াত তার প্রভুর ঋণ শোধ করা লক্ষ্য আল বদর, রাজাকার, আল শামস নামের বাহিনী আর শান্তি কমিটি তৈরী করে দেশের মানুষকে শত্রুর হত্যা উৎসবে যোগ দিয়েছিলো্।

স্বাধীনতা পর সাংবিধানিক ভাবে জামায়াত নিষিদ্ধ হরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের বদন্যতায় জামায়াত আবার প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পায়। কিন্তু একক ভাবে নিজের পায়ের দাড়ানোর চেয়ে একদল ক্যাডার নিয়ে সবসময় কোন না কোন শক্তির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়ে পারগাছার মতো নিজকে টিকিয়ে রাখার বিষয়েই ব্যস্ত ছিলো। জিয়াউর রহমানের শাসনের ধারাবিহকতায় আরেক সামরনিক শাসক এরশাদও জামায়াতকে ছায়া দিয়েই রেখেছিলো - যদিও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জামায়াত নিজেকে আন্দোলনের শক্তি হিসাবে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মগবাজার পর্যন্ত মিছিল করতো - কিন্তু দীর্ঘ নয় মাসে একজন জামায়াত কর্মীও আন্দোলনে কারারুদ্ধ হয়নি বা আহত বা নিহত হয়নি।

পরে আবার এরা সামরিক শাসক জিয়ার দলের ছত্র ছায়ায় সংসদে ঢুকে পড়ে - একসময় তত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের সুবাদে আওয়ামীলিগের সাথেও ঘেষাঘেষি করে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানো চেষ্টা করে। অবশেষে জোট করে বিএনপির বদৌলতে মন্ত্রী সভায় আসনও পেয়ে যায় জামাতের নেতারা।

সেই থেকেই জামায়াতের মুলত আসল চেহারা বের হয়ে আসে। মুখে ইসলামের কথা বললেও ৫ বছরের সংসদের কোন আলোচনায় তাদের দলীয় এজেন্ডাকে সামনে আনেনি - এমনকি বিএনপির প্রবল দূনীতিকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সহায়তাই করেছে। মুলত বিএনপির আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রেখে নিজেদের অন্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় মত্ত ছিলো। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ১/১১ এর সরকারের সময়ও কোন এক বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জামায়াতের নেতারা সকল নির্যাতনের উদ্ধে উঠে গিয়েছিলো। যেখানে হাসিনা খালেদাকে কোন কোর্টের আদেশ ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছিলো - সেখানে নিজামীকে গ্রেফতারের কোর্টের আদেশ সদরঘাট থেকে শাহবাগ আসতে ৪ দিন সময় লেগেছিলো আর মুজাহিদের নামে ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও সে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠক করলেও পুলিশ তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছিলো। আসলে সেই সরকারের ভিতরেও জামায়াতের এজেন্ট সক্রিয় ছিলো।

অবশেষে নতুন প্রজন্মের বিপুল সমর্থনে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতকে আসলে পরীক্ষা পড়তে হয়েছে। এরা লক্ষ লক্ষ ক্যাডারে হুমকী দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র কে মেরে ম্যানহোলে ফেলে দেওয়ার পর সরকার হার্ড লাইনে গেলে জামায়াতে কার্যক্রম মুলত রাস্তায় চোরাগুপ্তা হামলা আর গাড়ীতে আগুন লাগানোর মধ্যেই সীমাবন্ধ হয়ে পড়ে। তারপরও খালেদা জিয়ার বিশেষ অনুগ্রহে জামায়াত বিএনপির সমাবেশগুলোতে পোষ্টার ব্যানার নিয়ে সমবেত হয়ে নিজেদের উপস্থিতি প্রমানের চেষ্টা করেছে।

কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ভারত সফরে পর জামায়াত সত্যিকার অর্থেই নার্ভাস হয়ে পড়েছে। আজ পত্রিকায় দেখলাম জামায়াত একক ভাবে আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছে। এই প্রথম জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজেদের পায়ে দাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। চারদশক ধরে সামরিক শাসকদের ছত্রছায়া আর মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলারের ব্যবহারের ফলাফল এখন আমরা দেখতে পাবো। বিএনপি ভারত সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছে যে ওয়াদা করে এসেছে - তার সাথে জামায়াতের সখ্যতা সামঞ্জস্যপূর্ন না - এই কথাটা জামায়াতের নেতা কর্মীরা ইতোমধ্যে ধরে ফেলেছে। তারই মরিয়া প্রতিফলন গতকাল মতিঝিলে দেখা গেলো। আশা করি জামায়াত এবার স্বমূর্তিতে বের হয়ে আসবে এবং জনগন জানতে পারবে এই সন্ত্রাসী গোশ্ঠী কতটা হিংস্র আর নির্মম হতে পারে। এতে লাভ হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাস আর গনতন্ত্র এক মঞ্চে থাকবে না এবং জনগনের জন্যে সুবিধা হবে সস্ত্রাসকে না বলা।

অবশ্যই জামায়াতের নেতারা যদি সুদুর প্রসরী ভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে সমর্থ হয় তবে হয়তো ক্যাডার ভিত্তিক সন্ত্রাসী দল থেকে একটা জনভিত্তিক ডান পন্ধী দল হিসাবে নিজেদের দাড় করিয়েও ফেলতে পারে। তার জন্যে সবচেয়ে প্রথম যে কাজটা করতে হবে - তা হলো মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভুমিকার জন্যে জনগনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং যুদ্ধাপরাধে সাথে জড়িত নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। অবশ্যই যুদ্ধাপরাধের বিচারকে নিঃশর্ত সমর্থন দতে হবে। তারপর সকল প্রকার ক্যাডার ভিত্তিক গোপন কর্মকান্ড বন্ধ করে প্রকাশ্য সভা করে জনগনকে দলের কর্মপদ্ধতি এবং নীতিমালার বিষয়ে অবগত করতে হবে। বলা দরকার যে - জামায়াতের রাজনৈতিক দল হিসাবে বৈধতা এখনও প্রশ্নের সন্মুখিন - নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ এক মাসের সময় দিয়েছে তাদের গঠনতন্ত্রকে বাংলাদেশে সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন করার - অবশ্যই জামায়াতকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব, ইতিহাস এবং সংবিধান মেনেই রাজনীতি করতে হবে। যদি জামায়াতের নতুন প্রজন্ম ঘোর থেকে বের হয়ে উপরের বর্নিত কাজ গুলো সম্পন্ন করতে পারে - তবে বিএনপির উপেক্ষা করা ভারত বিরোধী বিরাট সমর্থকগোষ্ঠীর অকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে একটা ডান পন্থী দল হিসাবে বাংলাদেশের জণ্যে একটা গুরুত্বপূর্ন দল হিসাবে আত্নপ্রকাশ করলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।

তার যদি তাদের মুল এজেন্ডা রাজাকার আলবদর আর শান্তি কমিটির কুখ্যাত নেতাদের রক্ষা হয়ে থাকে - তবে দ্রুতই জামায়াত একটা গোপন সন্ত্রাসী শক্তি হিসাবে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাবে।
১৫টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×