somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

**** জোছনায় ভেজা এক রাতে স্মৃতিপটে হারিয়ে যাওয়া ****

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মামা বলল, নদী এদিকে আয় তো......
আসছি মামা।
চল ছাদে চল। আকাশ দেখবো। বাইরের দিকে চেয়ে দেখ! কি সুন্দর জোছনার আলো চারদিক মাতিয়ে তুলেছে। ঘরের মধ্যে গরমে দম বন্ধ বন্ধ লাগছে। চারদিকে হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। ছাদ থেকে গ্রামের অংশটুকু দেখবো আর মন খুলে গল্প করবো।
ওকে মামা আসছি।
আমি আর মামা চলে এলাম ছাদে।
নদী তোর মনে আছে! তোকে নিয়ে কত গল্প করতাম এইখানে বসে।
হ্যাঁ মনে থাকবেনা কেন? তুমি বলতে দুকাপ চা নিয়ে আয় মামা ভাগ্নি চা খাবো আর চা খেতে খেতে অনেক গল্প-কবিতা বলবো। গ্রামের চাঁদনি রাত! নৌকা নিয়ে ধানের ক্ষেতের সারিতে সারিতে ঘুরে বেড়ানো। জানো মামা আমি এখনও মাঝে মাঝে অনুভব করি সেই সোনালী দিনগুলোর কথা। শহরের আনাচে কানাচে খুঁজে ফিরি। শুদু যানবাহনের শব্দে ঘেরা। গ্রামের ঘ্রান কোথাও পাইনা। হারিয়ে যাই সেকালে। এখন সবাই যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। হুম, তোমার গানের গলা কিন্তু অসাধারণ ছিল। একা একা বসলেই তুমি গান শুরু করে দিতে। তুমি মনে হয় আগের মতো গান গাইতে পারোনা তাই না?
মামা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন নারে মা এখন আর আগের মতো গান গাইতে পারিনা। গান গাইতে কষ্ট হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এই অসুখটা হওয়ার পর থেকে আর গান গাইনা ।
মামা আর আমি স্মৃতিপটে হারিয়ে যাই..........

হঠাৎ যেন কার ডাক কানে এলো। মামা মামা বলে উপরের দিকে আসছে। সিঁড়িতে পায়ের খুট খুট শব্দ হচ্ছে। কণ্ঠস্বরটা বড়ই পরিচিত লাগছে। বলতে বলতে মানুষটা যেন সামনেই চলে এলো।
আরে সাগর দা যে....!!
হুম নদী আমি।
কেমন আছো? কতদিন পর তোমার সাথে দেখা। তুমি তো আগের মতোই আছো। একটুখানিও বদলাওনি। নয়-দশ বছর হবে। তবুও তো কম দিন না।
তুমি এসেছো শুনে দেখতে এলাম। তোমার বিয়ের পর তো আর দেখা হয়নি। কতদিন পর তুমি বাড়ি এলে। তুমিও একটুও বদলাওনি। সেই আগের মতোন শান্ত, হাল্কা, পাতলা চেহারার অধিকারি এখনও। বাচ্চা একটা আছে সেটাও বুঝা যাচ্ছেনা।
হা হা হা তুমি কি মনে করেছিলে আমি বুড়ি হয়ে যাবো? তোমারও তো ছেলে মেয়ে আছে তুমি কি বুড়া হয়ে গেছ?
ওকে ওকে তোমার সাথে আমি কখনো কথায় পারিনি আজও পারবোনা।
এমন সময় মামা বললেন তোমরা বসে গল্প করো আমি একটু নিচে থেকে আসছি। আমাদের খেয়ালই ছিলনা আমাদের পাশে যে মামা চুপটি মেরে বসে আছে। আমি বললাম কেন মামা তুমিও আমাদের সাথে গল্প করো। আমার মামা আমার সব সময়ই বন্ধুর মতো। মামা সবার সাথেই অতি সহজে বন্ধু হয়ে যান। মামার সাথে আমি প্রতিটা কথাই শেয়ার করি।
না তোমরা কথা বলো আমি আসছি বলেই মামা চলে গেল।
মামা চলে যাবার পর চারপাশে নিস্তব্ধ নীরবতা নেমে গেল। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো সাগর দা’র মুখের দিকে। চেহারায় যেন একটা কি বলবে বলবে ভাব। চাঁদের আলোতে সাগরদা’র মুখটা যেন নীলিমায় ঘিরে রেখেছে। দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।
কি হলো সাগর দা নীরবতা পালন করছো কেন? কোন কথা বলছো না যে?
না ভাবছি।
কি ভাবছো?
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম তাহলে কি সাগরদাও যেনে গেছে আমার খবর।
আজ তোমাকে বলবো কি না সেটাই ভাবছি। যা এতো দিন না বলা কথাগুলোকে আমার আকাশের কোণে রেখেছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম কোন দিন তোমাকে বলবোনা। কিন্তু আজ কেন যেন তোমাকে এতো কাছে পেয়ে আর লুকিয়ে রাখতে পারছিনা। মনে হচ্ছে যেন এখন যদি না বলি তাহলে মনে হয় আর কোন দিনই বলা হবেনা স্মৃতির খাতায় জমা থেকে যাবে।
আরে কি বলা হয়নি। বলে ফেল। এতো ভাবছো কি?
আরে তেমন কিছু না। সময়ের কথা সময়ে বলা হলনা আজ আর বলে কি হবে। তবুও কেন জানি আমার মন বলছে বলে ফেলি সুযোগ যখন পেয়েছি। জান নদী আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসতাম। কিন্তু কোনদিন তোমাকে বলতে পারিনি। তোমার মনে আছে সব সময় তোমাকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখতাম। যাতে কেউ কিছু বলতে না পারে। তোমাকে কেউ কটু কথায় কিছু বললে মনে হত বুকে যেন কিসের আঘাত লাগতো। মাঝে মাঝে তুমি বিরক্তও হতে।
আমি সাগর দার কথা শুনে হেসে উঠলাম। কিছুতেই হাসি থামাতেই পাচ্ছিনা।
হাসছো কেন? বল হাসছো কেন?
না এমনি তোমার কথা শুনে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে কি বলছো তুমি। হুম...তারপর বললেনা কেন?
ভেবেছিলাম লেখাপড়া শেষ করে একটা কিছু কাজ করবো। নিজের পায়ে দাঁড়াবো তারপর বলবো তোমাকে। আর ততদিনে তোমারও লেখাপড়া শেষ হয়ে যাবে। কোন কাজ করিনা ছেলের সাথে কেউ বিয়ে দিবে নাকি। তাছাড়া এখন চাচাও (নদীর বাবা) রাজি হবেন না। হঠাৎ একদিন শুনলাম তোমার বিয়ে। বিয়ের কথা চলাকালেও ভেবেছিলাম বলে ফেলি কিন্তু তখনও বিবেক আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ালো। না বলা কথা আর বলা হলোনা। এরপর থেকে আমি আর তোমার সামনে আসিনি। প্রচন্ড দেখার ইচ্ছে ছিল তুমি কেমন আছো কি করে সংসার সাজিয়েছো? তোমার খবর নিয়েছি কিন্তু দেখা করিনি। তোমার মনে আছে বিয়ের আগেরদিন রাতে এসেছিলাম। পরীক্ষা চলাকালেও বন্ধুদের নিয়ে হল থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। শুধু একবার তোমাকে মেহেদী হাতে বঁধু বেশে দেখার জন্য। যাকে ভালোবেসে গড়ে নিয়েছিলাম তিল তিল করে। আজ সে আরেকজনের হয়ে যাচ্ছে।
আমার চোখ দুটো জলে ছলমল করছে। সাগরদার মুখের দিকে চেয়ে আছি। কি সুন্দর করে চোখে জল রেখে হাসিমুখে সব বলে যাচ্ছে।সাগরদা আমি কিছুই বুঝতে পারিনি তখন। তুমি আমাকে এত ভালোবাসতে আর আমি একটুও টের পেলামনা। বড়ই বোকা ছিলাম তাইনা।
তোমার তো কোন দোষ ছিলোনা আমিই তো একসাথে পথ চলতে চলতে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
যাক আজ আর এসব ভেবে লাভ কি তুমিও ভাবিকে নিয়ে সুখ কুড়িয়ে নিয়েছো আমিও আমার স্বামীকে নিয়ে বেশ ভালো দিনযাপন করছি। জীবনের পথে মনের সুখ আর ভালোবাসা প্রয়োজন যতটুকু সব আমার আছে আমি মনে করি তোমারও।
এই কথাগুলো বলে আমার বুকটা কান্নায় ভেঙ্গে যাচ্ছে।
নদী তোমার ভরা চোখের একফোঁটা অশ্রু সহ্য করতে পারিনা। সব ভুলে গিয়েছিলাম। দুজনের ভালোর জন্য। এই কদিন থেকে তোমার কথা নতুন করে ভাবাচ্ছে। মনে শান্তি পাচ্ছিনা। তুমি না বললেও অসহ্য যন্ত্রনায় ভুগছি তোমার জন্য। কি করে ভাবলে ভাল আছি তোমার খবর শুনার পরও। তোমার আমার মাখামাখি ছিল সারাক্ষণ, সারাবেলা। কত বেলা, কত নীলিমা পার করেছি দুজন মিলে। বন্ধুরা বলতো তোদের মধ্যে মান-অভিমান হয়না। কি গর্ব করে বলতাম দুজন মিলে... নাহ তা হতে যাবে কেন? তোমার আকাশে আজ বিষাদের কালো মেঘ জমেছে আর আমার আকাশটা বেদনায় নীল হয়ে আছে।
তাহলে তুমি জেনেই গেছো আমি যে আর বাঁচবোনা। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম আমার দিনগুলো সোনালী হয়ে আমার আকাশে আর উড়বেনা সাগরদা।
নদী তুমি চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। আগের মতো তোমার সুখস্বপ্ন ফিরে আসবে। প্রদীপের আলোতে ভরে উঠবে তোমার আঙ্গিনা।

সাগর দা’র কথা শুনে আমার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হল। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। আমি বসে আছি শান্ত ভঙ্গিতে। মুখে মনে ছাপ পড়লেও সাগরদাকে বুঝতে দিচ্ছিনা। আমার চারপাশ জোছনার আলো থেকেও গাঢ় কুয়াশায় ভরে গেল।
৭১টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১০

১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×