somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ালসা পীরের দরগা লেখকঃ পল্লীকবি জসীমউদদীন

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেয়ালসা পীরের দরগা
জসীমউদদীন
রহিম এক ঝাঁক সুপারি লইয়া হাটে যাইতেছিল। মাঠের মধ্যে যেখানে তিনপথ একত্র হইয়াছে সেখানে শেয়ালে পায়খানা করিয়া রাখিয়াছে। এইখানে আসিয়া সে হঠাৎ আছাড় খাইয়া পড়িল। তাহার ঝাঁকার সুপারিগুলি কতকগুলি এধারে পড়িয়া গেল। আর কতেক সেই শেয়ালের বিষ্ঠার উপর পড়িল। রহিম তখন এধার ওধার হইতে সুপারিগুলি তুলিয়া লইল। শেয়ালের বিষ্ঠার উপর যেগুলি পড়িয়াছিল সেগুলি আর তুলিল না; তারপর তাড়াতাড়ি হাটে চলিয়া গেল।
ইহার পর সেই পথ দিয়া যাইতেছিলো এক পানের ব্যাপারি। সে পথের মধ্যে কতকগুলি সুপারি পড়িয়া থাকিতে দেখিয়া ভাবিল, নিশ্চয় জায়গাটিতে কোন পীর আওলিয়া আছেন। কেহ হয়তো জানিতে পারিয়া এই সুপারিগুলি সেই পীরকে দিয়া গিয়াছে। তখন সে মাথার ঝাঁকা হইতে কতকগুলি পান সেই সুপারির পাশে রাখিয়া অতি ভক্তি সহকারে সালাম করিয়া চলিয়া গেল। ইহার পরে পিঁয়াজের ব্যাপারি, রসুনের ব্যাপারি, মরিচের ব্যাপারি যে-ই এই পথ দিয়া যায় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু সেই সুপারি-পানের উপর রাখিয়া যায়।
হাট হইতে ফিরিবার পথে রহিম দেখে কি, পানে, পিঁয়াজে, রসুনে, মরিচে, তরি-তরকারিতে সেই স্থানটি এক হাত উঁচু হইয়া উঠিয়াছে! সে তাড়াতাড়ি পান, মরিচ, পেঁয়াজ, তরি তরকারী যাহা পারিল ঝাঁকায় ভরিয়া লইয়া বাড়ি চলিল।
বাড়িতে গেলে রহিমের বউ আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করে, “ গেলে তো কয়েক পন সুপারি লইয়া। তাহার দাম দিয়া এত জিনিস আনিলে কেমন করিয়া?”
রহিম কহিল, “ অসব কথা পরে হইবে! শীগগির তোমার শাড়িখানা দাও। আমাদের কপাল ফিরিতেছে।“ সে তাড়াতাড়ি বউএর শাড়ি আর নৌকার পাল লইয়া সেই তিন পথের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলো। দেখিয়া আশ্চর্য হইল, ব্যাপারিরা যে যে আজিকার হাটে লাভ করিয়াছে, প্রত্যেকে দু আনা এক আনা করিয়া এই পথের উপরে রাখিয়া গিয়াছে! রহিম তাড়াতাড়ি পয়সাগুলি গাঁটে বাঁধিয়া সেই জায়গাটিত্র চারিধারে বউ এর শাড়ি দিয়া ঘিরিয়া ফেলিল। উপরের চাঁদোয়ার মতো করিয়া নৌকার পালটি টানাইয়া দিল।
পরদিন গ্রামের লোকে অবাক হইয়া দেখিল, মাঠের মধ্যে পীরের আস্তানা। মাথায় কিস্তি টুপী পরিয়া, গলায় ফটিকের তসবি দোলাইয়া রহিম শেখ সেই আস্তানার সামনে চক্ষু মুদিয়া বসিয়া আছে। যখন সেখানে বহু লোক জড়ো হয়, রহিম চক্ষু মেলিয়া বলে, “আহা! শেয়ালসা পীরের কী কুদরৎ। যে এখানে এক আনার মানত করিবে সে একশ আনার বরকত পাইবে। আজ রাতে শেয়ালসা পীর আমাকে স্বপনে দেখাইয়াছে, এখাঙ্কার ধূলি লইয়া গায়ে মাখিলে সকল অসুখ দূর হইবে। যার ছেলেপুলে হয় না তার কোনে সোনার যাদু হাসিবে।“
গ্রামের লোক কেহ বিশ্বাস করিল, কেহ করিল না। কিন্তু কেহই ইহার আসল ইতিহাস খুঁজিয়া দেখিল না। বিশ্বাস করিয়া যাহারা এখানে রোগ-আপদের জন্য মানত করিল, কাহারও ফল হইল, কাহারও হইলো না। যাহাদের ফল হইল তাহারা আরো বাড়াইয়া শেয়ালসা পীরের তেলেসমাতির কথা লোকের কাছে বলিল। রোগ হইলে আপনা হইতে তো কত লোক সারিয়া ওঠে। আপদে বিপদেও আপনা হইতে তো কত লোক উদ্ধার পায়। তাহারা ভাবে শেয়ালসা পীরের দোয়াতেই তাদের রোগ সারিতেছে- তাহাদের আপদ বিপদ চইয়া যাইতেছে। দিনে রপর দিন পীরের নাম যেমন দেশ বিদেশে ছড়াইয়া পড়িল, মানত ও হাজতের টাকা পাইয়া রহিম শেখের অবস্থা ততই বাড়িতে থাকে। একবার একজন বড়লোক এখানে মানত করিয়া মামলায় জিতিল। সে বহু টাকা খরচ করিয়া শেয়ালসা পীরের দরগা পাকা করিয়া গেল। রহিম শেখ এই দরগার খাদেম। সে চক্ষু বুঁজিয়া মনে মনে ভাবে, “দেশের লোকগুলি কি বোকা! শেয়ালের বিষ্ঠার উপর এই দরগা। এখানে আসিয়া কত আলেম মৌলভী, পীর ফকির মাথা কুটিয়া সেজদা করে!”

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×