somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১০০টি ঔষধি গাছ কেটে ফেলে রেজা ভাইকে যেন ১০০ বার হত্যা করা হল।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাটির এলাকার মানুষজন আমরা দুপুর বা রাতের বেলা খবরের কাগজ পেয়ে অভ্যস্ত। নিত্য দিনকার অভ্যাসবশত ২০ই অক্টোবর দুপুর বেলা কাগজ হাতে নিয়ে চোখ কপালে উঠার জোগাড়, এত দেখি আমাদের রেজা ভাই! পত্রিকা ওয়ালারা তার ১০০ বিঘার উপর করা ওষধি বাগানের গল্প প্রথম পাতাতে ছেপেছে। সাথে সাথে আব্বা আর আম্মাকে ডেকে দেখিয়েছি, ফেসবুকে গল্পটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছি, মনে হচ্ছিল যেন নিজের একটা কিছু ছাপা হয়েছে। খবরটির অনলাইন সংস্করণে গিয়ে দেখলাম দেশের মানুষের প্রশংসা ভরা মন্তব্য নিজের পাড়ার একজনের প্রতি দেশের মানুষের ভালবাসা দেখে মনটা ভরে গেল!

আহসান হাবিব লিখেছেন “Look at his last line. What a patriot. He is a national hero. If our country is still beautiful and still a place to live well then that is because of the few great individuals like him. Hats off.”

আমিনুর রহমান লিখেছেন “আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। সাবাস রেজাউর রহমান ভাই সাবাস। আপনাকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আমরা সবাই যেদিন এই রকম সৃষ্টিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাব দেখবেন সেদিন বাংলাদেশও বদলে গেছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাক আপনার কর্ম ও অর্থনৈতিক জীবন।”

মাহতাফ হুসেন লিখেছেন “জনাব রেজাউর রহমান রেজা ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এরকম অনেক রেজা আছেন, যারা সৃষ্টিশীল কিছু করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন এবং তাদের কর্মকান্ড অনেকের কাছেই অনুকরণীয়, অনুসরণীয় হয়ে থাকে।“

কিন্তু হটাৎ কি যেন কি হয়ে গেল, গত দেড় দশক ধরে যে বাগানে কোন খারাপ কিছু হয়নি আজ (শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১২) সেখানকার ১০০টি ঔষধি গাছ কারা যেন শত্রুতা বশত কেটে ফেলেছে! খবরটা পড়ে মন এতটা খারাপ হয়েছে যে যা বলে বা লিখে প্রকাশ করতে পারবনা। রেজা ভাই প্রথম আলোর প্রতিবেদককে বলেছেন তারা গাছ কাটার পরিবর্তে তাকে কেন মেরে ফেলল না। আমাদের অনেকের ভিতর গাছ গাছালির প্রতি এক অন্যরকম এক মায়া আছে তার কারন হয়ত আমাদের অনেকেই গাছে প্রান আছে এই কথা জানি ও বোঝি কিন্তু এই জানয়ারগুলি “জীবে দয়া করে যে জন সে জন সেবীচে ঈশ্বর” এই কথার মর্মার্থ কি বোঝে? তাদের মুহূর্তের উন্মত্ততায় কিছু গাছ কাটা পরল সেই সাথে রেজা ভাই তথা সকল তরুন উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাসের ভীত নড়ে উঠল।

দেশে যে পরিমান গাছ গাছালি বা বন থাকার কথা তা নেই। বড় শহরে এমনকি মফস্বলেও এখন আগের মত বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জো নেই। এমন পরিস্থিতিতে কারো একক প্রচেষ্টায় এত বড় মূল্যবান গাছের বাগানের উদাহরন আমাদের দেশে হাতে গোনা। একটানা ১৪ বছর নিরলস প্রচেষ্টার দরুন রেজা ভাই এমন একটি বাগান গড়ে তুলতে পেরেছেন। কি নেই এই বাগানে ৩৭ জাতের ঔষধি গাছ যার সংখ্যা প্রায় লাখ খানেক যাদের মধ্যে রক্তচন্দন (রঞ্জনা), অর্জুন, বহেরা, হরীতকী, বাসক, ছাতিম, চম্পাফুল, সোনালু, আমলকী, নিম, গামার, শিমুল, কালো ধুতরা, কাপাসতুলা, লজ্জাবতী, বানরলাঠি, থানকুনি, ওলটকম্বল, দূর্বা, আগর, তুলসী, ঠনালেবু অন্যতম।

ঔষধি বাগান নিয়ে লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার দুইদিন পরেই তার বাগানে চুরি হয়, তিনি তা থানায় জানান এতে ক্ষুব্ধ হয় কিছু স্থানীয়। তাদের অকারন ঈর্ষার কারনেই কাটা পড়ে নিরীহ ১০০র বেশি ঔষধি গাছ। কর্তৃপক্ষ যদি চুরির ব্যাপারটি আমলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যাবস্থা নিতেন তাইলে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটার সুযোগ তৈরি হত না।

আমাদের দেশে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ঔষধের স্থানীয় বাজার রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এইসব ঔষধের কাঁচামালের জন্য আমাদের বাইরের দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। রেজা ভাইয়ের এই ঔষধি বাগানটি এই ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সৃষ্টির উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারত কিন্তু এই সম্ভাবনার দ্বার হয়ত আমরাই বন্ধ করে দিলাম। কাঁচামাল আনতে বিদেশি মদ্রা ব্যয় হলে কার কি? বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছ চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলে কার কি?

শুধু রেজা ভাইয়ের উদ্যোগই না এমন আরও অনেক উদাহরন দেয়া যাবে যেখানে সফল ব্যাক্তি বা উদ্যোক্তাদের পা ধরে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। গুণী ব্যাক্তিবর্গ সেখানেই জন্ম নেন ও সমাজকে আলোকিত করেন যেখানে তাদের কদর রয়েছে। আমরা হয়ত গুণী মানুষের জন্ম দিতে পেরেছি কিন্তু গুণী মানুষদের বেড়ে উঠার জন্য দরকারী পরিবেশ তৈরি করতে অসফল। অর্থনীতি আর রাজনৈতিক অনেক ক্ষেত্রে আমরা হয়ত এগিয়েছি কিন্তু কতটা মানবিক হতে পেরেছি? আমাদের মন থেকে পশুবৃত্তি কতটা কমেছে?

রেজা ভাইয়ের কাজের প্রশংসা করে মহিউদ্দিন মাসুদ লিখেছিলেন “স্বার্থক হোক তার উদ্যোগ, দেখুক সবাই, এদেশের সন্তানরা কী পরিমান শ্রম দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তাকে ব্যবহার না করে বার বার বন্যতায় ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।” দুঃখিত রেজা ভাই দুঃখিত মাসুদ ভাই আমরা বন্য ছিলাম এখনও আছি ভবিষ্যতেও হয়ত এমনই রইব।

সুনামগঞ্জ, নভেম্বর ৪, ২০১২
[email protected]
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×