somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নায়ক অনন্ত জলিলকে সস্ত্রীক অপদস্থ করার নোংরামী

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নায়ক অনন্ত জলিল। তার সম্পর্কে আকাশ ছোয়া প্রশংসা বা পাতালে নামানো নিন্দা করার মত আমি কিছু পাই নি। একজন বাঙলা চলচিত্রের নায়ক, নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করছেন চলচিত্র শিল্পকে বাঁচাতে, নিজের গ্যাটের পয়সা খরচ করে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে দেশের মানুষকে বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করছেন। কতটা সফল হচ্ছেন তা তার সিনেমাগুলোর হাউজফুল মারমার কাটকাট অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত বাঙালী হিন্দি সিনেমা আর হিন্দি সিরিয়াল ছেড়ে এখন সিনেমা হলে ঢু মারছে, এটা অবশ্যই একটা অর্জন। আমাদের কতজনার উচ্চারণ শুদ্ধ? আমরা কতজন শুদ্ধভাবে বাঙলায় কথা বলি? আমি হলপ করে বলতে পারি, একশ জন মানুষের মধ্যে একজন মানুষকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে শুদ্ধভাবে বাঙলায় কথা বলতে পারেন। এই আমরাই অনন্ত জলিলের ইংরেজী উচ্চারণ নিয়ে প্রতিটাদিন ফেসবুক ব্লগ গরম করে রাখি, অপমান অপদস্থ করতেই থাকি। আমরা অবচেতনভাবেই ইংরেজী ভাষা বা হিন্দি ভাষাকে নিজেদের সোশ্যাল স্ট্যান্ডার্ড ভাবি, ঐ সকল ভাষায় কথা বলতে পারাকে জাতে ওঠা মনে করি। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া কিছু না ঘরকা না ঘাটকা উচ্চবিত্ত তরুন আমরা জন্ম দিয়েছি, তারা হয়ে উঠেছেন "সেসব কাহার জন্ম নির্ণিয় ন'জানি" ধরণের অসভ্য ইতর। সামান্য ইংরেজী শিক্ষার বড়াইকে আমরা এতটাই বিশাল ব্যাপার ভেবে বসেছি যে, নিজের দেশের একজন মানুষকে নূন্যতম সম্মান দিতেও আমাদের কার্পন্য হচ্ছে। আমাদের এই মজাবাদী চরিত্র, সবকিছুতেই মজার অন্বেষণ আমাদের জাতি হিসেবে কতটা চরিত্রহীন করে তুলছে, সেই খেয়াল আমাদের নেই। অনলাইনে মুক্তবুদ্ধির চর্চা, বাক-স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের অবাধ সুবিধা পেয়ে আমরা ভুলেই গেছি, বাক-স্বাধীনতা যেই দায়িত্ববোধের জন্ম দেয় তার কথা। বাঙালীর কাছে বাক-স্বাধীনতা এবং মুক্তভাবে মত প্রকাশের সুবিধাটুকু যেন হয়ে উঠেছে বাদরের হাতে একটি ল্যাপটপ, সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, তাই ল্যাপটপটি দিয়ে আরেক বাদরের মাথায় সজোরে আঘাত করছে। অথচ এই প্রযুক্তির সুবিধা, এই বাক-স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের সুবিধাটুকু ব্যবহার করা উচিত ছিল কিছু শুভ কাজে, মানুষের জন্য, দেশের জন্য কিছু করায়। কিন্তু আমরা আমাদের চরিত্র কিভাবে পাল্টাবো? আমরা এতটাই নষ্ট যে, রেস্টুরেন্টে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে খেতে গেছেন, সেখানেও আমরা তাদের অপদস্থ করি, অপমান করি। মজা করার নামে, ফানের নামে ফেসবুকে অজস্র কুৎসিত কথাবার্তা বলার পরে তাদের জনসম্মুখে হেয় করি, ছোট করি। এখানে কি অনন্ত জলিল ছোট হলেন, নাকি আমরা সবাই মিলে অনন্ত জলিল এবং তার স্ত্রীর কাছে ছোট হয়ে গেলাম, এই প্রশ্ন ফেসবুক ব্লগ ব্যবহারকারী লক্ষ মানুষের কাছে রইলো। প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন বিভাগের একজনার নেয়া সাক্ষাতকারেও তাকে নোংরাভাবেই অপমান করা হয়েছে, প্রথম আলোর ঐ ফান ম্যাগাজিনের মজাবাদী মানসিকতার সাক্ষাতকার গ্রহণকারী যেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কোন ইতর ছেলে, যারা মেয়েদের দেখলেই ওড়না ধরে টানাহেচরা করে। ঠিক একই কায়দায় অনন্ত জলিলকেও অপমান করা হয়েছে, এই অপমানের দায় আমাদের সকলের উপরেই বর্তায়। সেই সাক্ষাতকারের পরে আজকে আনিসুল হক গরু মেরে জুতা দানের মত ক্ষমা প্রার্থণা করেছেন অনন্ত জলিলের কাছে। কিন্তু এখন আর ক্ষমা চেয়ে কি হবে? আর আনিসুল হকের ক্ষমা চাওয়াটাও যেন এক প্রথম আলো ব্যবসায়িক ধান্ধাবাজি, প্রথমে অপমান করুন, এরপরে ক্ষমা চান, দুই দিক দিয়েই পত্রিকার কাটতি। যারা অনন্ত জলিল এবং তার স্ত্রীকে জনসম্মুখে হেয় করেছেন, অপমান অপদস্থ করেছেন, তাদের সকলের প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছি। সেই সাথে যারা ফেসবুক ব্লগে অজস্র নোংরামী করে একজন মানুষকে এই অপমানের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও করুণা। যেই মজা, যেই ফান একজন মানুষকে এত বাজে ভাবে হেয় করে যে, সে তার স্ত্রীর সামনে জনসম্মুখে অপদস্থ হন, সেই ফান, সেই মজাবাদকেও জানাচ্ছি ঘৃণা।
২৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×