somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি জানি কিসেরও লাগি...

০৩ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেকের দুধারে গাছপালা ভাল-ই । মেঘলা আকাশ, লেকে ছায়া পড়ে গেছে একেবারে । লেকের পাড়ে একটা গাছের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে কল্প । রবীন্দ্র সরোবরে আশেপাশে এত মানুষের কোলাহল যেন কানেই আসছিল না ওর । চারিদিকে কেমন একটা স্তব্ধ ভাব মনে হচ্ছে । লেকের জলের মত সবকিছুই স্থির লাগছিল ওর কাছে । অনেকক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে কাটল । ঘোর কাটতেই কল্প লক্ষ্য করল লেকের মাঝখানটাতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটা যেন জোনাক হয়ে ঝিকিমিকি করে জ্বলছে । কানে একটা চাপাস্বর আসতেই চমক ভাঙ্গল কল্পের । ‘কল্প তুমি এখানে-’

‘কি, এসে গেছ তাহলে, আমি তো ভাবলাম আরো দেরি হবে’, মুখে শান্ত একটা হাসি ফুটিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিল কল্প । ‘আসবো না ? আফটার অল বিয়ে বলে কথা’, বলেই ফিক করে হেসে দিল অনিতা । অনিতার মায়াভরা চোখ দু’টোর দিকে তাকালে কল্পের বুকের ভেতরটা কেমন জানি শীতল হয়ে আসে । এমন অপূর্ব চোখ মনে হয় সে কখনও দেখেনি । একবার তাকালে মনে হয় শুধু ঐ চোখ দু’টোর দিকে চেয়েই জীবনটা পার করে দেওয়া যায় । আজ প্রায় তিনটা বছর হয়ে গেল অনিতার সাথে পরিচয় । অথচ কখনও এ কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারেনি কল্প । আজও খুব ইচ্ছে করছে বলে দিতে । কিন্তু প্রতিবারের মত এবারও কে জানি ওর গলা চেপে ধরেছে ।

‘কি হল ? চুপ করে রইলে ?’
‘কিছু না । তোমার হাতে ওটা কি ?’
‘পাঞ্জাবী ।’
‘পাঞ্জাবী ?’
‘ওমা ! পাঞ্জাবী ছাড়া কেউ বিয়ে করে ! দেখ না আমি আজ শাড়ি পরে এসেছি ।’ অনিতার মুখে হাসি যেন ধরে না ।
‘ও ! তাই তো ।’ এতক্ষণ কল্প খেয়ালই করে নি অনিতা আজ শাড়ি পরে এসেছে । হালকা নীল রঙের । খুব মানিয়েছে ওকে । অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে, সাথে ওর মুখের দীপ্তিভরা হাসি । বারবার দেখেও মন ভরে না । শুধু কি জানি একটা নেই নেই মনে হচ্ছে । অনেকক্ষণ পর লক্ষ্য করল অনিতা টিপ পড়ে নি । টিপ পড়লে আরো ভালো হত । বোকা মেয়েটা । শাড়ি পড়েছে, অথচ কপালে টিপ নেই ।

‘অমন করে কি দেখছো ?’
‘কিছু না । কবিতা লিখছি ’, বলে হাসার চেষ্টা করল কল্প ।
‘কি !’
ছোট্ট একটা বৃষ্টির ফোঁটা অনিতার ঠিক কপালের মাঝখানে এসে পড়ল । আর কল্প বলে উঠল,
‘ বৃষ্টি ফোঁটায় টিপ বানিয়ে
পড়লি কপাল মাঝে
মেঘবালিকা ঠোঁট বাঁকালো
অপূর্ব তোর সাজে ।’

‘ওয়াও ! খুব সুন্দর ।’ খুশিতে অনিতার চোখ-মুখ ভরে উঠল ।
‘বৃষ্টি ভালো করেই আসবে মনে হয় । চল যাওয়া যাক ।’



গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ক্রমে বাড়তে শুরু করল । ওরা দ্রুত হেঁটে গিয়ে একটা রিক্সায় চাপল । এই প্রথম রিক্সায় অনিতার পাশে বসে কল্প আড়ষ্ট হয়ে গেল । প্রথম থেকেই অনিতা খুব খুশি । খুব এক্সাইটেড । পালিয়ে বিয়ে করছে ! এক্সাইটেড হবে না ? অবশ্য এমন একটা সিরিয়াস কাজে অনিতার খুশিতে এক্সাইটেড হওয়া কল্পের কেন জানি ভালো লাগছে না । ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । প্লাস্টিক টেনে দিয়ে রিক্সার ভেতর কল্প গুটিসুটি মেরে বসে আছে । অনিতা সমানে বক বক করে যাচ্ছে । কিন্তু কোন কিছুই কল্পের কানে ঢুকছে না । ঝুম বৃষ্টিতে রিক্সা ধীরে ধীরে চলতে লাগল । বৃষ্টি তার প্রবল বর্ষণে যেন চারপাশটা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । আজ কল্পের মনের ভেতর এ কি শুরু হল ! কেমন জানি ঘোর ঘোর লাগছে । মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে ! ও, অনিতা, বিয়ে- এ সব কিছুই স্বপ্ন, শুধুই স্বপ্ন । সত্য নয় ।


নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পরে ওরা যথাস্থানে এসে পৌঁছাল । ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে । ঝুম বৃষ্টির শেষে প্রকৃতি যেমন হঠাৎ নীরব হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কল্পের ভেতরটা এখন শান্ত- স্থির । দু’জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ । অনিতা নীরবতা ভেঙ্গে বলল, ‘কি হল ? আর কতক্ষণ ? আমার কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে ।’ অসহায় মুখে কল্পের দিকে তাকালো ও । কল্প একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, ‘বিয়ের আগে সব মেয়েরই অমন লাগে । ব্যাপার না, একটু পরই সব ঠিক হয়ে যাবে ।’ পরম তৃপ্তিতে কল্প সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ল । অনিতা খানিকটা বিরক্ত মুখে বলল, ‘এই ছাইপাশ না খেলে হয় না ?’ ‘হয় বৈ কি’, নির্লিপ্তভাবে জবাব দিল কল্প । অনিতার বিরক্তি ক্রমশ বেড়ে গেল । কল্প সিগারেটটা ফেলে দিয়ে পকেট থেকে ছোট্ট একটা খাম বের করে অনিতার হাতে দিচ্ছিল । অনিতা অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল, ‘কি এটা ?’ কল্প একটা কিছু বলতে যাচ্ছিল । হঠাৎ লক্ষ্য করল তিনটা লোক ওদের দিকেই আসছে । খামটা আবার পকেটে পুরে নিল সে । মুখে শুষ্ক একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘ওই তো এসে গেছে ।’ অনিতার ফ্যাকাশে মুখখানায় সাথে সাথে অপূর্ব একটা হাসি ফুটে উঠল ।

‘এসে গেছ তোমরা ? কতক্ষণ হল ? পথে কোন সমস্যা হয় নি তো ? কল্প, ভাই তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব । জানোই তো আমার কোনমতেই ওকে আনতে যাওয়া সম্ভব ছিল না । এমন একটা সমস্যায় আটকে পড়েছিলাম- যাই হোক । তোমায় কষ্ট দিলাম ভাই ।’ এক নাগাড়ে কথাগুলো শেষ করে হাঁফ ছাড়ল আসিফ ।
‘কি যে বলেন আসিফ ভাই, এ আর এমনকি ’- বলে জোর করে হাসার চেষ্টা করল কল্প ।
‘চল তবে কাজী অফিসে যাওয়া যাক ।’
‘আসিফ ভাই আমার তো কাজ শেষ । আমায় এক্ষুণি যেতে হবে । খুব জরুরী কাজ আছে ।’
‘কী !’ অনিতার মন খারাপ হয়ে গেল । বলল, ‘আমার বিয়েতে থাকবে না তুমি ? এই তোমার বন্ধুত্ব ?’
‘বন্ধু বলেই তো এতদূর এসেছি পাগল !’ ভদ্রতার হাসি হেসে কল্প বলল, ‘আসিফ ভাই আমাকে যেতেই হবে ।’ আসিফ বুঝতে পারল বাঁধা দিয়ে লাভ নেই । ‘ঠিক আছে, যাও তবে । কি আর করা !’ ‘ভালো থাকবেন আসিফ ভাই । ভালো থেকো অনিতা, হ্যাভ আ হ্যাপি ম্যারিড লাইফ’- বলে শুষ্ক একটা হাসি দিল কল্প । অনিতার চোখ ছলছল করছিল । ততক্ষণে কল্প হাঁটতে শুরু করল ।


ট্রেনের শেষ হুইসেলটা বেজে উঠল । এক্ষুণি ঢাকা ছেড়ে যাবে । শুকনো মুখে কল্প ট্রেনের দরজায় এসে দাঁড়ালো, ওর চোখে- মুখে গভীর বিষাদের স্পষ্ট ছাপ । আস্তে আস্তে ট্রেন চলতে শুরু করল । পকেট থেকে খামটা বের করে ফেলে দিতেই বাতাসে উড়ে দূরে মিলিয়ে গেল । ক্রমশ সবকিছু দূরে সরে যেতে লাগল ওর কাছ থেকে । সাথে সাথে ওর অতীত- বর্তমান- ভবিষ্যৎ সবকিছুই । চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এল । তীব্র একটা যন্ত্রণায় কল্পের বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×