সেই ক্লাস ওয়ান থেকে আমার প্রথম অফিসিয়্যালি হ্যাফ প্যান্ট পড়া শুরু।কেজি-গ্রাম টাইপের ক্লাস এ পড়ার দুর্ভাগ্য আমার হয়ে উঠে নাই।তখন অতো ঢং ফ্যাশন বুঝতাম না।প্যান্ট পড়তাম নাভির উপরে।ঠিক পেলের কালের ফুটবলাররা যেমনে হ্যাফ প্যান্ট পড়তো,তেমনে।তাই প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশী ই টাইট ফিটিং হয়ে থাকতো।মাঝে মাঝে বেশি দৌড়া দৌড়ির কারনে প্যান্ট এর হুক ছিড়ে যেত।আম্মুর বকা শুনতে হবে বলে ঐ হুক এর জায়গায় আলপিন লাগিয়ে দিতাম।আর রাস্তায় আথবা ক্লাসে একবার আলপিনটা খুললেই হইসে।রাস্তাটা কোন মতে প্যান্ট হাতে ধরে বেঞ্চ পর্যন্ত আসতে পারলেই শেষ।বেঞ্চ থেকে আর উঠতাম ই না।এমনকি টিফিন আওয়ার এও না।টেনে নিয়ে যেতে চাইলে বলতাম পেটে ব্যাথা।একদিন তো এক হাতে পেটে ব্যাথার নাম করে প্যান্ট ধরে মারামারিও করলাম।পরে প্যান্টের বিরম্বনা সহ্য করতে না পেরে আম্মুকে বলেই দিতাম।
আর একটা ব্যাপার কখনোই বুঝতাম না।শীতকালে এত কাপড় পড়ে আসার পরও কেন এত শীত লাগে?এই শীত কোন দিয়া ঢুকে? গলা থেকে কোমর পর্যন্ত একটার পর একটা কাপড় পড়তেই থাকতাম।আর এইদিকে যে কোমড় এর নিচ থেকে পা পর্যন্ত একটা হ্যাফ প্যান্ট নামক ন্যাকড়ার কারনে অর্ধেক উলঙ্গ থাকতাম সেটার কোন খবরও ছিল না।মাথায়ও আসত না এই অর্ধেকেই আগে ঢাকতে হবে।মনে করতাম এই প্যান্ট পড়তেই হবে।যতই আসুক ঝড় তুফান।শুধু বুঝতাম শীতের সাথে হ্যাফ প্যান্টের কোন দিক দিয়ে বিরোধিতা আছেই।
তারপর ক্লাস ফোর এর পর কয়েকটা ফ্রেন্ড হাই স্কুল এ ক্লাস ফাইভ আছে এরকম স্কুলে এ ভর্তি হয়েছিল।বাসার পাশেই একটা ছিল।তখন চলছিল অতীব খারাপ সময়।আমার অবস্থা ছিল এমন..
"বন্ধু যখন ফুল প্যান্ট পইড়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া,ক্যাটওয়াক দিয়া হাঁইট্টা যায়..বুকটা ফাইট্টা যায়।" আমি স্কুল এ হয় ইতার দেড় ঘন্টা আগে যেতাম।অথবা ইতা যাওয়ার পর যেতাম।মাঝে মাঝে অবশ্য দেখা হয়েই যেত।তখন এমন ভাব ধরতাম যেন ইতারে আমি চিনিই না।সেই থেকে বুঝতে শিখলাম ফুল প্যান্ট এর মর্যাদা।
তারপর আব্বুরে বললাম ফুল প্যান্ট কিনব যাতে সবসময় বাসায় পড়তে পারি।এমনিতে বেড়াতে যাবার জন্য দুই একটা ফুল প্যান্ট ছিল।ঐগুলা বছরে দুই কি তিন বার পড়া হত। তারপর বাসায় পড়ার জন্য আব্বায় এমন পাতলা প্যান্ট আনলো যে প্যান্ট টা পড়েছি কি পড়ি নাই খবর ই থাকতো না।ইয়া বাবা লজ্জায় তো আমি মেরুন কালার ধারন করলাম।ঐদিন ই ফুল প্যান্ট প্রোজেক্ট বাতিল বলে ঘোষনা দিলাম।
"হাফ প্যান্ট এর মালিক কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,ফুল প্যান্ট এর মালিকের সর্ব আরাম...আমার বিশ্বাস।" এই কথার সরমর্ম বুঝতে পারলাম।তখন স্কুল লাইফ মোটামুটি শেষের পথে।বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।আর ক্লাস এর বেশীর ভাগ টাইম ই যেত এই ফুল প্যান্ট হাফ প্যান্ট নিয়ে গবেষনা করতে করতে।এই ফুল প্যান্ট,হাফ প্যান্ট খেলা খেলতে খেলতেই একদিন স্কুল জীবনের শেষ দিন চলে আসল।পাশের কলেজিয়েট এ একটা নার্সারী ছিল।ওখান থেকে কিছু ফুল কিনলাম।মিষ্টি মেলা থেকে কয়েক কেজি মিষ্টি কিনলাম।সবাই ব্যাগ এ করে কিছু প্লেট-গ্লাস নিয়ে এসেছিল। তারপর স্যার ম্যাডামদের থেকে কিছুটা সময় নিয়ে ডেকে এনে একটা ছোট খাট বিদায়ী অনুষ্ঠান করলাম।অনুষ্ঠান শেষে বন্ধুরা সবাই মাঠে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি আর বিদায় পর্ব শেষ করছি।কারো মুখেই হাসি ছিল না।তখন হঠাত্ আদনান বলে উঠলো...
"দোস্ত দেখ...আজকে আমরা সবাই ফুল প্যান্ট পড়েছি"।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২১