খুব বেশী দিন হয়নি সামুতে একটা পোস্ট স্টিকি করা ছিল,যার বিষয়বস্তু হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৬টি পণ্য’র পেটেন্ট করিয়েছে ভারত সরকার।পোস্টটির সম্মানিত ব্লগার সবাইকে সচেতন করেছেন,প্রতিবাদের আহ্ববান করেছেন এবং নিজেরা মানববন্ধন করেছেন।
আমিও তেমনি তাগাদা অনুভব করছি সচেতন করার,আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আশু বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার।আর তাই এই পোস্ট।
দেশকে নিয়ে বলি।১,৪৭,৫৭০ বর্গকি.মি. এই ভূখন্ড ভাটির দেশ,পলি মাটির দেশ।এই মাটি অনেক উর্বরা।যুগ যুগ ধরে তাই এই মাটির বুকেই জন্মেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।এ মাটির ঐশ্বর্যের লোভে লুটেরা এসেছে বারবার।এখনো ফুরিয়ে যায়নি এ মাটির রত্নভান্ডার।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই ব-দ্বীপ থেকেই প্রতিবার লুন্ঠন হয়েছে।শোষিত হয়েছে এদেশের মানুষ।কি ইংরেজ শাসন,কি পাকিস্তান,কি বর্তমান।এদেশের রত্নভান্ডার প্রতিবারই লুটেছে লুটেরার দল ও তাদের বিদেশী প্রভূ।
কেন বাংলাদেশের জন্ম?পশ্চিম পাকিস্তানীদের অব্যাহত শোষণ,দমন-নিপীড়ন আর বৈষম্যের ভিত্তিতে এসেছিল স্বাধিকার আন্দোলন।এরপর শৃংখল ভেঙ্গে ফেলে মুক্ত আকাশে উড়ার স্বাধীনতা।পেয়েছি সেই স্বাধীনতা?শোষণ,নিপীড়ন,বৈষম্য কি উধাও হয়ে গেছে?তাহলে বাংলাদেশ ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে তফাত কোথায়?স্বাধীনতা মানে কি নতুন পতাকা,নতুন সরকার,নতুন নাম এই ভূখন্ডের?
কেন ভারত উপমহাদেশ ভেঙ্গে দুটো রাষ্ট্র হলো?কেন ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান হলো?কেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাবে মুসলমানদের জন্য স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের কথা বললেন?কেন বললেন এই রাষ্ট্রের অংগরাজ্যগুলো হবে স্বায়তশাসিত ও সার্বভৌম?কারণ পূর্ব বাংলার সূর্যসন্তান তার ভূখন্ডে হিন্দু জমিদারদের শোষণের কথা জানতেন।তাই তিনি মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র চান।তিনি এটাও জানতেন দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার রুখতে এটুকুই যথেষ্ট না।তাই আঞ্চলিক স্বাধিকার,আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের জন্যই লাহোর প্রস্তাব করেন।
অথচ পাকিস্তান হয়ে সেই সমস্যা রয়ে গেল।মুসলমান ভাই আরেক মুসলমান ভাইয়ের ঘর লুট করতে লাগলো।পাঠান হলো ইতিহাসের নতুন শোষক আর শোষিত সেই বাঙ্গালী।
যখন ভারত,পাকিস্তান আর বাংলাদেশ ছিল না তখন ইংরেজরা লুটেছে।এ মাটির গরিব চাষীর রক্ত শুষে বিদেশী প্রভুর কাছে অর্ঘ পেশ করেছে এদেশের জমিদাররা।
সেই বিদেশীদের তাড়িয়ে স্বাধীনতা আনলাম।চির চেনা ভিটে মাটি ছেড়ে স্বাধীনতার আঁশে নতুন ভূখন্ডে গেলাম।স্বাধীনতা আসলো না।ধর্মের বাঁধন ছিড়ে জাতিগত বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হলাম।স্বাধীনতার জন্য বোনের ইজ্জত খোয়ালাম,ভাই হারালাম,ঘর-পরিবার এমনকি নিজের জীবন।
তবুও আমার কন্ঠে-
কি দেখার কথা কি দেখছি?
….স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি।
অথচ স্বাধীনতা আমার নিজের মাঝে,আর আমি নিজের জন্য বেছে নিয়েছি পরাধীনতার শৃংখল।আমার সেই স্বাধীনতা আছে নিজের চির পরিচিত ভূবনে দাঁড়িয়ে সকল অন্যায়ের বিরোধিতা করার।
মহামনীষীদের একজন হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন-যখন কোন অন্যায় দেখবে পারলে সেটাকে হাত দিয়ে বাধা দাও,নাহয় মুখে প্রতিবাদ করো;সেটাও যদি না পারো তবে এই অন্যায়কে মনে প্রাণে ঘৃণা করো আর এটা ঈমানের সর্বনিম্নস্তর।
ভেবে দেখুন,সবসময় দাবী করা শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ঈমানের কি দশা।কতটা নিচুতে এর অবস্থান,যখন দশটা লোক দাঁড়ালো বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে আগুন দিতে তখন আর দশটা লোক কেন এর বিরোধিতায় দাঁড়ালো না।
আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে এমন ভাবেই ভূলে গেছি যে বাস্তবতার বাইরেও আমরা চিন্তা চেতনায়ও পরাধীন হয়ে গেছি।উদাহরণ দেই।
আজকে ফেবুতে দেখলাম আরিফ জেবতিক স্যার স্ট্যাটাস দিয়েছেন বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবিতে ৫০০ বাংলাদেশী নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে।সত্যিই,সংবাদমাধ্যম-ব্লগ-সামাজিক ওয়েবসাইট কোথাও এটা নিয়ে মাতামাতি নেই।সবাই পড়ে আছে-“রোহিঙ্গারা মরে গেল রে মরে গেল” “হায় হায় হায় আমেরিকার তো সবশেষ” এই জাতীয় ব্যাপারে।৫০০ জন নিখোঁজ সংবাদ কারও কাছে কিছুই না।
এই সুযোগে একটা পুরনো কৌতুক বলি।২৫মার্চের আগে জেনারেল ইয়াহিয়া এবং নিয়াজী বসে ফিসফিস করছিল।তাই দেখে ভূট্টো বলল,“কি ব্যাপার?কি নিয়ে এত ফিসফিস?”জেনারেল ইয়াহিয়া বললেন,“আমরা ঠিক করেছি পূর্ব পাকিস্তানে ১ কোটি বাঙ্গালী এবং একজন বিদেশী রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করবো”।ভূট্টো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,“একজন বিদেশী রাষ্ট্রদূত কেন?”নিয়াজী তখন একগাল হেসে ইয়াহিয়াকে বলল,“দেখেছেন স্যার,বলেছিলাম না ১ কোটি বাঙ্গালীকে নিয়ে কেউই চিন্তা করবে না?”
চিন্তা করার সময় এখন।নিজের তাগিদে,নিজের অস্তিত্বের তাগিদে চিন্তা করতে হবে।চোখ বুলান আশপাশে।দেখবেন আধিপত্যবাদী,সাম্রাজ্যবাদীদের কালো ছায়া সব শকুনের পিছনে।
স্বাধীন দেশের মাটিতে দেশ গড়তে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু।তাঁকে আক্ষেপ করে বলতে হয়েছিল,“সবাই পায় সোনার খনি,আমি পেয়েছি চোরের খনি”।বিদেশি প্রভুর ইশারায় শকুনের দল বাগড়া পেয়ে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করলো।অসহায় দুই মেয়ের নিরাপদ আশ্রয় হয়নি স্বাধীন স্বদেশের মাটি।
শকুনের দল খুন করেছে জাতীয় চার নেতাকে,যাতে করে নেতৃত্বশুন্য জাতি সিকিম,তিব্বত অথবা কোন তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয়।খুন করেছে আরেক জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক মেজর জিয়াকে।তাকে স্বপরিবারে হত্যা করেনি কারণ তিনি পরিবারকে রাজনীতিতে জড়াননি।জেনারেল ওসমানী,মেজর জলিল এর মত জাতির বীর সন্তানেরাও হয়েছেন শকুনের ষড়যন্ত্রের শিকার।এরা কলুষিত করেছে শিক্ষাঙ্গনকে,ধ্বংস করেছে ছাত্রসমাজকে।যে ছাত্রসমাজের ঘটিয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন,৬৯’র গণঅভ্যুত্থান,৭১’র স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই ছাত্রসমাজের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে লেজুড়বৃত্তি আর ক্ষমতার অপরাজনীতি।
সরকার পরিবর্তন হয় বারবার কিন্তু শকুনেরা থেকে যায় বিদেশী প্রভু সমেত।
দেশপ্রেমিক বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ নবাবের পতন ঘটিয়েছিল বিদেশী প্রভু তার প্রভুভক্ত শকুনের জন্য।জাত-ধর্ম যাই হোক মীরজাফর,জগৎশেঠ,রায়বল্লব দের দল তসরুপ করেছিল দেশের সম্পদ।বাংলার স্বাধীনতা পলাশীর প্রান্তরে বিকিয়ে মীরজাফররা তাঁবেদারীর মসনদ কিনেছিল।ইতিহাস সাক্ষী প্রয়োজনবোধে প্রভু পোষ্যকে সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি।
কান পেতে শুনুন বাতাসে অনেক লুটের খবর ভাসে।লুটেরা নিজে খায়,প্রভুকে খাওয়ায়।বাগড়া পাবে জানলে সুনিপুনভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মেরে ফেলে বেছে বেছে,একে একে।
আর নিজে না পারলে আড়াল থেকে বের করে আনে কালো ছায়াকে।
সাবধান হোন,সচেতন হোন,প্রতিবাদী হোন।এ দেশের ভূখন্ড আপনার,এ দেশের তেল-গ্যাস-বন্দর আপনার।দ্রব্যমূল্য যতই হোক,বাজার করে দু’বেলা আধ-পেটা খেয়ে এই ভূখন্ডের বাতাসে শ্বাস নেন আপনি।মাথার উপর ঋণের বোঝা নিয়ে যে ভবিষ্যত প্রজন্ম জন্মালো আপনার ঘরে,তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন শুধুই আপনি।তাই অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হোন।মনে রাখবেন দুষ্টের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় শিষ্টের নিস্ক্রিয়তায়।
ভুলে যাবেন না,দেশে এখনো গণতন্ত্রের বুলি কপচানো হয়;আর “জনগন-ই সকল ক্ষমতার উৎস”।