somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে এই মাওলানা !!! কি তার পরিচয় ! -৭

০১ লা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাওলানার কামরায় গুণী ও বিশিষ্টজনদের আগমন এবং নির্গমন আশ্চর্যজনক কিছু নয়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নানা প্রান্ত থেকে তার সাক্ষাত চেয়ে লোকজন আসেন। তার দরোজা সবার জন্য অবারিত। ধর্ম কিংবা দেশের জন্য ক্ষতিকর মনে হলে তিনি মুখের উপর না করে দেন। এমন কিছু প্রমাণিত হলে কিংবা কোন মতলববাজ তার কাছে আসতে চাইলে তিনি বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তার কাছে কখনো কোন কপটতা আশ্রয় পায়নি।

পশ্চিম পাকিস্তানের একজন ইসলামি ব্যক্তিত্ব প্রায়ই তার কাছে আসেন। ঢাকা সফরে এলে তিনি মাওলানার সাথে সাক্ষাত না করে কোথাও যান না।

মাওলানার সাথে তার কথাবার্তা হয়। বাতচিত হয়। ধর্ম এবং এর নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলাপ জমে থাকে। তার নাম আবুল আলা মওদুদী। কেউ কেউ বলেন, মাওলানা মওদুদী। দেশভাগের ভারত থেকে তিনি হিজরত করেছেন পশ্চিম পাকিস্তানে। তার বর্তমান আবাস সেখানেই।

মওদুদীর আলোচনার বিষয়বস্তু এবং তার ব্যাখা কখনো কখনো মাওলানার কাছে কেমন কেমন মনে হয়। তবুও তার আচার ব্যবহার এবং ভক্তি ও ভালোবাসা দেখে তিনি চিন্তায় পড়ে যান। এ লোকটি স¤প্রতি মানুষজনকে ইসলামী রাজনীতির দিকে ডাকা শুরু করেছেন। তার শ্লোগানে সাড়া দিয়ে এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন শিক্ষিত সমাজের কোন কোন অংশ।

মাওলানা এসব ব্যাপার জানেন এবং মৌন সমর্থন দিয়ে আসছেন। আগামীকাল তিনি আসছেন। এ বিষয়ে পত্র এসেছে আজ মাওলানার কাছে। মাওলানা পত্র পড়ছেন। তার আশেপাশে মাদরাসার বেশ কয়েকজন আলেম এবং অনুরাগী বসে আছেন। তারা এ লোকটির আগমনের খবরে নড়ে চড়ে বসলেন।

হুজুর! আমাদের কিছু আরয ছিল।
হুমম, বলো। কি বলতে চাও।
আবুল আলা মওদুদী আপনার এখানে আসেন। আলাপ আলোচনা করেন। তার প্রাথমিক কিছু কর্মকান্ডে আপনার সমর্থন আমাদেরকে অবাক করে।
বলো কী? কেন? খুলে বলো।
হুজুর! আপনি তো তার সাথে মৌখিক আলাপে ব্যস্ত থাকেন। তার লিখিত কয়েকটি বই বের হয়েছে। সেসব আপনার নজরে আসেনি। এ লোক তার এসব বইয়ে এমন কিছু লিখেছে, যা বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে। আপনি অনুমতি দিলে আগামী কাল তো তিনি আসবেন, আমরা তার সাথে এসব বিষয়ে কথা বলতে চাই আপনার সামনে।
তাই নাকি। অবশ্যই তোমরা তার সাথে কথা বলবে। আমি এখনও তার কোন বই পড়িনি। কথা সত্য বলেছো। তোমরা আগামীকাল আসবে। আমি সুযোগ করে দিব। সংশয়ের সুরাহা হওয়া দরকার। পারলে বইগুলো নিয়ে এস।
জ্বী আচ্ছা। আমরা আগামীকাল আসবো। তার সাথে কথা বলবো।
অবশ্যই আসবে। ইসলাম নিয়ে কোন ধোঁকাবাজির সুযোগ নেই। কালই এর সমাধান হবে।

পরের দিন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় নেমে মাওলানার সাথে সাক্ষাত করতে এলেন মওদুদী সাহেব। মাওলানা তাকে সম্ভাষণ জানিয়ে বরণ করলেন। শীতল পাটিতে বসতে দিলেন। খাদেমকে ডেকে মেহমানদারীর আয়োজন করতে তাগিদ দিলেন। তারা দুজন নিজেদের কুশল আলাপ শুরু করলেন।

মওদুদী সাহেব এসেছেন। এ সংবাদে কয়েকজন ছুটে এলেন। কেউ এসেছেন তাকে দেখতে। কেউ এসেছেন তার কাছ থেকে কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে। তার ভুলগুলো জানিয়ে দিতে। তারা কিছু নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ সাথে করে এনেছেন। প্রয়োজনে যাতে মওদুদী সাহেবকে প্রমাণ হিসেবে দেখানো যায়।
আহারের সামান্য আয়োজন শেষ হল। তারা দুজন খেয়ে হাত ধুয়ে নিলেন। তখনও তাদের কথা চলছে। পশ্চিম পাকিস্তানের নানান বিষয় সম্পর্কে মাওলানাকে তথ্য দিচ্ছেন মওদুদী সাহেব। বাইরে অপেক্ষা করছেন বেশ কয়েকজন তরুণ আলেম ও শিক্ষার্থী।

সালাম দিয়ে অনুমতি নিলেন আগন্তুকরা। তারা এসে গোল হয়ে মাওলানা এবং মওদুদীর চারপাশে হাঁটু গেড়ে বসলেন। সুতীক্ষè দৃষ্টিতে মওদুদী সাহেব এ তরুণদের চেহারার দিকে তাকিয়ে আছেন। মাওলানা মুখ খুললেন,
জনাব মওদুদী সাহেব! এরা কয়েকজন আপনাকে দেখার আশায় ছিল। গতকাল আপনার সংবাদ পেয়ে তারা অপেক্ষায় ছিল। আপনার লিখিত কিছু বিষয়ে তাদের মধ্যে সংশয় তৈরী হয়েছে। কাজেই আমি তাদেরকে আসতে বলেছিলাম। আপনার সাথে সরাসরি তারা আলাপ করতে পারবে।

মুখে হাসি ছড়িয়ে মওদুদী সাহেব স্বাগত জানালেন তাদেরকে। তিনি দাড়িতে হাত ঢুকিয়ে চিরুনির মতো করে আঙুল নাড়াচ্ছেন। ধবধবে সফেদ দাড়ি। স্বাস্থ্যবান শরীর। গায়ে সৌখিন কাবলী। মওদুদী সাহেবকে বেশ প্রশান্ত দেখাচ্ছিল।

মুহতারাম! আপনাকে পেয়ে আমরা আনন্দিত। আপনাকে দেখার ইচ্ছে ছিল। আজ দেখেছি। আলহামদুল্লিাহ। সামনে বসা এক তরুণ মুখ খুলল।
পাশের জন মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে। এবার তার পালা। এ তরুণ বেশ কিছূ বিষয়ের অবতারণা করল এবং মওদুদী সাহেব এসবের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা নিয়ে তাদের প্রশ্ন তুলে ধরল। তাদের হাতে মওদুদীর লিখিত দুটি গ্রন্থ।

উপর নীচে মাথা নাড়ছেন মওদুদী সাহেব। তাদের প্রশ্ন শেষ হল। এবার তিনি এ বিষয়গুলোতে নিজের লেখা মত ও ব্যাখ্যাই পুনরাবৃত্তি করলেন।

মাওলানার কপাল কুঁচকে যাচ্ছে এসব শুনে। তার ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যাচ্ছে। তিনি ভাবছেন, মওদুদী সাহেব এসব কি বলছেন? চৌদ্দশ বছর ধরে আলেম এবং গবেষকরা যে ব্যাখ্যা ও অর্থ সম্পর্কে একমত পোষণ করে আসছেন, সেখানে তিনি এমন মনগড়া ব্যাখ্যা কোথায় পেলেন?

মওদুদী সাহেব তার ব্যাখ্যা থামালেন। শেষ করলেন তার বক্তব্য। এবার মাওলানার পালা। আগন্তুক তরুণদের সবার চোখ মাওলানার দিকে। দেখা যাক কি বলেন তিনি?

জনাবে মওদুদী! আপনার সাথে আমার হৃদ্যতা এবং আন্তরিকতা অনেক পুরনো। আপনার কর্মপন্থা এবং চিন্তাভাবনা আমার ভালো লাগে। কিন্তু আপনি এ বিষয়গুলোতে নিজের যে ব্যাখ্যা দিলেন তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমাদের পূবসুরীদের গবেষণা ও মতামতের সাথে আপনার ব্যাখ্যা সাংঘর্ষিক। বড়ই দুঃখের বিষয়, আপনার কাছে এমন ব্যাখ্যা শুনতে হল। আপনি এসব সংশোধন করে ফেলুন। খুব শিগগিরই। আমাদের প্রিয়তম রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এমন দুঃসাহস আমরা কল্পনাও করতে পারি না।

মওদুদী সাহেবের চেহারা থেকে প্রশান্তি এবং ঠোঁটের মুচকী হাসি হারিয়ে গেল। তিনি চুপচাপ তাকিয়ে ছিলেন মাওলানার দিকে। তিনি মুখ খুললেন, মাওলানা! আপনার সাহচর্য আমার জন্য ঈর্ষণীয়। কিন্তু আপনাদের মতামত আমি গ্রহণ করতে পারছিনা। আমি যা বুঝেছি, তা নিয়ে থাকতে চাই, লিখতে চাই। আপনারা আপনাদের মতো লিখুন।

মাওলানার গলা উঁচু হয়ে এল। আয়েশী ভঙ্গি ছেড়ে তিনি সোজা হয়ে বসলেন।

শুনুন মওদুদী সাহেব! এই যদি আপনার সিদ্ধান্ত হয়, সত্য এবং সঠিক মেনে নিয়ে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা নিয়ে অটল থাকতে চান, তবে আপনার সাথে আমার সম্পর্ক এখান থেকেই ছিন্ন হবে। আমি আপনাকে কোন সমর্থন কিংবা আন্তরিক অভিবাদন জানাতে পারছিনা। আমি দুঃখিত। আপনার কাছ থেকে এসব আশা করিনি। ইসলামের এসব বিষয় নিয়ে কোন রকম মনগড়া ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। আপনি অতীতের সাধক ও গবেষকদেরকে অবহেলা করছেন। নিজের মন মস্তিষ্ককে তাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী ভাবছেন। এমনটি উচিত নয়। আহা! মুসলমানদের জন্য এক নতুন বিভ্রান্তির দুয়ার আপনি আবার খুলে দিলেন।

মাওলানার কপালে ঘাম দেখা জমছে। তার ভেতরের সত্ত্বা জেগে উঠেছে। আদর সমাদর ভুলে তিনি মওদুদী সাহেবের সাথে সব সুসম্পর্ক ছিন্ন করলেন। যে লোককে বোঝানোর পরও নিজের ভ্রান্তিতে অটল থাকতে চায়, তার সাথে আলোচনা অনর্থক।

মাওলানার চেহারা বদলে যাচ্ছে। তার চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। সে প্রকাশের ভাষা মওদুদীকে বলে দিচ্ছে, আপনি চলে যান। মাওলানার সামনে বসে থাকার আর কোন অর্থ নেই।

আর কোনদিন তিনি মওদুদীর মুখ দেখেননি। বরং মওদুদীর এসব কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করার জন্য একটি বই লিখে ফেললেন, এর নাম দিলেন ‘ভুল সংশোধন’।

এরপর থেকে তিনি যে কোন কার্যক্রমে জামায়াতে ইসলামীর বিভ্রান্তি ও ধোঁকা সম্পর্কে সবাইকে সজাগ করতেন।

জাতির কল্যাণ কামনায় বিভোর এ মাওলানার কাঁধে যোগ হল আরও একটি নতুন গুরু দায়িত্ব।

আগের পর্বগুলো...........

১০ পর্বে সমাপ্য এ ধারাবাহিকে খুব শিগগিরই মাওলানার নাম আসছে। তাই মন্তব্যের ঘরে মাওলানা ভাসানী কিংবা হাফেজ্জী অথবা অন্য কারো নাম লিখে চিন্তিত হওয়ার কিঝু নেই। লেখা বিষয় সম্পর্কে যে কোন পরামর্শ ও সমালোচনা কাম্য। তবে বিতর্ক কিংবা কাউকে আঘাত করা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৭
১৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×