somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্রের সেফটি ভাল্ব, এক তরুণী মডেলের হত্যা বিচার মিডিয়া ও সিনেমা

৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ড নিয়ে বলিউড শেষপর্যন্ত যে ভালো ছবিটা বানিয়ে উঠলো বছর কয়েক আগে, সেই ' নো ওয়ান কিলড জেসিকা' দেখতে দেখতে নানা বিচিত্র সব অনুভূতি হচ্ছিল। টাকা থাকলে, রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলে কতটা কী করা যায়, সেটা আমরা খানিক জানি সবাই, এরকম ছবি দেখতে দেখতে সেই জানাটা আরো প্রসারিত হয়ে যায়। আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই ছবি এবং বাস্তবের যে ঘটনার প্রতিরূপ এই ছবি তা এক নাটকীয় ইতিবাচক মোড় নিয়েছিল। মিডিয়া এবং তার মাধ্যমে জনমানস নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে ভারতীয় সংসদীয় এবং বিচার বিভাগের ওপর যে চাপ তৈরি করতে পেরেছিল, তা ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত হিসেবে ন্যায়বিচারে শেষমেষ রূপান্তরিত হতে পেরেছিল। কিন্তু এটাও ঠিক ন্যায়বিচার খুব ব্যতিক্রমী ভাবেই এখানে এসেছিল। এরকম আরো কতগুলি বাস্তব ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে কোলকাতার মানুষকে পথে নামতে দেখেছিল। দুটির উল্লেখ করি। এক রিজওয়ানুর হত্যা মামলা। দুই তাপসী মালিক কে সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন চলাকালীন জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা। এই দুই ঘটনায় ন্যায়বিচার হলো না বলেই তো দেখলাম আমরা।
জেসিকা লাল সংক্রান্ত ছবিটি দেখতে দেখতে এরকম অনেক কথাই ঘুরে ফিরে আসছিলো। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেবার পর বলেছিলেন বিচার টাকা দিয়ে কেনা যায়। তথাকথিত স্যাক্রেড গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, 'বিচারব্যবস্থা' সংক্রান্ত অনেক আক্রমণাত্মক কথা। কিন্তু যে মমতা মাঝে মাঝে বিবেকের কিছু কথা, হয়ত আন্তরিকভাবেই তুলে ধন্যবাদের যোগ্যা হন, সেই তাঁকেই যখন দেখি নারী নির্যাতনের, শিক্ষক নিগ্রহের নানা ঘটনাকে তদন্তের আগেই আড়াল করতে, বিরোধীদের বা মিডিয়ার একাংশের চক্রান্ত বলে মার্কা মেরে দিতে, তখন দ্বিচারিতা দর্শনের ক্ষোভটা খুব বেশি করেই হয়। আর প্রধান বিরোধি দল সি পি এম যে কদর্যতা চোখের সামনে তার দীর্ঘ শাসনে, বিশেষত শেষ দশকে রেখেছে, তাতে গণতন্ত্র ইত্যাদি নানা কথাকে ভাঁড়ামো, যাত্রাপালার চেয়ে বেশি গুরূত্বে দেখতে ইচ্চে হয় না। কংগ্রেস ভারতে চিরকাল আর এখনও শাসকদের প্রধান মুখপাত্র, বড়সড় ডিলের ওস্তাদ দল। সাধারণ মানুষকে ঠুলি পড়ানোতে ওস্তাদ না হলে শোষকের পক্ষে ডিল করে করে চলেও এতদিন একটানা [মাঝে জনতা, মিলিজুলি, বিজেপি অধ্যায়ের কিছু গ্যাপ সংসদীয় ব্যবস্থাকেই তো শক্তিশালী করল, যার প্রোপাগাণ্ডিস্ট হিসেবে আছে কংগ্রেস] শাসন চালানো যায় না। ভারতের বামপন্থী আন্দোলন কংগ্রেসকে দেখার প্রশ্নে বিরোধিতার সূত্রে বিভাজিত হয়েছে আর মেহনতি মানুষের ঐক্যকে এভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোই যায় নি। ১৯৬৪ র সি পি আই কংগ্রেসকে দেখার প্রশ্নে ভেঙে যায়, এখনো কমিউনিস্টদের র‍্যাডিকাল অংশ [ বিভিন্ন সি পি আই- এম এল, এস ইউ সি আই, এম সি সি, এম সি পি আই] আর মডারেট অংশ [সি পি আই, সি পি এম] কংগ্রেস সম্পর্কে ও সেইসূত্রে তার শাকরেদ বিভিন্ন আঞ্চলিক দল সম্পর্কে বিরোধী অবস্থানে থাকে। কংগ্রেস এর কৌশলী রাজনীতি ও বিভাজনের মাধ্যমে জনভিতি ও ক্ষমতা নিজের অনুকূলে রাখার বিষয়টি শেষের পথে বলে অনেকে মনে করেন, বিশেষত সাম্প্রতিক সংস্কার সিদ্ধান্তের পর। কিন্তু গ্রহণযোগ্য বিকল্প না থাকায় তা সুদূর পরাহত বলেই মনে হয়। তার চেয়েও বড় কথা তার কূট কৌশলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এখনো তৈরি হয়ে উঠতে পারে নি ভারত। মাওবাদীদের মত শক্তিকে পর্যন্ত কংগ্রেস ২০০৪ এর লোকসভা ভোটে জেতার জন্য অন্ধ্রে অসামান্য কৌশলে ব্যবহার করে নিতে পেরেছিল! [মাওবাদীরা অবশ্য তাদের আঞ্চলিক নীতি বা সীমিত গেরিলা সাফল্যের জন্য নানা আঞ্চলিক শাসক দলের হয়ে প্রায়ই নির্বাচনে ব্যবহৃত হবার জায়গায় নিজেদের নিয়ে যান।] তাই কংগ্রেসি মোহ ও সেইসূত্রে বিচার সহ নানা গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের আস্ফালন জারীই থাকবে। মাঝে সাঝে দু একটা জেসিকা লাল হত্যা মামলা আমাদের স্বস্তির জন্য থাকবে অবশ্য সেফটি ভাল্ব হয়ে, না না গণতন্ত্র আছে, পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যায় নি, এই বিশ্বাসটা বজায় রাখার জন্য।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×