somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলেকজান্ডারের মৃত্যুশয্যায়

০৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাবীর আলেকজান্ডার যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০। এত অল্প বয়সে সিংহাসন সামলানো তাঁর পক্ষে কঠিন হয়নি। কারণ, লিওনিদাসের মতো একজন যোগ্য প্রশিক্ষকের কাছ থেকে তিনি শরীর বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন আর মাত্র ১৩ বছর বয়সে শিক্ষা পেয়েছিলেন মহান গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের কাছ থেকে। মূলত এই সুশিক্ষার কারণেই আলেকজান্ডার প্রচণ্ড শারীরিক দৃঢ়তা ও মেধার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরপরই থিবিস আর এথেন্সের নেতৃত্বে গ্রিকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তরুণ আলেকজান্ডার এত দ্রুততার সঙ্গে তাদের দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছান যে তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, স্বয়ং আলেকজান্ডার তাঁদের দমন করার জন্য হাজির হয়েছেন। এর পর থেকে পরবর্তী ১১ বছরে তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য উষ্ণ সমতল মেসোপটোমিয়া থেকে হিন্দুকুশ পর্বতমালা অবধি পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁর সেনাবাহিনী ২১ হাজার মাইল পথ পরিক্রমণ করে।
অনেক রাজ্য আর অনেক দেশ জয় করে তিনি নিজ গৃহের দিকে পা বাড়ান। ফিরে যেতে চান মায়ের কোলে। কিন্তু যাত্রার মাঝখানে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো রূপকথার নগর ব্যাবিলনের রাজপ্রাসাদে। কয়েক দিন আগে থেকেই রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। রাত জেগে মদ পানের কারণে সম্ভবত রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছু সময়ের জন্য জ্বর খানিকটা প্রশমিত হলেও পরে তা প্রকট আকার ধারণ করে। তিনি নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন আর তাঁর জবানও বন্ধ হয়ে যায়। তবে সিলমোহর বসানো আংটি তাঁর কোনো এক সেনাপতির হাতে পরিয়ে দেওয়ার মতো শক্তি তখনো তাঁর শরীরে ছিল। ওই আংটি তিনি কাকে পরাতে চান, তা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নাকি ফিসফিস করে বলতে সক্ষম হয়েছিলেন, ‘যে সবচেয়ে শক্তিশালী।’ তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে কোনো এক সময়ে। তারিখটা খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ সালের ১১ জুন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৩। তাঁর মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর সেনাদলের সদস্যরা, স্ত্রী ও খোজারা; মেসিডোনিয়া, গ্রিস, পারস্য ও ব্যাবিলনের মানুষ। কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, তা নিয়ে নানাজনের নানা মত আছে। অনেকেই মনে করেন, আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, মদের বিষক্রিয়া কিংবা পশ্চিম নীলনদ অঞ্চলের ভাইরাসে। গুজব ছিল বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। হত্যাকারী হিসেবে অ্যান্টিপাটারের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়। অ্যান্টিপাটার ছিলেন খুব নামকরা একজন অধিনায়ক। আলেকজান্ডার যখন এশিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন, তখন অ্যান্টিপাটারের হাতে মেসিডোনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল।
মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডার তাঁর সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার তিনটা ইচ্ছা তোমরা পূরণ করবে। এতে যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে। আমার প্রথম অভিপ্রায় হচ্ছে, শুধু আমার চিকিৎসকেরা আমার কফিন বহন করবেন। আমার দ্বিতীয় অভিপ্রায়, আমার কফিন যে পথ দিয়ে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই পথে আমার কোষাগারে সংরক্ষিত সোনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর ছড়িয়ে দিতে হবে। আমার শেষ অভিপ্রায়, আমার কফিন বহনের সময় আমার দুই হাত কফিনের বাইরে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।’
তাঁর মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত লোকজন মহাবীর আলেকজান্ডারের এই অদ্ভুত অভিপ্রায়ে বিস্মিত হন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ। তখন তাঁর একজন প্রিয় সেনাপতি তাঁর হাতটা তুলে ধরে চুম্বন করে বলেন, ‘হে মহামান্য, অবশ্যই আপনার সব অভিপ্রায় পূর্ণ করা হবে; কিন্তু আপনি কেন এই বিচিত্র অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন?’
দীর্ঘ একটা শ্বাস গ্রহণ করে আলেকজান্ডার বললেন, ‘আমি দুনিয়ার সামনে তিনটি শিক্ষা রেখে যেতে চাই। আমার চিকিৎসকদের কফিন বহন করতে বলেছি এ কারণে যে, যাতে লোকে অনুধাবন করতে পারে চিকিৎসকেরা আসলে কোনো মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারেন না। তাঁরা ক্ষমতাহীন আর মৃত্যুর থাবা থেকে কাউকে রক্ষা করতে অক্ষম।
‘গোরস্থানের পথে সোনা-দানা ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা বোঝাতে যে ওই সোনা-দানার একটা কণাও আমার সঙ্গে যাবে না। আমি এগুলো পাওয়ার জন্য সারাটা জীবন ব্যয় করেছি, কিন্তু নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ বুঝুক’ ধন-সম্পদের পেছনে ছোটা সময়ের অপচয় মাত্র।
কফিনের বাইরে আমার হাত ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা জানাতে যে খালি হাতে আমি এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, আবার খালি হাতেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি।...’
অনুবাদ: দিলওয়ার হাসান


আই উইশ আই হ্যাড বিন দেয়ার অবলম্বন
(Copy paste)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×