somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোকের আবরণে প্রবারণা পূর্ণিমা রামু ও উখিয়াতে ফানুস ওড়েনি

৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শোকের আবরণে ঢাকা পড়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। কাল দেশের কোথাও কোথাও সন্ধ্যার আকাশ আলো করে উড়েছে ফানুস। আবার কোথাও ছিল কবরের নীরবতা। ছিল প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। সরকারের পক্ষ থেকে ‘চাপ’, সহায়তা এমনকি ফানুস বানিয়ে দেয়ার জন্য বলা হলেও রামুতে কোনো আলো খেলা হয়নি। কেবল শোক ও প্রতিবাদ ছিল সবখানে। রামুর বৃহৎ সীমা বৌদ্ধবিহারের ভান্তে সত্য প্রিয় মহাথেরো সেখানে কোনো উৎসবের পক্ষে সরকারের চাপে নতি স্বীকার করেননি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রথম দিকে ঘোষণা ছিল ফানুস উড়বে না, তবে সরকারের ‘পরামর্শে’ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৌদ্ধ নেতাদের সাক্ষাৎ ও একজন বৌদ্ধকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বানিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।
ঢাকায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু নয়া দিগন্তকে বলেছেন, তারা সরকারের ‘সিদ্ধান্ত’ মেনে ফানুস উড়িয়েছেন ঠিকই, তবে সেটি মন থেকে নয়। তবে সব বিহারে কাল প্রার্থনা হয়েছে। শান্তি কামনা করা হয়েছে জগতের সব প্রাণীর জন্য। ফের মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে অহিংসা পরম ধর্ম। ঢাকায় বৌদ্ধদের সাথে সংহতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন হাজারো মানুষ। বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে অহিংসাকে লালন করে সবাইকে এক সাথে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উদ্যোগে এ মোমবাতি প্রজ্ব¡লন কর্মসূচি পালন করা হয়। ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বৗদ্ধ বিহার এবং বসতিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে এ বছর কোনো বিহারেই ফানুস ওড়ানো হবে না বলে বৌদ্ধরা সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সরকারের অনুরোধে কোথাও কোথাও এ উৎসব হয়েছে।
সংহতি : ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলাকে বর্বরোচিত উল্লেখ করে তাদের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করে এক হাজার মোমবাতি জ্বালানো হয়। এতে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। পরিবেশন করা হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। মোমবাতি হাতে শহীদ মিনারে হাজার মানুষের এ সমাবেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হয়।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আরবান স্টাডি গ্রুপ, সুজন ও টিআইবির শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, হামিদা হোসেন ও খুশী কবীর প্রমুখ। সংহতি জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন শেষে তারা শহীদ মিনার ত্যাগ করেন।
রামু ও উখিয়া : রামুর কোনো বিহারেই ফানুস ওড়েনি। বাকখালী নদীতে ভাসেনি আনন্দ জাহাজ। বৌদ্ধদের মনে এখনো শঙ্কা না কাটায় এমনটা হয়েছে বলে জানা গেছে। রামুর প্রাচীনতম সীমা বৌদ্ধ বিহারের ভান্তে সত্য প্রিয় মহাথেরো সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তিনি বলেন, এ শোক সইবার আগে কোনো ফানুস উড়বে না আকাশে। তাই হয়েছে। সবাই মেনে নিয়েছেন তার কথা।
কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত রোববার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতাদের সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হয় বলে জানা গেছে। তাদের সাথে পুলিশ প্রশাসন বৈঠকও করেছে। তবে সেখানে তারা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন এবং রামু ও উখিয়াতে কোনো রকমের উৎসবের বিপক্ষে মত দেন।
তবুও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় তহবিল দেয়া হবে, এমনকি ফানুস বানিয়ে দেয়ারও দায়িত্ব নিতে রাজি পুলিশ। তবুও যেন ফানুস ওড়ানোর উৎসব করা হয়। তবে বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের অমতের কারণে শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের এ উদ্যোগ সফল হয়নি।
আমাদের কক্সবাজার সংবাদদাতা জিএএম আশেক উল্লাহ জানিয়েছেন, রামুতে দুপুরে যুব বুড্ডিস্ট সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিবাদী মানবন্ধন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সেখানকার শহীদ মিনারে মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে। প্রতীকী এসব প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই সেখানে এ বছর পালিত হয়েছে প্রবারণা পূর্ণিমা। রামুতে এবার আনন্দ জাহাজ ভাসেনি।
তিনি জানান, প্রতি বছর রামুতে বড় আকারের প্রবারণা উৎসব হয়। এ উৎসব দেখার জন্য পর্যটকেরাও ভিড় করে থাকেন। তবে এ বছর দুই দিনের এ উৎসবের শেষ দিনে কোনো আনন্দ আয়োজন ছিল না। এখনো পোড়া বিহারে কাঠ কয়লা সরানো হয়নি। সবই আগের মতো পড়ে আছে। এ সব নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাল প্রার্থনা হয়েছে পোড়া এসব বিহারে।
অন্য দিকে উখিয়া থেকে আমাদের সংবাদদাতা হুমায়ূন কবির জুশান জানিয়েছেন, সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত বিহারেও ফানুস ওড়েনি। তিনি সেখানকার একজন বৌদ্ধ নেতা মিলন বড়–য়াকে উদ্ধৃত করে জানান, তারা এবার কোনো ফানুস ওড়াবেন না বলে গোড়াতেই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি কার্যকর করেছেন। প্রতিবাদী মোমবাতি প্রজ্বলন করেছেন সব বিহারেই। উখিয়াতে বিভিন্ন বিহারে হাজারো মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে। কামনা করা হয়েছে শান্তি।
আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মানুরাগীদের মধ্যে এ বছর উৎসবের কোনো আনন্দই নেই। শোক আর কষ্ট বুকে নিয়ে তারা ধর্মীয় আচারগুলো পালন করে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম : চ্ট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিহারগুলোতে ফানুস উড়েছে। সরকারের সাথে আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে এসব অঞ্চলে প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হচ্ছে বলে সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মের নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, নিরাপত্তার বিষয়ে তারা আশ্বস্ত হয়ে সেখানে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করেছেন। ফানুস উড়িয়েছেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে এ উৎসব ধুমধামের সাথে পালিত হচ্ছে বলে অনলাইন সংবাদ বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে।
রাজধানী : রাজধানী ঢাকার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে প্রার্থনা হয়েছে। ভিড় ছিল বৌদ্ধদের। তবে সবাই বলেছেন রামু, উখিয়াসহ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে হাঙ্গামা হয়েছে এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। তারা এ বছর ‘বুকে বড় কষ্ট নিয়ে’ উৎসব করছেন উল্লেখ করে কমালাপুর বৌদ্ধ বিহারের প্রার্থনা করেছেন বলে ইপ্সিতা বড়–য়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ কষ্ট শোক সইবার নয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×