somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লির লাড্ডু পর্ব ১ (ছবিসহ ব্লগ)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈদের তিন দিন আগেই প্রমান সাইজের একটা গরু বাসায় হাজির। এ নিয়ে লংকা কান্ডা। সন্দেহের তীর আমার দিকে। আত্মিয়স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া পড়শি সবার মুখে একই কথা। কি ব্যাপার বাচ্চুর আব্বা? পোলার সমন্ধ করলেন, বড়লোক বেয়াই পেল্লাই সাইজের গরু পাঠিয়ে দিলো আর আমাদের একবার জানাবার প্রয়োজন মনে করলেন না?

বাবা মা দুইজনেরই মুখ ভার ! এদিকে আমার দশা ত্রিশোংকু। মেয়ে দেখলাম না, কথা হলো না, ওইদিকে আমার বিয়ের কথা চারিদিকে চাউর !

সব রহস্যের অবসান ঘটলো ঈদের আগের রাত্রে। যে কয়জন গরু নিয়ে এসেছিলো, ওদের একজন একটা রহস্যময় চিরকুট দিয়ে গিয়েছিলো। যার মধ্যে লেখার ঈদের আগের রাতে একটা নির্দিস্ট ঠিকানায় হাজিরা দিতে হবে।

এত বড় গরু যে দান করতে পারে, সে য্যান ত্যান লোক তো নয়। অগ্রাহ্য করবো সে সাহসও কোথায়?

তাই চললাম সেই গন্তব্যে।



ওমা ! এ যায়গা তো আমার অনেক চেনা? এর আগেও দুই বার এসেছি। তো শামিম ভাই ভেতরে নিয়ে গেলেন।

"বসেন একটু ! ছাত্র নেতাদের সাথে আলাপ সেরেই কথা বলবেন উনি।"

আমার যে চরিত্র, তাতে কিছু না করে কি বসে থাকা যায়? তাই কান পাততেই হলো।

" এই শোন, এইবার গরু সস্তা দিতাছি, মাগার চামড়ার প্রত্যেকটা আমার চাই।"

"চামড়া দিয়া কি করবেন নেত্রি?"

" এত্ত খবরে তোগো কি কাম? একটা গরু ছাগলের চামড়াও যদি আমার হাত ফস্কায়, তাইলে তোগো খবরই আছে। পারলে চুরি করবি, হাইজ্যাক করবি মাগার চামড়া আমার চাইই চাই।"

বুবু কি ট্যানারি খুলবে নাকি? কি জানি বলা তো যায় না। ক্ষমতা পেলে অনেকেরই মাথা আউলিয়ে যায়।

"বাচ্চু ভাই, যান আপনেরে নেত্রি ডাকে।"

সিরিয়াস গম্ভির মুখে বুবু বসে আছে।

"গরু পছন্দ হইছে?"

" হ বুবু। মাগার কথা নাই বার্তা নাই, আস্তা গরু পাঠাইয়া দিলা যে?"

" আমি না বুইজ্যা শুইনা কিছু করি না। কারণ তো একটা আছেই।"

" তা তো ঠিকই। মাগার এত্ত বড় গরু, জবাই দেওন কাটা ছিলা এই সবের লোক পামু কই?"

" দুরো বলদ ! ছাত্রলিগের কয়টা ক্যাডার পাঠাইয়া দিমু নে। কয়েক ঘন্টায় সব কমপ্লিট !"

"ওহ তাইলে তো ঝামেলাই নাই। এলায় কও এই ছোট ভাইয়ের উপর কি হুকুম !"

"তোরে দিল্লি পাঠামু।"

"দিল্লি? আমি? ক্যান?"

"তোগো পেয়ারের ভাবিসাব যে দিল্লি যাইতেছে, সেই খবর রাখোছ?"

"কিন্তু হের যাওয়ার লগে আমার কি সম্পর্ক?"

"উফফ ! তুই না মাঝে মাঝে বলদা বলদা প্রশ্ন করোস। যাইতে কইছি যাবি !"

"কিন্তু আমি যে যামু, ভিসা ট্যাকা পয়সা? জানো না তো। ইন্ডিয়ান ফকিরন্নির পোলারা ভিসা দেওনের সময় যে নকসা করে, মনে হয় হ্যারা আম্রিকা হইয়া গেছে।"

আমার শেষ কথাটি শুনে মনে হয় বুবুর মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল।

"তুই এক্ষুনি আমার চোখের সামনে থেইকা দূর হ ।"

আমি আর বাচ্চু নেই। হয়ে গিয়েছি নিরাপত্তা বাহিনীর এলিট গ্রুপের একজন সদস্য। ভাবিজানের নিরাপত্তা রক্ষায় তার সাথেই দিল্লি যাচ্ছি। বলা বাহুল্য শেষ মুহুর্তে বুবুর মাথা ঠান্ডা হওয়াতে আমার মাথাখানি বেচে গিয়েছে। শুধু তাই না, পাসপোর্ট ভিসা প্লেনের টিকেট এমন কি ৩০ হাজার টাকা হাতখরচও আগাম পেয়ে গিয়েছি।

এই সব ঝামেলা সহ্য হয়? কয়েকদিন আগেই তো চীন থেকে ঘুরে এসেছিলাম। এখন কই পেটপুরে গোস্ত খেয়ে দিন রাত ঘুম দেবো, তা না। বুবুর বায়না, ভাবির উপর নজরদারি করতে তার সাথে যেতে হবে।



সস্তা এয়ারলাইন্সের সস্তার টিকেট। ক্ষমতায় না থাকলে জাক জমক যৌলুশ সব কিছুরই কমতি ! ভাবিকে দাওয়াত দিয়ে এই সস্তা এয়ারলাইন্সে চড়াচ্ছে ! নাহ এদের আত্মা আর বড় হলো না।

এয়ারপোর্টে আমার তো ঝামেলা হয়নি। হওয়ার প্রশ্নও আসেনা।


ওইদিকে ভাবি আর তার সফর সঙ্গিদের উপর কাস্টম আর ইমিগ্রেশনের বিশেষ আদর যত্ন। মহিলা পরিসদ, জাতিয় মানবাধিকার সংস্থা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিসদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ঘাদানিক, দুদক, বাআল, যুবলিগ, ছাত্রলিগ, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রি সমিতি, আওয়ামি চামচা ব্লগারস ফোরাম ইত্যাদি বিভিন্ন সংগঠনের ক্লিয়ারেন্স আছে কি নাই, সেই ক্যাচালে প্লেন ছাড়ে ছাড়ে অবস্থা !

অবশ্য দিল্লির একটা ফোনেই কয়েক মিনিটেই সব ম্যানেজ হয়ে গেলো।

এমন ফকিরন্নি মার্কা বিমান আকাশে উড়তে পারবে কিনা, পারলেও কতক্ষণ উড়তে পারবে এই ভাবনা ভাবতে ভাবতে চড়ে বসলাম। যা থাকে কপালে।



ইসস ! এরা কি খুজে পেতে সব অকশন রিজেক্টেডগুলিকেই এয়ারহোস্টেস বানিয়েছে? যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা। আর ডাট কি ? এমন ভাব যেন আমরা সব গানা থেকে আসছি। ডাকলে শুনে না।

পিপাসা লেগেছিল। বললাম পানি দিতে। বলে কি না পানি নাকি কিনে খেতে হবে ! তাও ইন্ডিয়ান রুপিতে। আরে কি বলদা কথা ! প্লেনের মধ্যে রুপি পাবো কোথায়? কিন্ত মাথারির এক কথা। ইন্ডিয়ান রুপিতে ছাড়া পানি মিলবে না । শেষ মেষ ডলারের কথা শুনে রাজি হলো। এক বোতল পানি, দাম নিলো ১০ ডলার ? এ যে চিটারের দেশে পা দেবার আগেই চিটারি।

প্লেনে বেশির ভাগই ইন্ডিয়ান। ওদের দেশে আমাদের স্থপতি ভুয়া মামলায় ৮ বছর জেলে থাকে। আর ইন্ডিয়ান শালারা আমাদের দেশে মহা আনন্দে আর নিরাপত্তায় আমাদেরই দাড়ি ধরে টানে। আসলেও আমরা আর মানুষের বাচ্চা নেই।

"ও দ্যাওড়া।"

জানি না অসৎ সর্গের কারণেই কি না, প্রথমে শুনেছিলাম ল বর্গিয় কিছু একটা। প্লেনে এমন একটা অশ্লিল শব্দ তাও মহিলার কন্ঠে?

" ও দ্যাওড়া এই দিকে শুনে যাও।"

উঠে গেলাম।

" কি খুব বুবুর ন্যাওটা হয়েছো? বুঝি বুঝি ! সবাই ক্ষমতা আর টাকাওয়ালাদের সম্মান করে, ভাজ দেয়। আজকে আমার ক্ষমতা নেই, টাকা নেই, তাই বাচ্চুও গোয়েন্দাগিরি করতে আসে?"

খাইছে ! ভাবি দেখি বুবুর চেয়ে এক কাঠি বেশি। না আসলেও আওয়ামি লিগের মধ্যে বিএনপি জামাত ঢুকে গিয়েছে। নইলে যে খবর আমি আর বুবু ছাড়া কেউ জানে না, সেই খবর ভাবি পর্যন্ত পৌছালো কেমনে?

"দেখেন ভাবি , আমি ১৪,৭১০ টাকা বেতনের সামান্য সাংবাদিক। বুবুর হুকুম অমান্য করার মত জোর কি আমার আছে? তাছাড়া আপনেরা যেমনে মিডিয়াফোবিয়াতে ভুগেন, আপনেদের মনে রাখলেও লাভ কি? ক্ষমতায় গেলে তো ব্যাবসা, ব্যাবসায়ি আর টাউট ছাড়া অন্য কেউরে চিনেনও না। বুবু অন্তত মাসে মাসে সবাইরে মাসোয়ারা দেয়।"

"এই ছোকড়া , তোমার স্পর্ধা তো কম না। তুমি ভাবি ভাবি করছো কেন? ম্যাডাম বলতে পারো না?"

চোখে তুলে দেখি মোকাদ্দেশ সাহেব ! এই ব্যাটা বিএনপির যে কি আমি বুঝে পাই না। অথচ যেইখানেই ভাবি যায়, এই ব্যাটা আছেই।

"আপনেরে তো কোনদ্দিন শুনি নাই ম্যাডাম কইতে। আপনে আগে কন, এর পর আমি কমু !"

জোকের মুখে নুন পড়লো।

" আহা মোকাদ্দেশ সাহেব, থামেন তো। হাস্না আমার ননদ। সেই সুত্রে বাচ্চু আমার দ্যাওড়া। ভাবি তো বলতেই পারে। "

"আচ্ছা দ্যাওড়া বলো তো, তোমার বুবুর মতলবটা কি?"

"হ ! আমি কই, আর ওইদিকে আমার চোদ্দ গুস্টি চোদ্দ শিকের ভিতর ঢুকুক ! "

"আহা বলোই না দ্যাওড়া ! আমি থাকতে কোন সমস্যা হবে না।"

"আপনের নিজেরই বারো দুকুনে ২৪ বাজাইয়া দিছে বুবু ! কি করতে পারছেন কন ভাবি? এরচেয়ে আমারে কিছু জিগায়েন না। আপ্নের ঈমানে লাগে কইলাম।"

আরো কথা বার্তা হতো? কিন্ত পেছনের সিট থেকে আমাদের তরিকুল ভাই ক্রমাগত হেচকি তুলতে থাকায় সমস্যা হয়ে গেলো। তিনি পানীয় রসিক মানুষ। মনে হয় ইন্ডিয়ান পচা পানীয় তার সহ্য হয়নি।



অবশেষে দিল্লি বিমান বন্দরে পৌছালাম। আগে নাম ছিল পালাম। এর পর নাম দিয়েছে ইন্দিরা গাধি বিমান বন্দর। আনন্দবাজার পত্রিকারও আক্কেল বলে কিছু নাই। গান্ধিকে বানিয়েছে গাধি ! আমার কি? ইন্দিরা গাধি হোক কিংবা কুত্তি তাতে আমার কি যায় আসে?

চলবে ...
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×