somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় কুরবানি

২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘তড়াগড়ি উঠছুনো, ও টিপু’ – ঠিক এইডাকেই ঘুম ভাঙতো ঈদের ভোরে। যার মানে তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে ওঠার তাগাদা। চট্টগ্রামের দাদাবাড়ীতে প্রায় সবাই আমাকে টিপু নামেই চেনে। ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সব সদস্যই দাদাবাড়িতে বর্তমান; আর তাও যদি হয় ৭ চাচার পরিবার - আলহামদুলিল্লাহ্! যাক সে কথা; ভোর থেকেই পুকুরঘাটে বিশেষকরে বাড়ির টয়লেটে আর গোছলখানায় ভিড়ের হিড়িক। তাই একটু আগেভাগেই দাদী তার আদরের বড় ছেলের পুত্রকে উঠাতে ব্যস্ত; পাছে না আবার ভিড়ের মধ্যে শামিল হয়। ওদিকে দাদা ফজরের নামায শেষে ওজু-গোছল করে ঈদগাহে চলে গেছেন। সকাল ৭টাই গ্রামের বাড়ির ঈদ-জামাত। গ্রামের বিশাল ঈদগাহ। দাদা একটু আগেভাগেই চলে যান ঈদগাহ পরিষ্কার করতে। মসজিদ থেকে চুল পরিষ্কার মরা-গাধা ওঠানোর শামিল হলে না জানি ঈদগাহ পরিষ্কার করা কত বড় সওয়াবের কাজ - তাও আবার বয়স যখন ৭০+। যাক, আমিই প্রথম। আমার পরে যারা চাপকলে আসবে তাদের উপর দখলদারিত্ব করার এটাই মোক্ষম সুযোগ – বাংলাদেশ বলে কথা! যাই হোক - চটজলদি গোছল সেরে নূতন পান্জাবি-টুপি পরে যেইনা ঈদগাহের পথে পা বাড়াবো অমনি দাদীর পিছুডাক – আতর লাগানোর জন্য।

ঈদগাহে গিয়ে দেখি দাদা প্রথম কাতারের ঠিক মাঝ বরাবর বসে আছেন। তাঁর পাশে বসার কোন উপায় নেই; তাঁর বাল্যবেলার প্রবীণ বন্ধুরা তাঁর সাথেই উপস্থিত। ঈদের নামায শেষে সবাই কোলাকুলিতে ব্যস্ত। আমিও কিছুসংখ্যক কোলাকুলি সেরে কুরবানির উদ্দেশ্যে বাড়ির পথে রওয়ানা হই। পাড়ার ইমাম সাহেব ইয়া বড় রাম-ছুরি নিয়ে দাড়িয়ে, পাশে উপস্থিত দলবদ্ধ কসাই সমাজ। তাদের হাতেও মোটামুটি সাইজের সব চাপাতি – কেউ কেউ আবার তাতে শান্ লাগাতে ব্যস্ত। তড়িহড়ি করে বলদ মাটিতে শুয়ানোর কাজে নিয়োজিত হলাম। আমাদের আবার ৩টি বলদ জবাই হয়; ৭ চাচার সংসার নিয়ে কথা! আমরা কাজিনরা সবাই কাটাকুটিতে মন দিলাম। কে কার আগে বলদের রানের মাংস রান্নাঘরে নিতে পারে তার কম্পিটিশান শুরু হল বলে। এভাবেই একসময় দেখতে দেখতে ৩টি বলদই রান্নাঘরে চালান হয়ে যায়। চামড়াগুলো গ্রামের মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। মাদ্রাসা কমিটি গ্রামের জবাইকৃত সব বলদের চামড়াগুলো ভালদরে বিক্রি বাবদ অর্থ মাদ্রাসা ফান্ডে জমা করেন।

মা-চাচিরা রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আগের রাতের বানানো চালের রুটিগুলো দাদী পরম যত্নে মাটির চুলোতে সেঁকতে থাকেন। গ্রামের গরীর মানুষগুলো দলবেঁধে আসতে শুরু করে আর আম্মা অত্যন্ত সতর্কতার সহিত সমভাবে সবাইকে মাংসের ভাগ-ভাটোয়ারা করে দেন। প্রথম পর্বের মাংস রান্না শেষ হওয়া মাত্রই বাড়িতে এলান পড়ে। আমি সমেত দাদা-দাদীর সব নাতী-নাতনীরা চালের রুটি আর মাংসের পেছনে লেগে যায়। যদিও সবার প্রথম মাংসের টুকরো দাদার পরে আমিই স্বাদ নিই। দাদীর পারশিয়াল্টির সাইড বরাবরের মতই আমার দিকেই থাকত।

বোধশক্তি হবার পর থেকে কুরবানির ঈদগুলো একরকম এইভাবেই কাটছিল। প্রতি ঈদেই কিছু না কিছু অভিজ্ঞতার মাঝে নিজেকে আর বাড়ির মানুষগুলোকে নূতনভাবে আবিষ্কার করছিলাম। আজ প্রায় ৬বছর ধরে পড়াশুনা আর প্রফেশানের তাগিদে দেশ থেকে দূরে। দাদাকে হারিয়েছি প্রায় ১২বছর হল। গত ৬বছরে চালের রুটির দেখা মেলেনি এই প্রবাসে। দাদীও চলে গেলেন ২বছর পেরোল এই মাসে, তাও আমার জন্মদিনের ঠিক আগের রাতেই। প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে ঈদ আসে; আসে আমার জন্মদিনও। নেমে আসে এক বুক নিঃসঙ্গতা আর প্রিয় দাদী হারানোর হাহাকার। পৃথিবী থেকে দোয়াদাতারা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। আরও ব্যস্ত থাকতে চাই; চাই নিজেকে ভুলে থাকতে, নাইবা খেলাম চালের রুটি, ফিরে পেতাম যদি দাদীকে! আই মিস্ ইউ দাদী – প্রিয়জনকে পেয়ে হারানো বুঝি এই জীবনের সবচেয়ে বড় কুরবানি!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×