somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তাজুল ইসলাম মুন্না
সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ালেখা করছি। পাশাপাশি অনলাইন জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করছি দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে। ব্লগে ফেরার ইচ্ছা বহুদিনের। একদিন হয়তো হুট করে আবারও রেগুলার হয়ে যাবো।

Common Gender - - - সমাজের বোঝা নয়, সমাজের অংশ...

২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে থেকে সকল Common Gender'দেরকে কথা দিলাম।

আপনাদেরকে দেখে কখনও উল্টোদিকে হাটবোনা। এই সমাজ হয়তো আপনাদেরকে "মানুষ" হিসেবে যেই সম্মানটুকু প্রাপ্য তাও দেয়নি। কিন্তু আমরা বর্তমান প্রজন্ম অবশ্যই দেবো। আপনাদের অধিকার আদায়ের এই আন্দোলনে আমাদেরকে সবসময় পাশে পাবেন। কারণ আমরা জানি, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে কখনও অবহেলা করা যায় না। শুরুতেই বলে দিচ্ছি, যেই "হিজরা" শব্দটিকে আপনারা গালি হিসেবে ব্যবহার করেন সেই শব্দটিকে অন্তত আমি এখন থেকে আর গালি হিসেবে ব্যবহা করবোনা!

আর সবাইকে বলছি, হিজড়া বলে তাদেরকে দূরে সরিয়ে দেবেন না প্লিজ। তারা হিজরা তো কি হয়েছে? বিয়ে করতে পারে না.... এটাইতো?? অনেক পুরুষ বা নারী আছে যারা বিয়ে না করে সারাজীবন একা একা পার করে দেয়। এইভাবে যদি হিসাব করেন তাহলে তারাও কি হিজরা?

না। তারা তা নয়। ইসলাম ধর্মের কথা বললে, আমরা "আশরাফুল মাখলুকাত"। সৃষ্টির সেরা জীব! আমাদেরই একটা অংশকে আমরা কিভাবে অস্বীকার করবো? এটা করা কি সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের মানায়?

আচ্ছা! বাদই দিন নাহয় ধর্মকে, সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই বিবেচনা করুন! আপনি খেটে খেতে পারেন। কারণ আপনি পুরুষ! আপনার ঘরের মেয়েটা হয়তো একসময় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। আপনি স্বপ্ন দেখতে পারেন। মানুষ হিসেবে এটা আপনার অধিকার। তারাওতো মানুষ.... তাদের কি স্বপ্ন নেই? ভালোবাসা নেই?? মায়ের জন্যে কি তাদের মন কাঁদে না???

অবশ্যই কাঁদে। একজন মায়ের অনুভুতি আমি জানি না। তবে এইটুকু জানি যে একজন মা কখনও তার শিশু ছেলে নাকি মেয়ে, নাকি কমন জেন্ডারের তা নিয়ে মাথা
ঘামায় না। তার কাছে "সন্তান" পরিচয়টাই সবার উপরে। এই সন্তানকে তিনি ১০মাস ১০দিন গর্ভে ধারণ করেছেন। যেমনটা ছেলে বা মেয়ে হলে ধারণ করতে হতো। তিনি এই সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করিয়েছেন। বড় করেছেন। সামান্য কিছু হরমোন! সামান্য...... এই কয়টা হরমোন কি একজনের পুরো জীবনটাকে তছনছ করে দিতে পারে?? হয়তো পারে, কিন্তু আমরা এই কয়েকটা হরমোনের কারণে কাউকে ত্যাগ করবো না!

তাদেরকে বুঝুন, তাদের সেই বুকফাঁটা আর্তনাদ শুনুন। তারপর নিজে থেকেই বিচার করুন। তাদেরকে কিভাবে আপনি ফেলে দেবেন এ সমাজ থেকে? সেই কথাটা মনে আছেতো?

"""সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।"""

করুণা দেখাবেন না তাদের প্রতি। তাদের করুণা দেখানোর মতো যোগ্যতা আপনার আমার নাই। এটা স্রষ্টাই কেবল করতে পারবেন। তাদেরকে করুণা না, বরং সমর্থন দিন। সাহস দিন।। যাতে করে তারা একটা সুন্দর জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে।

আর ততোদিন? আমরা ১৫কোটি জনতা। তারা চাঁদা তুলতে আসেতো? হাজার টাকা চায়? শত টাকা চায়?? চায় না! তারা চায় দুই, পাঁচ, দশ টাকা। লাখ টাকার গাড়ি কিনতে পারেন, পকেটের ক্রেডিট-ডেবিট কার্ডটায় সবসময় হাজার হাজার টাকা থাকে। একটা শার্ট কিনতে পারেন দুই হাজার টাকা দিয়ে। আমাদের সমাজের এই অংশটাকে মাত্র ৫টা টাকা দিতে পারবেন না? দিয়েই দিন না ভাই! তারাতো খেটে খেতে পারে না। তাদের পেটটা কি পেট না? তাদের বেঁচে থাকার জন্যে কি খাবার লাগে না? লাগেতো!

মাত্র কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা মনে পড়লো। যতোদূর মনে পড়ে বৃষ্টি হচ্ছিলো। একজনকে দেখলাম বাঙালী মেয়েদের অফিস পোশাক পড়ে আসছে। তার চোখে-মুখে ভয়! আশেপাশের প্রত্যেকটা মানুষকে দেখে তার ভয়। আমার পাশ দিয়ে গেলো.....মনে হলো ওড়নার নিচে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! কারওয়ান বাজারের আন্ডারপাসের ঘটনা সেটা। দরজা থেকে বের হয়ে ঘুরে যখন যাচ্ছিলো তখন একনজরের জন্যে তাকলো। তার সেই অসহায় দৃষ্টি দেখে আমার মনে হচ্ছিলো আমি মরে যাই। আমার দেশের একজন মানুষ এতোটা অসহায় হবে? সেতো কোনো পাপ করেনি। হিজরা হয়ে জন্মগ্রহণ করা কি পাপ?? আমার দিকে যখন তাকালো তখন আমি বুঝতেও পারলাম না যে আমার ডান হাতটা কপাল পর্যন্ত চলে এসেছে। "স্যালুটের" ভঙ্গিটা হাসিমুখে বেশ ভালো করেই দেখালাম। হঠাৎ মনে হলো তার সমস্ত ভয় কেটে গেলো। বিষাদময় চেহারা গিয়ে সেখানে হালকা একটু হাসির আভাস দেখতে পেলাম। সে সেই হাসিটুকু নিয়ে হারিয়ে গেলো জনসমুদ্রে। ।

তাদের একটা অংশ প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমাজের একটা অংশের সাথে। নিজেকে মাঝেমধ্যে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হয়। নিজেকে অন্তত "ছেলে" বলে পরিচয় দিতে পারি। কিন্তু সাথে সাথে একটা দ্বায়িত্ববোধও এসে ভর করে। তাদের জন্যে কিছু একটা করার ইচ্ছা! এই ইচ্ছাটুকুতে বাস্তবায়িত করতে আপনার হাজার টাকা খরচ করে ক্যাম্পেইন করতে হবে না। শুধুমাত্র নিজেকে প্রস্তুত করুন। ঐ যে আগেই বললাম, তাদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন। তাদের খোঁজ-খবর নিন। এইটুকুই তাদের জন্যে যথেষ্ট!

আমার স্কুললাইফে এক বন্ধু ছিলো। নাম মেরাজ, আরোও ছিলো সামীর, আবির। । । সামীর আর মেরাজের কাজে আমরা অনেকসময় হাসাহাসি করতাম। কিন্তু এখন যদি ও সামনে থাকতো। তাহলে ওর সেই কাজের জন্যেই ওকে স্যালুট করতাম! যেই হিজরাদের দেখে অনেকের কলিজায় পানি থাকেনা সেই হিজরাদের সাথে সে গল্প করতো। তাদের খোঁজ-খবর নিতো। ওর মধ্যে কোনো সংকোচ ছিলো না। বন্ধু, সত্যি করে একটা কথা বলছি। তাদের সাথে এই বন্ধুত্বটাকে হয়তো তোর চাইতে ভালো করে আর কেউ অনুভব করতে পারবে না।

জানি যে এটা একটা অনেক দীর্ঘ প্রসেস। বেশিরভাগ ছেলেরা মেয়েদেরকেই "মাইয়া মানুষ" এর দৃষ্টিতে দেখে, শুধুমাত্র "মানুষ" হিসেবে দেখতে পারে না!! তাহলে কমন জেন্ডারদের সম্পর্কে তাদের কি ধারণা থাকে?

যেতে চাই না সেই প্রসঙ্গে। শুধু চাই; আমার দেশের প্রত্যেকটা মানুষ যেনো ভালোভাবে, মিলে-মিশে থাকতে পারে। মানুষের ভেতর যেনো সেরকম আন্তরিকতা থাকে। একের বিপদে যাতে দশজন এগিয়ে আসে! সে ছেলে হোক, মেয়ে হোক...কিংবা হোক, কমন জেন্ডার!

-ভালো থাকুক, নিরাপদে থাকুক আমার দেশের প্রত্যেকটা নারী, প্রত্যেকটা পুরুষ, প্রত্যেকটা "কমন জেন্ডার"। এর পর থেকে "কমন জেন্ডার" শব্দটাকে আর ব্যবহার করবোনা। ব্যবহার করবো "মানুষ" শব্দটিকে । । । । ।


-তাজুল ইসলাম মুন্না
২৮/১০/২০১২


ফেসবুক স্ট্যাটাসটার লিঙ্ক


বিডিনিউজ২৪ ব্লগে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৩৩
২১টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×