somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেনো আমি আল্লাহ্‌কে বিশ্বাস করি(?!)

২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনারা যারা নাস্তিক অর্থাৎ যারা স্রষ্টার অস্তিত্তে বিশ্বাস করেন না তাদের জন্যই মূলত আমি এই লেখাটি লিখেছি । আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ দয়া করে আপনারা এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং কোথায় কোথায় অর্থাৎ কোন বিষয়টি নিয়ে আপনারা আমার সাথে একমত হতে পারছেন না দয়া করে যথাসম্ভব মার্জিত এবং শালীন ভাষায় তা উপস্থাপন করুন । যৌক্তিক মন্তব্য এবং আপত্তি অবশ্যই সাদরে গ্রহণ করা হবে ইনশাআল্লাহ্ । আমি বা আপনি যে মতাদর্শেই বিশ্বাসী হই না কেন একটি কারণই কিন্তু আমাদের মধ্যে এক হওয়ার জন্য যথেষ্ট । আর সেই কারণটি হচ্ছে আমারা “মানুষ” বা আমরা সবাই মানব জাতীর অন্তর্ভুক্ত । যাই হোক, এবার মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক । আস্তিক, নাস্তিক বিতর্ক নতুন কোন বিষয় নয় । সত্যি বলতে কি শুধু মাত্র স্রষ্টার অস্তিত্ব কিংবা ধর্মের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও এমন আরও অনেক বিষয় রয়েছে- কি সামাজিক, কি রাজনৈতিক, কি অর্থনৈতিক, কি আন্তর্জাতিক এমন কি নৈতিকতার মতো মৌলিক বিষয়াবলী যা নাকি মানব অস্তিত্তের সৌন্দর্য এবং ভিত্তি মূলের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাও বিতর্কের বৃত্তে বন্দি হওয়া থেকে এতটুকু ছাড় পায়নি ! সমকামিতার (Homosexuality) মতো স্পর্শকাতর ইস্যুটিও কারো কারো মতে নৈতিকতা বিরোধী নয় ! আবার কারো কারো মতে এটি চরম অনৈতিক ও বিকৃত আচরণের অন্তর্ভুক্ত ! আমরা যারা বিজ্ঞান মনস্ক বা বিজ্ঞানের প্রতি ব্যাপক আস্থাশীল তারাও মাঝে মাঝে বিজ্ঞানের অনেক সিদ্ধান্ত এবং মতবাদ নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব ও দোটানায় পড়ে যাই । বিজ্ঞানের ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বা মত পরিবর্তন নতুন অথবা অভিনব কোন বিষয় নয় । অনেকেই হয়তোবা বলবেন, বিজ্ঞান সব সময় নির্ভুল ফলাফলের প্রত্যাশী তাই এমনটি হওয়াটাই স্বাভাবিক । আমি বলবো, হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন । কিন্তু বিজ্ঞান যেহেতু অবিরাম তার অন্বেষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে তাই অন্তত বিজ্ঞানে “শেষ” বলে কোন কিছু নেই । বিজ্ঞান কখনোই দাবী করে না যে বিজ্ঞান সব কিছু জেনে ফেলেছে বা জানার মতো আর কিছুই তার বাকি নেই ! এমন দাবী বিজ্ঞানের আসল সৌন্দর্যের ও সম্পূর্ণ বিপরীত । আমারা যারা পরম সত্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা বিজ্ঞানের কাছ থেকে অনেক কিছু পেলেও শেষ কথাটি বা শেষ উত্তরটি কিন্তু কখনোই পাবোনা হয়তোবা । মহাবিশ্বের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের কারোর পক্ষেই সম্ভব না । সমষ্টিগত ভাবে হয়তোবা মানব জাতি একদিন না একদিন সত্য জানতে পারবে । কিন্তু প্রতিটি মানুষের জন্য যা জানা আবশ্যক তার জীবদ্দশায় বা সময়কালে, তার জন্য যদি তাকে অনন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তা অবশ্য সম্ভব ও নয় । কারণ মানুষের আয়ু খুব সীমিত । এই যদি হয় প্রকৃত অবস্থা, তবে এতো বিজ্ঞান বিজ্ঞান করে লাভ কি ? যখন দরকার তখন যদি কেউ তার প্রয়োজন পূরণ করতে না পারে পরবর্তীতে তা অর্জন করেই বা কি লাভ ? তাই বলে আমি বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা বা অবদানকে এতটুকুও অস্বীকার করছিনা । সোজা কথা আমি যা বলতে চাই তা হোল, বিজ্ঞান আমাদের সব কিছুর শেষ অবস্থা বা পরিনিতি সম্পর্কে চূড়ান্ত কোন নির্দেশনা প্রদান করতে পারে না । বিজ্ঞান আজ যা বলছে গভীর পর্যবেক্ষণ, গবেষণায় হয়তোবা কাল তা ভুল বলে প্রমাণিত হতে পারে । আর বিজ্ঞান কিন্তু মানুষের অর্জিত জ্ঞানের-ই একটা অংশ মাত্র । এখানেই আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ধরুন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যদি কখনো মানব জাতীর আবির্ভাব না ঘটতো বা মানুষ নামক কোন প্রাণীর অস্তিত্বই না থাকতো তাহলে কি কোনদিন “স্রষ্টা” নামক স্বত্বার অস্তিত্ব থাকতো না ? মানুষের চিন্তা চেতনায় “স্রষ্টা” নামক স্বত্বার অস্তিত্ব আছে বলেই কি স্রষ্টার অস্তিত্ব বা ধারণা সত্য ? যদি এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড না থাকতো, যদি না থাকতো মানুষ নামক কোন সৃষ্টি; তাহলে কি “স্রষ্টার” কোন অস্তিত্বই থাকতো না ? ব্যাপারটা কি অনেকটা এরকম না যে, মানুষের ভাবনায় “স্রষ্টার” অস্তিত্ব আছে বলেই “স্রষ্টার” অস্তিত্ব সম্ভব আর মানুষের ভাবনায় বা চিন্তায় “স্রষ্টার” অস্তিত্ব কোনো দিন না থাকলে “স্রষ্টার” অস্তিত্ব ও অসম্ভব !!!

ব্যাপারটি আসলে পুরোই হাস্যকর ! মানুষের থাকা না থাকার সাথে আসলে স্রষ্টার কোন সম্পর্ক নেই । যখন কোন কিছুই ছিল না স্রষ্টা তখনও ছিলেন আবার যখন কিছুই থাকবে না তখনও শুধু মাত্র স্রষ্টাই থাকবেন । আসলে, এখানে মানুষকেই একমাত্র সবকিছুর মানদণ্ড বা মাপকাঠি ধরে নেওয়া হয়েছে । এখানেই আমার প্রশ্ন! এই যে, মানুষই যে একমাত্র সবকিছুর মানদণ্ড এই দাবীর পক্ষে কি কোন প্রমাণ আছে ? মানুষ যা কিছু ভাবতে পারে বুঝতে পারে তাই সত্য আর মানুষ যা কিছু তার জ্ঞান-বুদ্ধিতে ধারণ করতে পারতে না তার কোন ভিত্তি নেই বা তাই মিথ্যা !? এই দাবীর পক্ষে কোন প্রকার প্রমাণ হাজির করা কি সত্যিই সম্ভব ? মানুষ কেন্দ্রিক তথা মানব জ্ঞান কেন্দ্রিক এই চিন্তা-চেতনাই আজ মানব জাতীকে এক হওয়া সত্ত্বেও এক হতে দিচ্ছে না । মানুষ সব কিছুই তার নিজের অর্জিত জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে যার দরুন একে অন্যের সাথে অনেক ব্যাপারেই একমত হতে পারেনা । অনেক মানুষই তার নিজেকে দিয়ে অন্যকে বিচার করে থাকে । তার নিজের কাছে যেটা সঠিক মনে হয় অন্যের কাছে তা যতই ভুল প্রমাণিত হোক না কেন, সে কেবল নিজেরটাকেই সঠিক বলে মনে করে তা-ই আঁকড়ে ধরে থাকে । এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সত্য যে আসলে কোনটা আর মিথ্যাই বা কোনটা তা বোধকরি নির্ভুল ভাবে বের করা আর সম্ভবপর হবে না ! খাঁটি সোনা চিহ্নিত করার জন্য মানদণ্ড হিসেবে কষ্টি পাথরের সহায়তা নেওয়া হয় আর এভাবেই খাঁটি সোনা খুঁজে বের করা হয় । আমাদের মানব জাতীর কাছে কি এমন মানদণ্ড আছে, এমন কষ্টি পাথর কি আছে যার সাহায্যে আমরা পরম সত্যের সন্ধান পাবো ? পরম সত্যকে খুঁজে পাবো ??? হ্যাঁ অবশ্যই আছে । আর এই মানদণ্ডই হচ্ছে আমাদের সুস্থ (!?) আকল বা বিবেক। এই বিবেক কিন্তু “বস্তুর” আকস্মিক বা কাকতালীয় আবর্তন-বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়ে যায় নি । এই বিবেক মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এক মহামূল্যবান সম্পদ । এমনই এক কষ্টি পাথর যার স্পর্শে ঘন কালো আঁধার মুহূর্তেই দূর হয়ে যায় । আলোয় আলোয় ভরে যায় ভুবন । সব শেষে আমি বলতে চাই যে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় আমরা মানুষেরা বলতে গেলে কিছুই না ! তাই আমাদের বিবেকের এই স্বীকৃতিকে সামনে রেখে আসুন আমরা আমাদের অসহায়ত্ব ও দায়বদ্ধতাকে অকপটে মেনে নেই । মহান স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ করি । জ্ঞানের দম্ভ আর অহংকার করে কোন লাভ নেই । আমরা যতটুকু জানতে পারি ঠিক ততটুকুর উপরেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি । আমাদের জানার পরিধি ও আসলে খুবই সীমিত । আমাদের এই সিমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ করাটাই আমাদের কাছে আমাদের বিবেকের প্রকৃত দাবী । এই দাবীকে অস্বীকার করা চরম সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছুই না । আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন । (আমিন)

"তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।" (সুরা বাকারা :৩২)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৫৭
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×