বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কখনোই ইসলাম বিরোধী কোনও কার্যকলাপ বরদাশত করেননা। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ইসলাম বিরোধী চলচ্চিত্র তৈরি করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়, তখন খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই এর প্রতিবাদ স্বরূপ ‘ইউটিউব’ নামক সামাজিক ওয়েব সাইটটি বন্ধ করে দিয়ে প্রমান করা হয়েছে, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মতো কোনও বিষয় বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেননা। একইভাবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের রামুতে বৌদ্ধ দেবালয়ে হামলার ঘটনায় এদেশের মানুষেরা যার-পর-নাই বিক্ষুব্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশের মানুষ মূলত সূফী ইসলামের প্রতিই অধিক অনুরক্ত। কারন, সূফী ইসলামে আছে খোদা ভক্তির পাশাপাশি মানব সম্প্রদায়ের প্রতি ভালবাসার এক অনন্য সাধারণ শিক্ষা। আর একারনেই হয়তো, বাংলাদেশের মুসলমানদের সিংহভাগ মাজার এবং পীর-ফকিরের দরবারের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। গোটা বাংলাদেশ জুড়েই অসংখ্য পীর-আউলিয়ার মাজার আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথেই যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। যদিও প্রতিক্রিয়াশীল একদল ধর্মীয় রাজনিতিক গোষ্ঠীর কাছে মাজার প্রথা রীতিমতো অশুদ্ধ। নিকট অতীতে ওইসব লোকদের কারনেই সিলেটের হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের ঐতিহ্যবাহী গজার মাছ বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে ঘটানো হয় বোমা হামলা। ওই প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী চেয়েছে, বাংলাদেশে থেকে মাজার প্রথা উৎখাত করতে। কিন্তু, সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের অনুভুতির জায়গাটায় ওরা সামান্য ফাটল ধরাতে পারেনি – পারবেনা কোনদিনও! মাজার অথবা পীর-আওলিয়াদের প্রতি বিশেষ ভক্তির মাঝেও বাংলাদেশের মানুষ কখনোই কোরআন বিরোধী কোনও কর্মকাণ্ডকেই বরদাশত করেনা। আল্লাহ’র একাত্মবাদে কাউকেই অংশীদার হতে দেননা এদেশের মানুষেরা। কিন্তু, এসব বাস্তবতার মাঝেও অত্যান্ত অবাকভাবে সুরেশ্বরের পীররা ইসলামের নামে ভয়ংকরভাবে খোদা বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন বছরের-পর-বছর ধরে। ওদের এসব কার্যকলাপের প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত কেউ করেছেন বলে শুনিনি।
সুরেশ্বর দরবারের প্রথা অনুযায়ী, ভক্তরা ওই দরবারের পীর অথবা পীরজাদাদের সিজদা করে থাকেন। এমনকি, সুরেশ্বর দরবারের পীরের কবরে ভক্তদের সিজদা করতে হয়। কিন্তু, পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ব্যাতিরেকে আর কাউকেই সিজদা করা হারাম। এধরণের কাজ মানুষকে শিরক অথবা কুফুরির দিকে ঠেলে দেয়। কোরআনের সুস্পষ্ট এসব বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সুরেশ্বর দরবারের পীরেরা তাদের মুরিদান এবং ভক্তদের কোরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে সিজদা করতে বলেন। আর ভক্তরাও অবলীলায় এসব মেনে নিয়ে পীর এবং পীরের কবরকে সিজদা করে যাচ্ছেন নিয়মিতভাবেই।
সুরেশ্বর দরবারের পীরেরা কোরআন-হাদিসের অপ-ব্যাখ্যা দিয়ে ওদের অনুসারীদের পবিত্র রমজান, ইদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা প্রচলিত নিয়মের বাইরে পালন করিয়ে থাকেন। যদিও ইসলাম ধর্মের এসব পবিত্র দিন এবং সময়গুলো সম্পূর্ণভাবে চন্দ্র মাসের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু সুরেশ্বরী পীরেরা নিজেদের গোঁয়ার্তুমির বসে চন্দ্র মাসের অনুসরণ না করে, সৌদি আরবের অনুসরণে রমজান এবং ঈদ উদযাপনে ওদের অনুসারীদের শুধু উদ্বুদ্ধই করেননা, বরং এসব ভুল আচার চাপিয়েও দেন। আর পীরদের চাপানো এসব প্রথা অনুসরণ করতে গিয়ে ভক্ত-অনুসারিদের ধর্মীয় কর্তব্যে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে অবিরত। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেম-ওলামা বার-বার সাবধানী বানী উচ্চারণ করার পরও সুরেশ্বরী পীরেরা এসবের প্রতি কোন তোয়াক্কাই করেননা।
সুরেশ্বর দরবারের পীরদের চাপিয়ে দেয়া সিজদা প্রথা সম্পর্কে বাংলাদেশের আলেম-ওলামারা বলেন, আল্লাহ্ ব্যাতিরেকে কাউকেই সিজদা করা হারাম। এসব যদি কেউ করেন অথবা করতে উদ্বুদ্ধ করেন, তাহলে মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব হোল সর্ব শক্তি দিয়ে এসবের প্রতিবাদ করা এবং এধরণের কুফুরি কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা। তারা মনে করেন, সুরেশ্বর দরবারের পীর এবং তাঁদের মাজারগুলোকে সিজদা করানোর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের পাশাপাশি এসব জঘন্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দেশের সাংবাদিক সমাজ এবং গণমাধ্যমগুলোর সোচ্চার ভূমিকা নেয়া আশু জরুরী।