somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যের কলিকাল

০৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল লেখালেখির ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছে যে, ফেসবুক-ব্লগের কল্যাণে এখন সবাই লেখক। যিনি ভাল উপস্থাপক বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক তিনিও লেখক, যিনি নাট্যজন বা সংগীতজ্ঞ তিনিও লেখক। এর ফলে আমার মত যেসব হতভাগারা ছোটবেলা থেকেই লেখক বা কবি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছে, তাদের একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে- এই আর কি!
আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো জটিল, আমার বন্ধুরাই ভাল বলতে পারে। আমার কথনের চেয়ে আমার লেখনী অনেক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। কাকতালীয়ভাবে মাস-খানেক আগের “ছুটির দিনে”-তেও বিশিষ্ট লেখক ও জ্যোতিষী কাওসার আহমেদ চৌধুরী আমার মত কন্যারাশির জাতকদের এই রকম-ই কিছু একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যা কিছু মাথায় আসে, তা লিখে ফেলতে; কারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনা এলোমেলো হলেও, সেগুলোকে লেখায় রূপ দিতে গেলে তা সংগঠিত হয়ে আসে।
মানুষ যখন-ই কোন লেখা পড়ে, সবার আগে লেখার শিরোনাম পড়ে। লেখার শিরোনাম যদি আকর্ষণীয় না হয়, চলতি বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, খুব বেশী দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়, অথবা কোন শিক্ষামূলক/উপদেশমূলক লেখা হয়, তবে পাবলিক সেটা প্রথম দেখাতেই ফেলে দেয়। এজন্য আজকালকার লেখকেরা যেকোন লেখাকে সাধারণত কিছুটা কম্পোজিট-রূপ দেয়, সহজ কথায় যাকে বলা চলে “রিমিক্স”!
যেকোন লেখা পড়ার ক্ষেত্রে মানুষের দ্বিতীয় নজড়টা থাকে লেখকের নামের দিকে। তবে পাঠকের মতপার্থক্য-ভেদে কবি-লেখকের নামের প্রতি আকর্ষণের-ও বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। এই যেমন লম্পট পাঠকেরা পড়ে একধরণের লেখা, উন্মাদ পাঠকেরা পড়ে একধরণের লেখা, নিষ্ঠুর পাঠকেরা পড়ে আরেকধরণের লেখা। আজকাল তো পড়াপড়ির ব্যাপারটা অনেক কম, ফেসবুকে প্রিয় মানুষের যেকোন স্ট্যাটাসেই ধুমাধুম লাইক আর ব্লগে ধুমাধুম শেয়ার, পড়ে ক’জনে? তবে অনলাইনে লেখকেরা খ্যাতি যতটা সহজে পান, আর্থিক ভিত্তিটা অত দ্রুত গড়ে উঠে না।
সাহিত্য যুগের সমাপ্তি হয়েছে বোধহয় অনেক আগে। এখন চলছে স্বয়ংক্রিয়তার যুগ। মানুষ তার আশেপাশের সবকিছুকে স্বয়ংক্রিয় করতে গিয়ে নিজেকে চারদেয়ালের মাঝে হারিয়ে ফেলছে। রং-তুলি আর ক্যানভাসের জায়গা দখল করে নিচ্ছে পেইন্টিং সফটওয়্যার, দোয়াত-কালির সেই শৈল্পিক ছোঁয়ার নিদারুণ অভাব দেখা যায় ওয়ার্ড-প্রসেসরে লেখা পাণ্ডুলিপিতে, তবুও কিছু মানুষের মাঝে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বেঁচে থাকে।
কবি-লেখকদের শ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলোর পিছনে বেশীরভাগ সময়েই থাকে তাদের হতাশা-ক্ষোভ, দুঃখ-বেদনা, জীবনের যত বিয়োগাত্মক পরিণতিগুলো। আর অনেক ক্ষেত্রেই তারা তাদের জীবদ্দশায় যোগ্য মর্যাদা পান না। আশেপাশের মানুষ তাদের নিয়ে তামাশা করে, জীবনের টাকার দৌড়ে তারা বরাবরই পিছিয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে কত বছর যে তাদের লিখে যেতেই হয়, তা না হয় নাই বা বললাম।
তবে আজকাল চতুর সাহিত্যমনা বা সংস্কৃতিশীল মানুষেরা একধরণের রাজনৈতিক লেবাস পড়ে চলাফেরার ব্রত নিয়ে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ ও সামাজিক মর্যাদা তৈরীর একটা খুঁটি দাঁড় করিয়ে ফেলতে পেরেছেন। আমাদের দেশের রাজনীতির মাঠে তারা প্রগতিশীলতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুঁজি করে ভালই ভিত্তি তৈরী করে চলেছেন। এসব লোকেরা যতদিন বাংলাদেশের মাটিতে থেকে নিজেদের একচ্ছত্রভাবে এদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারক-বাহক বলে ঘোষণা করবেন, ততদিন শুধু এই দেশের শিল্প-সাহিত্যই কলুষিত হবে না, দূষিত হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের অন্তর-ও। মনে রাখা উচিত, সাহিত্যে স্বার্থপরতার ঠাঁই নেই, হিংসার ঠাঁই নেই, বিদ্বেষের ঠাঁই নেই।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×