somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন আমি একজন বিশ্বাসী ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সত্যি বলতে কি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথার পটভূমি নিয়ে নাস্তিকদের আলোচনা বা তর্ক-বিতর্কে যোগ দিতে আমি সাচ্ছন্দ্যবোধ করি না । কেন ? আমি কি তবে অকাট মূর্খ ? প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি নিজের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারি না বলে কোন অদৃশ্য সত্ত্বার কাছে নিজেকে সোপর্দ করে শান্তি পাই ? মৃত্যুতে আমার অস্তিত্বের চির অবসান আমি মেনে নিতে পারি না ? আপনারা আমাকে যা খুশি আখ্যা দিতে পারেন তবে কেন আমি এমন তার ব্যাখ্যা আমাকে উপস্থাপন করতে দিন ।
আচ্ছা, আপনি কোন ডিভাইস ব্যবহার করে এ লেখা পড়ছেন ? সেলফোন, ট্যাব, ডেস্কটপ না ল্যাপটপ ? কেন আপনার এত অপশন থাকতে এটিকেই বেছে নিলেন ? আপনি কি আমাকে এটার সার্কিট ডায়াগ্রাম এঁকে দেখাতে পারবেন ? এটার প্রত্যেকটি অ্যাপ্লিকেশন কিভাবে প্রোগ্র্যাম করা হয়েছে তা আমাকে বোঝাতে পারবেন ? পারবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি একজন ইলেক্ট্রনিক্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হন । তবে আপনি ইলেক্ট্রনিক্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার না হলে কি এই ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না ? তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম আমরা আমাদের জীবনের জন্য যেসব বিমূর্ত বা মূর্ত উপাদান ব্যবহার করি সেসব থেকে উপকার পেতে তার যথাযথ ব্যবহারের নিয়ম জানলে ও তা মেনে চললেই যথেষ্ট; সেজন্য আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া জানা আবশ্যিক নয় কিন্তু জানলে ভাল ।
তবে ? তবে কিভাবে বুঝবেন কোন ডিভাইসটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল ? আপনার আয়ত্ত্বের মধ্যে যেটি আছে তার ইউজার ম্যানুয়াল ভাল করে পড়ুন । ফিচারগুলো জানুন । আপনার চাহিদা কি কি সে ব্যাপারে নিশ্চিত হোন । তারপর দেখুন ফিচারগুলো আপনার চাহিদাগুলো পূরণ করে নাকি । এক্সপার্টদের পরামর্শ নিন । প্রয়োজনে ক’দিন ব্যবহার করে দেখুন । এতকিছুর মধ্যে কোন কিছু আপনার নজর এড়িয়ে গেল কি ? হ্যাঁ, সেটি হল বিশ্বাস । কোম্পানিকে বিশ্বাস, ইউজার ম্যানুয়ালকে বিশ্বাস, বিক্রেতাকে বিশ্বাস, এক্সপার্টদের বিশ্বাস । আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া বা মেকানিজম না জানলে এই বিশ্বাসের ঝামেলা পোহানো ছাড়া উপায় নেই । নিজে ব্যবহার করেও কি বিগ পিকচার ক্যাচ করা যাবে ? সামনে আরও কী কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা কি জানেন ? তবে এবার কোমর বেঁধে মেকানিজম নিয়ে জ্ঞান আহরণ করবেন ? করুন । ইলেক্ট্রনিক্স পড়ুন । কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুন । আপনার শরীরের উপর কী প্রভাব ফেলবে তাও জানতে হবে । ফিজিওলজি, অ্যানাটমি পড়ুন । নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে প্রতিনিয়ত- সে সম্পর্কেও জানুন । জানতে জানতে জীবন শেষ হয়ে যাবে, সিদ্ধান্ত নেয়া আর হবে না । অতঃসম্পর কী দাঁড়ালো ? হাঁদারাম আমি আর ঐ জ্ঞানী, যুক্তিবাদী নাস্তিক সেই একই বস্তু ‘বিশ্বাসে’র উপর মুখ থুবড়ে পড়ছি ।
অনেক বিশ্বাসীদের দেখা যায় তার ধর্মের অমুক বিষয়কে বিজ্ঞান স্বীকৃতি দিয়েছে, অমুক সেলিব্রেটি তার ধর্ম গ্রহণ করে ধর্মকে মহিমাণ্বিত করেছে- এসব নিয়ে মাতামাতি করতে । এটা কি তার বিশ্বাসের দুর্বলতা প্রকাশ করে না ? বিজ্ঞান তো নিয়ত পরিবর্তনশীল । আজকের থিওরিকে কালকের থিওরি বাতিল করে দিবে । যা একযুগের ফেইরি টেইল, তা আরেকযুগের বাস্তবতা । তাই ধর্মের কোন বিষয়কে বিজ্ঞান স্বীকৃতি দিলে তা নিয়ে এটা মনে করে বিশ্বাসীর আনন্দ করা উচিত যে, মনুষ্যজাতির জ্ঞানের অমুক দিকটি গ্রহণযোগ্য হল । এখানে জ্ঞান অর্জনকে নিরু‌‌‌ৎসাহিত করছি না । বরং ‘বিশ্বাসে’র গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করেছি ।
প্রকৃত বিশ্বাসী কখনই ভাববে না আগে ধর্মীয় প্রথা পালনের যৌক্তিকতাটা বুঝে নেই, তারপর না হয় পালন বরা যাবে । কারণ তার বিশ্বাসের ভিত্তিই হলো মানবজাতির সমষ্টিকৃত জ্ঞান সকল প্রশ্নের উত্তর জানে না, মানবজাতির জ্ঞান আহরণ চলতেই থাকবে । তাই তাকে অন্য কিছুর উপর নির্ভর করতে হবে । কোন বিষয়ে সন্দেহ জাগলে ধৈর্য্য ধারণ করবে, তা পালন করে যাবে এবং সেই সাথে তার কার্যকারণও অনুসন্ধান করে যাবে । কারণ এ অনুসন্ধান তার ধর্মকেই সমৃদ্ধ করবে । তাছাড়া সঠিক পথের সন্ধান স‌ধাৎ অনুসন্ধানেই মিলে । সৎ অনুসন্ধান কী ? এমন পথের খোঁজ যা শুধু তার প্রবৃত্তিজাত চাহিদা পূরণ করে তেমন নয়, এমন পথ যা সামগ্রিক কল্যাণেরই পথ নির্দেশ করে । যদি তার অনুসন্ধান হয় আন্তরিক ও স‌মনৎ এবং কোন সত্যপ্রভু থেকেই থাকে তবে তার সঠিক পথের সন্ধান পাওয়াই কি স্বাভাবিক নয় ? তার কোন বিষয়ে সন্দেহ জাগল আর সে তা পালন না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকল- তবে সে তার সম্প্রদায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করল, তার সম্প্রদায়ের প্রতি ইনজাস্টিস করল । কারণ তা যে ধর্মই হোক না কেন- ঐশ্বরিক অথবা মানবসৃষ্ট- তা কোন সমাজের সকল উপাদানের মধ্যে সম্পর্কের উপরই প্রতিষ্ঠিত ।
বিজ্ঞান ও ধর্মের কনফ্লিক্ট থাকতেই পারে এবং তাই স্বাভাবিক । দুজনার বিকাশের পথ আলাদা । তাই একজনের ব্যাপারে অপরের মাতব্বরি ঠিক নয় । তবে দুজনার মধ্যে আদান-প্রদান অবশ্যই চলতে পারে । এই সত্যটি বহু আগে জালালউদ্দীন রুমী বলে গেলেও আজকের সমাজে এটি অনুধাবনের বড়ই অভাব । একপ্রান্তে তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ- যাদের নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা হয় মার্ক্সিজম, গান্ধীবাদী, পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তিতে এবং তা দ্বারাই তারা নিজেদের বিশ্বাসকে বিচার করে, মনে করে ধর্মশিক্ষায় কিছুই নেই; অপরপ্রান্তে ধার্মিক সমাজ- যারা বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয় শিক্ষাকে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় মনে করে । সুখের বিষয়, বর্তমান যুগের তথ্যপ্রবাহের অবাধ গতিতে এ ব্যবধান অনেকটাই ম্লান ।
সবশেষে একটি সংগৃহীত কৌতুক । ধর্মে বিশ্বাসী হওয়াটাই সেইফ । কারণ যদি সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তা থেকে থাকে, তবে তো বিশ্বাসী হলে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা বেশী । আর যদি না থাকে, তবে তো টেনশনই নেই ।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×