somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে এই মাওলানা !! কী তার পরিচয় - ২

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গর্ভণর মুনায়েম খান তার অহংকার ও প্রবল ক্ষমতা সত্বেও এ নির্ভিক মাওলানাকে সমীহ করে চলতেন, চলতে বাধ্য হতেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময় তিনি এ মাওলানার মেধা ও মেজাজ দেখে অবাক হয়েছিলেন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় মুনায়েম খান পাশ করতে পারেননি, আর এ মাওলানা তিন ঘন্টার পরিবর্তে এক ঘন্টা উত্তর লিখে লেটারমার্ক পেয়েছিলেন। তার এ ঘোর তখনও কাটেনি।

ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের মুখের উপর যে মাওলানা ‘ধোঁকাবাজ’ বলে হনহন করে বেরিয়ে আসতে পারতেন, তার সাহস ও আত্মশক্তি দেখে অন্যরাও তটস্থ থাকতেন।

বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। দুর্গত লোকদেরকে সাহায্যের নামে মুনায়েম খান তার গভর্ণর হাউসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। দেশের নামকরা গায়ক গায়িকা ও নৃত্যশিল্পীদেরকে ডেকে পাঠালেন। ৫০০ ও ১০০০ হাজার টাকা মূল্যের টিকেট ছাড়া হল বিনোদনের বাজারে।

গভর্ণর হাউসের সামনে সুবিশাল মাঠে প্যান্ডেল লাগিয়ে জাঁকজমক আয়োজন করা হল। যথাসময়ে সব আয়োজন সুসম্পন্ন হল।
অনুষ্ঠানের দিন দেশের সকল দৈনিকে গভর্ণরের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন ছাপা হল। প্রথম পৃষ্ঠায় নজরকাড়া বিজ্ঞাপন। দুর্গতদের জন্য সাংস্কৃতিক আয়োজন।

বিত্তশালী বিনোদনপ্রেমীরা এমন দুঃখজনক সময়েও নাচগানের আয়োজনে মত্ত হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তৎকালের আদমজী, ইস্পাহানী, বাওয়ানী গ্র“পসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এ আয়োজনের টিকেট পেতে হুমড়ী খেয়ে পড়ল।

সকালের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে মাদরাসার অফিসে এসে বসলেন মাওলানা। পত্রপত্রিকা পড়া তার প্রতিদিনের রুটিন। দেশ বিদেশের চলমান নানা ইস্যু ও সংবাদ তিনি মনোযোগ দিয়ে পড়েন। হালচাল বোঝার চেষ্টা করেন।

ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষগুলোর জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে আছেন। তবুও আজকের দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায় এ বিজ্ঞাপন দেখে তার মুখ কালো হয়ে গেল।

পাশে বসা লোকদেরকে দেখিয়ে বললেন, আল্ল¬াহর আযাব এ ঘূর্ণিঝড়। এমন দুঃসময়ে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আর গভর্ণর সাহেব এ কি করছেন? এমন দূর্গত বিপদের সময়ে নাচ-গানের আয়োজন! এতে আল্ল¬াহর সাথে আরও বেয়াদবী করা হচ্ছে না?

তিনি তার সেই কামরায় ফিরে এলেন। তার ছোট টেবিলটি সামনে নিয়ে বসলেন। কাগজ কলম হাতে নিলেন।

গভর্ণরকে চিঠি লিখলেন। সাহায্যের নামে এ অনাচার তিনি যেন বন্ধ করেন, তাই সতর্ক করে উপদেশ দিলেন। একজন প্রকৃত আলেম হিসেবে শাসককে বোঝানোর যে গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে, তিনি তা পালনের চেষ্টা করলেন।

চিঠিটি শেষ করে তিনি একজন ছাত্রকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, চিঠিটি পড়ে দেখ, কোন সংশোধন লাগলে করে নিয়ে আস।
তরুণ ছাত্র কিছু শব্দের পরিবর্তন করে তার হাতে ফেরত দিলে তিনি খুশী হলেন। নিজের লেখায় স্বীয় ছাত্রের সংশোধন ক্ষমতা দেখে তার পিঠে হাত রেখে দুআ করলেন।

যোহরের নামাজ শেষ। মানুষজন মসজিদ থেকে বের হচ্ছে। যার যার কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছে সবাই। মাওলানা এক লোককে ডেকে বললেন, এ চিঠিটি নিয়ে যাও। গভর্ণরের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা কর।

মাওলানার চিঠি পেয়ে গভর্ণর নড়েচড়ে বসলেন। এ আয়োজন নিয়ে তার বোধোদয় হল। তিনি তখনই সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেন। তারপর..

সেদিন বিকেলের আলো অন্ধকারে মিশে যাওয়ার আগেই রেডিও থেকে ভেসে আসছিল জরুরী ঘোষণা, ‘সবার জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, গভর্ণর হাউসে আয়োজিত আজকের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজন অনিবার্য কারণবশতঃ বাতিল করা হল।’

রাজনীতি এবং পূর্ব পাকিস্তানের নানা বিষয় নিয়ে টালবাহানা করছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। এ ইস্যুতে ক্ষোভ তৈরী হচ্ছিল বাংলার মানুষের মনে মনে। মাওলানা শুধু এসব ধোঁকাবাজি নয়, ইসলাম নিয়েও পাক শাসকদের তামাশা দেখে ব্যথিত হচ্ছিলেন। তিনি তাদের সাথে সব রকমের সুসম্পর্কের ইতি টানছিলেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীপরিষদের প্রভাবশালী সদস্যরা মাওলানার সাথে দেখা করে তার মনোভাব পরিবর্তন করাতে অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পদ ও পদবী এবং নগদ হাদিয়া তোহফার প্রলোভন তো আছেই, কিছুতেই তাকে নমনীয় করা যাচ্ছে না। ইসলাম এবং এ দেশের যে কোন অধিকার আদায়ে তিনি হুংকার ছেড়ে শাসকদের মসনদ কাঁপাতেন। তৎকালের পুরো বাংলায় তার মতো এমন প্রভাবশালী অথচ নির্লোভ বিনয়ী মাওলানা আর একজনও ছিল না।

তার আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রবল। ইসলামের নামে যে কোন ভন্ডামী তিনি প্রবল গর্জনে প্রতিরোধ করতেন। জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী প্রথম প্রথম এ মাওলানার কাছে আসতেন। তার সাথে সখ্য বজায় রাখতেন। ধর্ম নিয়ে তার নিজস্ব উদ্ভট ব্যাখ্যা তখনও মাওলানার চোখে পড়েনি। যখন পড়েছে, তিনি তাকে সংশোধন করতে বলেছেন। এতেও যখন মওদুদী নিজের মতের উপর জোর করে থাকতে চাইল, মাওলানা তার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। মুখের উপর তা জানিয়ে দিলেন। যথাসময়ে তা সবিস্তারে আসবে।

১৯১৫ সাল। বাঘুডিয়া হাইস্কুল। এ স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে বেশ কয়েকজন ছাত্র পড়াশোনা করছে। হিন্দু-মুসলমান সবাই এখানকার ছাত্র। হেড মাস্টার একজন হিন্দু মশাই। এ স্কুলের এত ছাত্রের মধ্যে হেডমাস্টারের চোখ সারাক্ষণ অনুসরণ করে একজন মুসলমান ছাত্রের দিকে। তার চালচলন, কথা বলার বিনয়, ভদ্রতা ও মেধাশক্তি দেখে তিনি বিস্মিত। তার সততায় এখানকার শিক্ষকরাও বিমুগ্ধ।

এ বিস্ময় ও ভালোলাগা চেপে রাখতে না পেরে হেডমাস্টার একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেই ফেললেন সবার সামনে, এ বালকটিকে আমার এত বেশি বিশ্বাস ও আস্থার পাত্র মনে হয় যে, আমি নিশ্চিত, ওর হাতে পরীক্ষার আগের দিন সবগুলো প্রশ্নপত্র তুলে দিলে ও সেসব খুলেও দেখবে না। কাউকেও দেখাবে না। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারি।’

হাইস্কুলের সব শিক্ষক ছাত্র এ সত্য মাথা নেড়ে সায় দিল, তার সততা ও ব্যবহারে তারাও আনন্দিত। সেবছরও এ বালক পুরো স্কুলে সবার চেয়ে বেশি নাম্বার পেয়ে প্রথমস্থান ধরে রেখেছিল।

প্রথম পর্ব........
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:০৪
১৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×