somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টমর্টেম ১: রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন

২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথাটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয়ও বটে। কিন্তু সকল জনপ্রিয়ই সত্য নয়। আবার সকল সত্য জনপ্রিয় নয়। কেউ রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে তাকে পরে পস্তাতে হয়। তাই মাথা ঢান্ডা রেখে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য এই পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু কথাটি কি সম্পূর্ণ ঠিক? আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।
মানুষ মাত্রই রাগ, ক্রোধ ইত্যাদি আবেগ নিয়ে বেড়ে ওঠে। কেউ একটুতে রেগে যায়, আবার কেউ সহজে রাগেন না। কারও রাগ সহজে পানি হয়ে যায়, আবার কেউ একবার রেগে গেলে খবর আছে। অনেকে আছেন বদমেজাজি, সবসময় রেগে থাকে। আবার কেউ আছেন কিছুতেই যেন রাগেন না। একেবারে মাটির মানুষ।
প্রবাদটিতে না রাগতে বলার অর্থ যদি করা হয়, রাগ হলেই তা দমন করে ফেলতে হবে, তাহলে তা ভুল হবে। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের অর্থ ক্রোধ দমন নয়। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ বলতে আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ বোঝায়। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যেন আপনি অতিরিক্ত আচরণ না প্রদর্শন করে বসেন সেটিই বিবেচ্য বিষয়। এটি তো গেল একটি বিষয়। অন্যদিকে পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী রাগ প্রদর্শন করারও প্রয়োজন হতে পারে, যখন কিনা আপনি একটুও রেগে নেই।
রাগ যেহেতু একটি আবেগ, সেহেতু রাগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। কারণ, আবেগ কখনওই স্থির সিদ্ধান্তে পৌছতে পারে না এবং ক্ষণে ক্ষণে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে থাকে। আচরণে রাগের প্রদর্শন কতটুকু হবে তা হবে যুক্তি নির্ভর।
এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরুন বাবা-মা ও এক ছেলে শিশু নিয়ে একটি একক পরিবার। কোন কারণে শিশুটির কোন আচরণে তার বাবা খুব রেগে গেছেন। মনে হচ্ছে কষে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেন। কিন্তু তিনি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করলেন। তারপর তার ছেলে শিশুটিকে তার এই আচরণ যে সমীচীন হয়নি, তা বুঝিয়ে বললেন। আরো বললেন পরে যেন এরকম না করে। দশ বছর পর, ঐ শিশুটি এখন কৈশোরে পদার্পণ করেছে। একদিন তার বাবার সাথে সে একটি বেয়াদবী করে ফেলল। কিন্তু যে কারণেই হোক তার বাবা সারাদিনের পরিশ্রমে খুব ক্লান্ত। ছেলের আচরণে তার যেন কোন প্রতিক্রিয়াই হচ্ছে না। অথচ সে বুঝতে পারছে যে তার ছেলের আচরণটি ঠিক হয়নি। এজন্য তাকে শাসন করা দরকার। সে তার ছেলেকে খুব রাগ দেখাল এবং ধমকাল। তার আচরণে এধরণের বেয়াদবী ভবিষ্যতে আর সহ্য করা হবে না বলে কড়া ভাষায় শাসিয়ে দিল।
উপরে দুটি ঘটনাতে আমরা ছেলেটির বাবার দু রকম মানসিক অবস্থা দেখলাম। ছেলেটির বাবা দুটি ঘটনাতে ভিন্ন রকম আবেগ সত্ত্বেও ছেলের ভালর জন্য যে আচরণ যুক্তিযুক্ত সে আচরণই করেছে। তার রাগ, ক্রোধ এর কারণে তার আচরণ প্রভাবিত হয়নি। ছেলেটির বাবা উভয় ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিত্বশীল মানুষের পরিচয় দিয়েছে। এবং দ্বিতীয় ঘটনাতে আমরা দেখলাম বাবা তার রাগ না হওয়া স্বত্বেও কিভাবে রাগী আচরণ করেছেন।

এমন হতে পারে আপনি হঠাৎ করে খুব রেগে গেছেন। কিন্তু সেখানে আপনার রাগ প্রদর্শন যুক্তিযুক্ত নয়। আবার কখনও আপনার কোন রাগই হচ্ছেনা, তা স্বত্বেও আপনাকে রাগের অভিনয় করতে হতে পারে। আপনি আচরণে রাগ দেখাবে কিনা তা পরিস্থিতিই বলে দেবে।
আপনি কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু রেগে যাবেন বা রাগ প্রদর্শন করবেন তা নির্ধারণ করবে আপনার যুক্তি, পরিস্থিতি, সময় জ্ঞান ইত্যাদি, রাগ বা ক্রোধ নয়। আর এক্ষেত্রে সবসময় যে আপনাকে রাগ দমন করতে হবে, এটাও ঠিক নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষে আপনাকে না রাগলেও রাগ দেখাতে হতে পারে। কিন্তু রাগ যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে। বরং আপনিই যেন রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন‘ কথাটি হওয়া উচিত ‘রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালেন তো হেরে গেলেন।‘ অথবা ‘অনিয়ন্ত্রিত ভাবে রাগলেন তো হারলেন।‘
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×