somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌতুক নামের কৌতুক

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পবিত্র ইসলামধর্মে বিবাহ একটি সামাজিক চুক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। তাই একজন স্ত্রী বা পাত্রীকে কখনও ভোগের সামগ্রী বা যৌনদাসী হিসেবে দেখেনি ইসলাম বরং তাকে দিয়েছে জীবনসঙ্গিনীর নজিরবিহীন মর্যাদা। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ‘নারীরা পুরুষের পোশাকস্বরূপ আর পুরুষরাও নারীদের পরিচ্ছদস্বরূপ!’

এজন্যই কোনো নারীকে জীবনসঙ্গিনী করার ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে, সকল আনুষ্ঠানিকতার পূর্বেই অফেরতযোগ্য বাধ্যতামূলক জামানত হিসেবে স্ত্রীকে সুনির্দিষ্ট মোহরানা (আংশিক হলেও) প্রদান করতে হবে। অন্যথায় বিবাহ কোনোক্রমেই সিদ্ধ ও শুদ্ধ হবে না। এক্ষেত্রে পাত্রীর পক্ষে পুরুষকে উল্টো যৌতুক দেয়ার প্রশ্নতো একেবারেই অবান্তর! বিয়েতে পাত্র-পাত্রীর গুণ হিসেবে শুধুমাত্র অর্থ-সম্পদকেও অগ্রাধিকার দিতে বলেনি ইসলাম। বরং দাম্পত্যসুখের পূর্বশর্ত হিসেবে নারী-পুরুষের সচ্চরিত্র ও খোদাভীতিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে যে, ’’তোমাদের (নারীদের) নিকট যখন কোনো পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, যার চরিত্র ও খোদাভীতির ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট, তবেই তোমরা কোনো নারীকে তার কাছে বিয়ে দাও। অন্যথায় পৃথিবীতে গন্ডগোল ও বিপর্যয় দেখা দেবে (তিরমিযি)।‘‘ অর্থাৎ চরিত্রহীন পুরুষকে বিবাহ করা কিংবা বিবাহের ক্ষেত্রে যৌতুক বা ধন-সম্পদকেই প্রাধান্য দেয়ার ফল কখনো শুভ হতে পারেনা। এক্ষত্রে রীমাহত্যা ও খুকু-মনিরের কাহিনীই এর জ্বলন্তপ্রমাণ। অথচ আমাদের সমাজে বিয়ের নামে যা হচ্ছে, তা অধিকাংশক্ষেত্রেই নাটকীয়তা, স্ববিরোধিতা ও ধর্মহীনতায় ভরপুর।

প্রসঙ্গত দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় অবাধে ‘পাত্র-পাত্রী চাই’ শিরোনামে বিবাহপ্রতিষ্ঠানগুলো যৌতুকলেনদেনের যে প্রকাশ্য ব্যবসায় চালাচেছ, সেদিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অথচ ইসলামধর্ম একজন বিবাহযোগ্যা নারীকে এতদূর পর্যন্ত মর্যাদাবতী করেছে যে, বিবাহের সময় পাত্রীকে নয় বরং পাত্রপক্ষকেই যেতে হয় পাত্রীর বাসায় এবং বাধ্যতামূলকভাবে মোহরানা পরিশোধসাপেক্ষে আবার পাত্রীকে সসম্মানে তুলে নিয়ে আসতে হয় নিজের ঘরে। তাছাড়া যেখানে আংশিক বা সম্পূর্ণ মোহরানা পরিশোধছাড়া একজন স্বামী তার নববধুকে স্পর্শ করার কোনো অধিকারই অর্জন করেনা, সেক্ষেত্রে আমরা সমাজে দেখি তার সম্পূর্ণ উল্টোটাই!

তবে মোহরানানির্ধারণের ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে, যদিও মোহরানার অপরিশোধিত অংশ বিয়ের পর পরিশোধের সুযোগ ব্যতীত পুরুষকে আর কোনো ছাড়ই দেয়নি ইসলাম। নবী সাঃ বলেন, ‘মোহরানার শর্তটি পূরণ করা সর্বাধিক অগ্রগণ্য যার কারণে তোমরা নারীর সতীত্বের অধিকার লাভ করেছো (বোখারি ও মুসলিম)।’ আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে সেটি, যা সর্বাধিক সহজ হয় (নাইলুল আওতার)।’

সুতরাং এটা পরিস্কার যে, মোহরানা হচ্ছে পুরুষের পক্ষ থেকে বিবাহেচ্ছুক নারীকে প্রদত্ত এককালীন অফেরতযোগ্য জামানত, যা থেকে পুরুষের মুক্তি পাবার কোনোই সুযোগ নেই। অন্যদিকে, বিয়েতে যৌতুকদেয়া-নেয়া যেমন হারাম ও দন্ডনীয় অপরাধ। আমাদের দেশের বিবাহের ক্ষেত্রে মারাত্মক একটি ভুলধারণাও প্রচলিত আছে যে, নারীর মোহরানার অধিকারটি যেনো কেবলমাত্র বিবাহবিচ্ছেদের সঙ্গেই সম্পৃক্ত আর যৌতুক বস্ত্তটি যেনো বরের পক্ষে তাৎক্ষণিক আদায়যোগ্য এক ন্যায্য অধিকার।

আমাদের সমাজে বিরাজমান মারাত্মক যৌতুকব্যাধি ও বিবাহে নারীর মোহরানানির্ধারণের বর্তমান স্বরূপটিও কিন্তু বেশ লক্ষ্যণীয়। এমনকি এদেশের দুরাবস্থা বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে, পবিত্র বিবাহের ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গিনী বা অর্ধাঙ্গিনী বলতে সাধারণত যা বুঝায়, আজকাল বর বা বরপক্ষ সেই অর্থে একজন নারীর জন্য উতলা না হয়ে বরং যৌতুকের জন্যই পাগলপারা হয়ে থাকে। অপরদিকে, কন্যাপক্ষও আভিজাত্যরক্ষা কিংবা মেয়ের ভবিষ্যৎ বিবাহবিচ্ছেদের আশংকায় বিবাহবৈঠকেই অস্বাভাবিক মোহরানানির্ধারণের চেষ্টা করে থাকে।

সত্য বলতে কী, আমাদের সর্বাত্মক নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই আজ বিয়ের মত পবিত্র ধর্মীয় বন্ধনের ক্ষেত্রেও ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিসহ চরম ধর্মহীনতার কালোথাবা বিস্তৃত হয়েছে। অর্থাৎ আজকাল পাত্রীর জন্য এত মর্যাদাপূর্ণ অধিকারস্বরূপ ফরজ মোহরানার ব্যাপারটা বিবাহের ক্ষেত্রে যৌতুকের মতোও গুরুত্ব পাচ্ছনা বরং লোকাচার হিসেবে কবিননামায় কাগুজে বাঘ হয়েই লিপিবদ্ধ থাকছে মাত্র। সেক্ষেত্রে যৌতুক নামের কৌতুকস্বরূপ দন্ডনীয় হারাম লেনদেনটি সেখানে শুধু মূখ্য হয়ে দাঁড়াচেছ না, বিবাহের মূল চালিকাশক্তিতেই পরিণত হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে বলে মনে হয়না। যে মোহরানা ধর্মত: ও আইনত: একজন নারীর জন্য আত্মরক্ষার রক্ষাকবচস্বরূপ, সেস্থানই আজ দখল করে বসে আছে সর্ববিধানে নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত সেই যৌতুক নামের সেই কৌতুক, কী দূভার্গ্য আমাদের? শুধু শহরকেন্দ্রিক শিক্ষিত সমাজই নয়, গ্রামীন ও অল্প-অর্ধশিক্ষিত সমাজেও যৌতুকের মহামারী অবাধেই চলছে। শুধু কি তাই, যৌতুকের কারণে শিক্ষিত-অশিক্ষিতনির্বিশেষে কত সংসার যে ভাঙছে, তার ইয়ত্তা নেই? এমনকি যৌতুকের কাত্মণে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নারীনির্যাতন শুধু নয়, অহরহ খুনও হচ্ছে কতশত নারী, যার নগণ্য অংশমাত্রই আমরা জানতে পারছি পত্রিকার পাতায়!

তবে এটাও অত্যন্ত লজ্জাজনক যে, আমাদের অভিভাবক ও পাত্র-পাত্রীদের মোহরানাসংক্রান্ত চরম অজ্ঞতার কারনেই আজ পুরুষের পক্ষে বাধ্যতামূলক পরিশোধযোগ্য মোহরানার স্থানটি দখল করে আছে যৌতুক নামের সর্বনাশা সংক্রামক ব্যাধিটি। সুতরাং নারীজাতি বিশেষত: বিবাহের পাত্রীরা যদি বিবাহের ক্ষেত্রে মোহরানানির্ধারণ ও তা আদায়ের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই সচেতন হয়, তাহলে যৌতুকপ্রথাটি লেজগুঁটিয়ে পালাতে বাধ্য হবে। পাত্রী যদি বিবাহ অনুষ্ঠানে মোহরানানির্ধারণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে সংক্রিয়-সচেতনভাবে উদ্যোগী ভূমিকা রাখে অর্থাৎ বিশেষ করে যৌতুকলোলুপ পাত্রকে মোহরানার ব্যাপারে কোনোরূপ ছাড়ই্ না দেয়, তাহলে পাত্রপক্ষকে যৌতুকের দাবি ছেড়ে দিয়ে পাত্রীর মোহরানার টাকা জোগাড় ও পরিশোধের ধান্ধাতেই গলদঘর্ম হতে হবে।

এজন্য সর্বপ্রথম পাত্রীর অভিভাবকদের পাত্রীর প্রাপ্য অধিকার হিসেবে মোহরানানির্ধারণ এবং তা পরিশোধসংক্রান্ত সমঝোতায় পাত্রীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে ও তার মতামতকেই অগ্রাধিকার দিতে শিখতে হবে। এতে ফলাফল অন্তত: এতটুকু দাঁড়াবে যে, পাত্রপক্ষ যৌতুকের পক্ষে আর শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবেনা এবং মোহরানার টাকা পুরোপুরি শোধ করতে না পারলেও আংশিক পরিশোধসাপেক্ষে পাত্রীর কাছে তাদের ঋণগ্রস্ত হয়েই থাকতে হবে। এমনকি সংসার চলাকালীনও যদি পাত্র বা পাত্রপক্ষ কখনো যৌতুক চায় ও নির্যাতন করে, তবে নীরবে নির্যাতন সহ্য না করে পাত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে আদালতে মামলাদায়েরপূর্বক মোহরানা আদায়ের ব্যবস্থা করা উচিৎ। এরফলেও পাত্রী এতটুকু সুবিধে পেতে পারে যে, মোহরানার টাকা পরিশোধের চাপে পড়ে হলেও পাত্রপক্ষ তার সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হতে পারে।

এক্ষেত্রে ইমাম বা বিবাহরজিস্টার কাজিরাও বিভিন্ন সামাজিক অষ্টুষ্ঠান যেমন মসজিদে, নামাজের জামায়াতে, বিবাহের খুৎবায় এবং বিবাহরেজিষ্ট্রির সময় মোহরানার সপক্ষে ও যৌতুকের বিপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে জোরালো ভূমিকাপালন করতে পারেন। বিয়েতে যৌতুকের লেনদেন থাকলে বা বাধ্যতামূলক মোহরানার টাকা পাত্র আদৌ পরিশোধ না করতে চাইলে তারা সে বিবাহপড়ানো এবং বিয়ে রেজিস্ট্রিও বর্জন করতে পারেন। এমনকি প্রয়োজনে বিষয়টি যেকোনভাবে তারা পুলিশের গোচরেও আনতে পারেন।










০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×