somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

কোরবানী ঈদ এবং আরও যা জানতে হবে

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈমানদার ব্যক্তিকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীনও হতে হয়। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, "মানুষ কি মনে করে আমি ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে, তাকে পরীক্ষা করা হবে না ?" ( আনকাবুতঃ ২) মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ- ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বলে পরিচিত হতে হলে তার জীবনের নানা পরীক্ষার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে মানবীয় বৃত্তির উৎকর্ষ সাধন করতে হয়। আর সে উৎকর্ষ সাধনের ধারাই অব্যাহত গতিতে চলেছে- হজ্ব কোরবানী তথা ইসলামী জীবন-বিধানের অন্যান্য স্তম্ভ গুলোর আনুষ্ঠানিক প্রতিপালনে। কলেমা এনে দেয় আকিদার মূল ভাব। সালাত ও সিয়াম দেহ ও আত্মাকে করে নির্মল; যাকাত আনে সমাজিক সাম্য- আর কোরবানী ও হজ্ব এনে দেয় আত্মত্যাগ ও আত্মবিসর্জনের অমোঘ উত্তরাধিকার ও বিশ্বজনীন কল্যাণধারা। পার্থিব ও আত্মিক উন্নতির বিভিন্ন ধাপে তাই হজ্ব ও কোরবানীর ভূমিকা বিশেষ মূল্য রয়েছে।ঈদের নামায আদয়ের পর থেকেই কুরবানীর সময় শুরু হয়ে যায়।

কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানব অথবা ধর্মের ইতিহাস।আল্লাহতায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টি লগ্ন থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে ।মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম কুরবানী হযরত আদম আ. এর দু’পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। এ ঘটনাটি বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদ সহ বর্ণিত হয়েছে। হাবিল ভেড়া, দুম্মা ইত্যাদি পশু পালন করত। সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। কাবিল কৃষি কাজ করত। সে কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্যে পেশ করল। যা জবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম দিতে হবে। যাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েজ নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়া জায়েজ নয়।

কোরবানী ওয়াজিব না হলে ঋণ করে কোরবানী করা উচিৎ নয়। ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির উচিৎ কোরবানী না করে ঋণ পরিশোধ করার চিন্তা করা। লৌকিকতা ও লোকলজ্জার কারণে কোরবানী করা বৈধ নয়।কোরবানীর প্রকৃত উদ্দেশ্যেই হচ্ছে ত্যাগ ও উৎসর্গের পরীক্ষা। কোরবানীর জীব বা পশু তাঁর নিকট পৌঁছেও না। পৌঁছে শুধু উৎসর্গকারীর উদ্দেশ্য, ত্যাগ, ধৈর্য্য, ও আত্মোৎসর্গ।“হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।” কুরবানী পশু কেনার আগে এবং কুরবানী দেবার আগে আমাদের কুরবানী সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে জানা উচিৎ ।শরিয়তের দৃস্টিতে কুরবানীর পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী । উঠ পাঁচ বছরের, গরু বা মহিষ দু বছরের এবং , ছাগল, ভেরা, দুম্বা এক বছর বা তারো বেশি ।কোরানীর গোশত যতদিন ইচ্ছে ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে ।অন্ধ ও কানা পশুর কোরবানী গ্রহণযোগ্য নয়।যে পশুর একটি দাঁতও অবশিষ্ট থাকে না সে পশুর কোরবানী গ্রহণযোগ্য নহে। যদি অধিকাংশ দাঁত বাকি থাকে তবে কোরবানী গ্রহণযোগ্য হবে।

পবিত্র কোরআনের সুরা কাউসারে আল্লাহ বলেছেন فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانۡحَرۡؕ (কাজেই তুমি নিজের রবেরই জন্য নামায পড়ো ও কুরবানী করো) পবিত্র যিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আযহার দিন। ঈদের দিন বহু তরুণী-যুবতীকে দেখা যায়, উত্তমরূপে সাজগোজ করে বেপর্দা হয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। অথচ এভাবে বেপর্দা হয়ে মেয়েদের বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।আমাদের রয়েছে পরিপূর্ণ দীন এবং পরিপূর্ণ আদর্শিক নিয়ামত। তাই আমাদের উচিত, পরিপূর্ণভাবে ইসলামের আওতাধীন চলে আসা।

আল্লাহতায়ালা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে অনেকবার পরীক্ষা করেছেন। সকল পরীক্ষায় তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। একরাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহপাক তাকে ইঙ্গিত করেছেন প্রাণধিক পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করতে। বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় আর কি হতে পারে। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করবেন। তখন তিনি হযরত ইসমাঈল (আঃ) বললেন, যা পবিত্র কোরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ “হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি?” সে (হযরত ইসমাঈল (আঃ)) বলল, “হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহপাকের অসীম কুদরতে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে কোরবানী হয়ে গেল একটি বেহেস্তী দুম্বা। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)।

অধিকাংশ কৃষকই প্রতি বছর এক থেকে দুটি গরু কিনে তা কোরবানী ঈদের ৫/৬ মাস আগে থেকে গরু আধুনিক পদ্ধতিতে মোটা তাজা করার জন্য খাওয়ানো ও পরিচর্যা করতে থাকে। এ কাজে কৃষকদের সাথে কৃষানী ও তাদের ছেলে-মেয়েরাও সহায়তা করে থাকে। অন্যদিকে তারা বাড়ীতে ছাগল ও ভেঁড়া পালন করে কোরবানী ঈদের বাজারে ভাল দামে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে।কৃত্রিম উপায়ে মোটা তাজা করনের গরু কিনে ক্রেতা সাধারন প্রতারিত হচ্ছে ।

‘‘ইবরাহীমের কাহিনী শুনেছ? ইসমাঈলের ত্যাগ?
আল্লারে পাবে মনে কর কোরবানী দিয়ে গরু ছাগ?
আল্লার নামে ধর্মের নামে, মানব জাতির লাগি
পুত্রেরে কোরবানী দিতে পারে, আছে কেউ হেন ত্যাগী?
সেই মুসলিম থাকে যদি কেউ, তসলিম করি তারে,
ঈদগাহে গিয়া তারি সার্থক হয় ডাকা আল্লারে।
অন্তরে ভোগী বাইরে সে যোগী, মুসলমান সে নয়
চোগা চাপকানে ঢাকা পড়িবে না সত্য সে পরিচয়।’’
( জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম )

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে তাঁর দীন বুঝা ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দিন।আল্লাহ্‌ তুমি আমাদের সকলের কোরবানী কবুল করো (আমীন)।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×