অনেক অনেক দিন আগের কথা। এ পৃথিবীতে তখনও মানবপ্রজাতির আবির্ভাব ঘটে নাই। বঙ্গ অঞ্চল বদ্বীপের মতো ছিল। ঘন জঙ্গল, নদী, খালে ঘেরা ছিল এটি। কোথাও ছোটো ছোটো টিলা ছিল। ছাগলের জন্য ছিল এর বিশ্বজোড়া খ্যাতি। যদিও সুন্দরবনের আলাদা কোনো পরিচয় ছিল না, পুরো বদ্বীপ জুড়েই ছিল বন। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখানে বাঘ, ভালুক, সিংহ, হাতি, গন্ডার, শূকর, চিতাবাঘ প্রভৃতি মাংসাশী প্রাণি ছাগলের মাংস খাওয়ার জন্য আসতো। এ অঞ্চলের ছাগলের মাংস হরিণের চেয়েও সুস্বাদু। তবে তখনও ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন বয়ষ্ক ভেড়া। মন্ত্রীরা ছিল সব শেয়াল। দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে তা রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল কুকুরের হাতে। বান্দর ছিল সাংবাদিক, হনুমান ছিল আইনজীবী আর হরিণ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার। বাইরের রাজ্য থেকে বাঘ-সিংহ এলে তাদের মহাসমারোহে সম্মান জানানো হতো। তাদেরকে খেতে দেওয়া হতো কচি কচি ছাগবাচ্চা। অতিথিরা শুধু ছাগবাচ্চা খেয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। তারা ফন্দি এঁটে বিভেদ তৈরি করলো। ছাগলে ছাগলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত আগেই শুরু হয়েছে। এক ছাগল নিজের জীবন বাঁচাতে অন্যের জীবন বিপন্ন করছে অহরহ। ছাগবাচ্চা খেয়ে অরুচি হওয়ায় অতিথিরা দাবি করলো- হরিণ, হনুমান, বান্দরও মাঝেমধ্যে খেতে দিতে হবে। এজন্য আগে থেকেই এই তিন শ্রেণীর মধ্যে সংঘাত শুরু করে দিয়েছে। ছাগল রাজ্যে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। প্রত্যেকেই যার যার মতো অন্যকে ঠকাতে চায়। ভেড়া ও শিয়ালের দল নিজেদেরকে বাঁচাতে মরিয়া। ক্ষমতার লোভে তারা পরনের কাপড় খুলতেও রাজি। তাদের একটাই দাবি, ক্ষমতা চাই। এই সুযোগে অতিথিরা হরিণ, হনুমান ও বান্দর খাওয়া শুরু করলো। এরপর শুরু হলো নতুন খেলা। বাঘ-সিংহের এতেও অরুচি ধরল। তারা শেয়ালদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলো। শেয়ালের মধ্যে তৈরি হলো দলপ্রীতি। ছোটো লেজের শেয়াল একদল। বড় লেজের শেয়াল একদল। সাধারণ শেয়াল আর খেকশেয়ালের দল আলাদা। এছাড়া কালো, সোনালী রঙ ভেদে ছোটো ছোটো দল তৈরি হলো। আর এই সুযোগে অতিথি বাঘ-সিংহরা শেয়াল খাওয়া শুরু করলো।
বদ্বীপের প্রাণ, প্রাণি, জীব, উদ্ভিদজগত বিপন্ন হয়ে গেল। একসময় এখানকার বাসিন্দারাই নদী-খাল-বন ধ্বংস করে ফেললো। বাতাসে ঢুকে গেল জীবাণু আর শব্দবুলেট। তারা শ্বাস নিতে পারলো না। কানে শুনতে পেল না। কিন্তু কেউই সমস্যাটা বুঝে সমাধানে এগিয়ে এলো না। যার যার পেট ও জীবন বাঁচাতে সবাই ব্যস্ত।