somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পর্যালোচনা- "ইন্টারভিউ উইথ হিস্টোরী"- ওরিয়ানা ফালাচি (১ম পর্ব)

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই বইয়ের বিষয়টার জন্যই এর রিভিউ লেখা আমার জন্য কঠিন কাজ । কি লেখব তার চেয়ে কি লেখব না সেটা নিয়েই বেশি ভেবেছি । এত ভাবাভাবির পরে বইটার এক-তৃতীয়াংশের রিভিউ লেখতে পারলাম । বাকি অংশের রিভিউ তাড়াতাড়ি লিখে ফেলার চেষ্টা করব । ধন্যবাদ । )

বিখ্যাত ইতালিয়ান সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচি(১৯২৯-২০০৬)র নাম শুনেছেন? তার সাংবাদিকতার ধাঁচ ছিল অত্যন্ত আক্রমণাত্নক । তিনি যার ইন্টারভিউ নিতে যেতেন তিনি যত বড় রাজনৈতিক নেতাই হন না কেন ফালাচি তার ইচছামাফিক প্রশ্ন করতেন । ১৯৬০ এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৮০এর দশক পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জাঁদরেল বিশ্বনেতাদের ইন্টারভিউ করেন যা পরবর্তীকালে সেই সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ দলিল হিসেবে এখন বিবেচনা করা হয় । সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেয়ার পর নয়-এগারোর প্রেক্ষাপটে ফালাচি ইসলাম ও মুসলমানদের কঠিন সমালোচনা এই অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায় তার বইয়ের “Europe is too tolerant of muslims…”, “Sons of Allah breed like rats…..” তার মনোভাব বুঝতে এই দুটা কথাই যথেষ্ট ।

যাই হোক, ইসলাম নিয়ে তার এই মনোভাব সাংবাদিকতা ও মানবতার এথিকস লঙ্ঘন করে কিনা সে বিবেচনায় আজ যাচ্ছিনা । আজকের বিষয় হল ওরিয়ানা ফালাচির গ্রহণ করা ১২ জন প্রভাবশালী বিশ্বনেতার ইন্টারভিউ নিয়ে সংকলিত বই, “ইন্টারভিউ উইথ হিস্টোরি” । বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু । যাদের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে তারা হলেন- বঙগবনধু শেখ মুজিবর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, জুলফিকার আলী ভূট্টো, হেনরী কিসিঙগার, গোল্ডা মায়ার, জর্দানের বাদশাহ হোসেন, ইয়াসির আরাফাত, উইলী ব্র্যান্ডট, শাহ রেজা পাহলবী, জেনারেল গিয়াপ, নগুয়েন ভ্যান থিউ, আর্চবিশপ ম্যাকারিয়স ।

প্রথমেই বলে রাখি শেখ মুজিবর রহমানের এত কঠিন সমালোচনা বিএনপি-জামাতের অতি “খাইষ্টা” নেতকর্মীরাও করতে পারেনাই । ১৮ই ডিসেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী ৫০ জনের মত বিহারীকে হত্যা করায় ফালাচি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ছিলেন । তাই মুজিবের ইন্টারভিউ নিতে যাওয়ার সময় তিনি নানা কথার প্যাঁচে তাঁর কথা তাঁকেই গিলতে বাধ্য করেন । একপর্যায়ে শেখ মুজিবর রহমান ক্ষেপে যান । ইটালিয়ান সাংবাদিকের সাথে পরদিন আবারও ঝামেলা বাঁধে । একপর্যায়ে ফালাচি পালিয়ে যান । শেখ মুজিবর রহমান সম্পর্কে ফালাচির বইয়ের কিছু লাইন, “......তার একমাত্র মেধা ছিল মূর্খ লোকদের উত্েজিত করে তলার ক্ষেত্রে......”, “......অর্থনীতির কিছগুই বুঝতেন না তিনি । কৃষি ছিল তার কাছে রহস্যর মত । রাজনীতি ছিল প্র স্তুতিবিহীন......” সবমিলিয়ে চূড়ান্ত সমালোচনা যাকে বলে । এ সমালোচনায় শিষ্টাচারের কোন বালাই ছিল না :|:|:|

ইন্দিরা গান্ধীকে এতটা অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি । ওরিয়ানা ফালাচি ভারতের গণতণত্রকে একপ্কার বিকলাংগ করার অভিযোগে ইন্দিরাকে অভিযুক্ত করলেও তাকে পছন্দ করার কথা বলেছেন, কারণ ফালাচির মতে, ভারতের মত জটিল একটা দেশকে শাসন করা বৈরাগীদের কাজ নয় । এ ইন্টারভিউয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ, ভারত- পাকিস্তান- আমেরিকার ভূমিকা, ভারত-চীন-আমেরিকার মাঝে তৃতীয় ওয়ার্ল্ড ওয়ারের আশঙ্কার কথা, ভারতের দারিদ্র্য, জনসংখ্যা, ইন্দিরা গান্ধীর পারিবারিক জীবন নিয়ে নানা কথা উঠে এসেছে ।

জুলফিকার আলী ভূট্টোর ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছিল জুলফিকার আলী ভূট্টোর নিজের আগ্রহেই । ওরিয়ানা ফালাচির ঢাকার অভিজ্ঞতা আর শেখ মুজিবের নামে বিষেদগার সম্বলিত রিপোর্ট পড়ে ভূট্টো খুশি হয় । ফালাচি বেগমকে “আপনা লোক”(সরি, মনে হয় “আওরাত” হবে......) শেখ মুজিব, ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে যা ইচছা তাই বলে যায় । ইটালিয়ান সাংবাদিকের সাথে বসে পান করা ক্যাভিয়ার ব্র্যান্ডের মদের ভূমিকাও কিছুটা থাকলেও থাকতে পারে । পরবর্তীতে হুশ ফিরে এলে ভূট্টো ফালাচিকে বার বার ইন্টারভিউ সেন্সর করার পাশাপাশি নানা অনুরোধ করে, এমনটি ইন্টারভিউটা আসলে ফালাচি কল্পনার আশ্রয় নিয়ে লিখেছেন এমন কথাও প্রচার করতে বলা হয় । যদিও পরে তেমন কোন বড় ঝামেলা হয়নি । এই ইন্টারভিউয়ে মুজিবকে মিথ্যাবাদী, ঘিলুহীন, কথাবার্তার ঠিক নেই, ভারতীয়দের ভন্ড বলেন । বাংলাদেশের জেনোসাইডে তার ভূমিকার কথা অস্বীকার করে সমস্ত দোষ “অলটাইম মাতাল” ইয়াহিয়া খানের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় ভূট্টো । এইদিক দিয়ে বিচার করলে এই ইন্টারভিউ ললিউডি কমেডীতে পরিপূর্ণ :P:P;)B-)

হেনরী কিসিন জারের সাথে ইন্টারভিউয়ে ফালাচি সুযোগ পেলেই কিসিঞ্জারের মুখ থেকে “......ভিয়েতনাম আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল......” এই কথাটা উচ্চারণ করানোর চেষ্টা করেছেন । একথা ওকথা বলে কিসিঞ্জার যেভাবে ঘাউড়া জার্নালিস্টকে সামলাবার চেষ্টা করেছে তা সাধারণের মাথা ব্যাথা করিয়ে দিতে পারে । আর “প্র্যাকটিকাল আমেরিকান যুক্তিবিদ্যা”:|র ব্যবহার তো ছিলই ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:২৭
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩



EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে কোকের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানা: ফিলিস্তিনি স্টেইটহুড, স্বনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে অসমম্মান করে।

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১০ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:১৭

কোকা-কোলার পূর্ব জেরুজালেমের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানাটিকে ঘিরে শুরু থেকেই তীব্র বিতর্ক আছে। এই এলাকাটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিপক্ক প্রেম: মানসিক শান্তি

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১১ ই জুন, ২০২৪ রাত ২:৩০






জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পৌঁছানোর পর, মানুষ যখন পরিপক্ক হয়ে ওঠে, তখন প্রেমের মাপকাঠি বদলে যায়। তখন আর কেউ প্রেমে পড়ার জন্য শুধু সৌন্দর্য, উচ্ছ্বলতা, কিংবা সুগঠিত দেহ খোঁজে না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রবীন্দ্রনাথের শেষ কটা দিন কেমন কেটেছিল?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১১




১৯৪১ সালে জীবনের শেষ দিনগুলোয় অসুখে ভুগছিলেন কবি। সারা জীবন চিকিৎসকের কাঁচি থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছেন, এবার বুঝি আর তা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

অশুদ্ধ বেনজীরের ‘শুদ্ধাচার’ পুরস্কারের কী হবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:১৭


যুক্তরাষ্ট্র যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেনজীর আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, এর সাড়ে ছয় মাস পর সরকার তাঁকে মহিমান্বিত করেছে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ দিয়ে। সেই হিসেবে বেনজীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×