somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন এক সাজেদা বেগম

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাজেদা বেগমের পাশে আজ ঘুমিয়েছে ঢাকা থেকে আসা তার মেয়ের ঘরের নাতনী রুবা।রুবা নিজেদের বাড়ীতেই ঘুমাতে চায় কিন্তু নানা-নানু চাপাচাপিতে তার মন রক্ষার জন্যে এবাড়ীতে ঘুমাতে হয় তার। নানুর কাছে ঘুমাতে না চাওয়ার একটি কারন আছে। রাতে ঘুমের ঘোরে একটু জোড়ে নড়লে বা শব্দ করলে নানু উঠে ডাকা শুরু করবে কি হয়েছে কি হয়েছে। ঘুমের মাঝে এই প্রশ্ন রুবাকে চরম বিরক্ত করে। কে নানুকে বোঝাবে যে আসলে তেমন কিছুই হয়নি!

সাজেদা বেগমের মাথায় কিছুটা সমস্যা আছে। মাঝে রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখা যাবে পান খাচ্ছে। আবার নিজে নিজেই কথা বলে যাচ্ছে। এত রাতে যে কাজটি ঠিক নয় তা তাকে কে বোঝাবে।

সবাই বলে মাথা খারাপ। সবাই তার উপরের অবস্থাটা দেখে বলে দেয়, ভেতরটা নিয়ে কি কেউ কখনো চিন্তা করেছে। এত সময় কোথায় সবার! প্রথমে মা হারিয়েছে সাজেদা বেগম। তার পরে ১৯/২০ বছরের তাগড়া ছেলেটা কোলের উপর মারা গেলো। তার পরে আপন ছোটবোন নৌকা ডুবিতে মারা গেলো। তিনটে মৃত্যুই বেশ কাছাকাছি সময়ে। পর পর এতগুলো আপন মানুষের মৃত্যুর পরও যে সে স্বাভিক জীবন যাপন করছে, বদ্ধ পাগল হয়ে যায়নি সেটাই কি যথেষ্ট নয়! না হয় একটু বেশী ই কথা বললো। তাতে কি। তাই বলে ছেলের বউরা যথাযথ সম্মান দিবে না, ছেলেরা দাম দিবে না, মেয়ে জামাই মেয়েকে মা নিয়ে এটা সেটা বলবে! কেমন কথা এটা! ঐমানুষটার না হয় মাথা খারাপ, বাকীরা, যারা নিজেদের সুস্থ দাবী করছে তারাইতো বরং অসুস্থ।

হ্যা, সাজেদা বেগম পাগল-ই। নয়ত চরম অভাবের সময় না খেয়ে দিন পারতে হয়েছে এরকম সময় যখন শ্বশুর ঘরবাড়ী আলাদা করে তাদের সংসার আলাদা করে দিয়েছে তখন কিছুই বলেনি সাজেদা বেগম বা তার স্বামী। নিজের টাকায় করা ঘরটাও পায়না তারা। ছনের ঘরে থাকতে হয় তাদের যেখানে পা-মাথা ঘরের বেড়ায় ঠেকে যায়। বড় বাড়ীর মেয়ে সাজেদা বেগম কোন প্রতিবাদ করেনা স্বামীর এই দৈন্যদশায়। বরং সাহায্য করে। শ্বশুর বিছানায় পড়ে পেশাব-পায়খানা বিছানায়ই করে। যে ছেলেকে ঘর-বাড়ী, গরু-ছাগল দেয় তা ঘরে জায়গা হয়না বুড়োর। জায়গা হয় সাজেদার ছনের ঘরে। সকাল-বিকেল দুবার শ্বশুরের পেশাব-পায়খানার বড় বড় মোটা কাথা মাথায় করে নদীর ঘাটে নিয়ে ধুয়ে এনেছে। সুস্থ মানুষ তো এসব পারে না। পাগলই সাজেদা বেগম।

ছেলের বউরা যখন বেয়াদবী করে, অসম্মান করে সে কাউকে কিচ্ছুটি বলে না, যেখানে আশেপাশের প্রায় সব বাড়ীতেই বউ-শ্বাশুড়ীর ঝগড়া লেগে থাকে। পাগল-ইতো। পাগল না হলে কোন শ্বাশুড়ী এই বয়সে এসে ছেলের বউ সকালে ঘুমিয়ে থাকে আর নিজে যেয়ে নাস্তা বানায় না, বউকে ঘুম থেকে ডেকে নাস্তা করায় না। নিজে রান্না-বান্না, থালাবাটি ধোয় না। সাজেদা বেগমের পরনের কাপড় ধুয়ে দেয় তর স্বামী। এই একটি মানুষই মনে হয় তাকে পুরোপুরি ভালবেসেছে সারাটি জীবন। তার কোন অভিযোগ নেই স্ত্রীর প্রতি।

মানুষ নাকি তার কর্মফল অবশ্যই পায়। সাজেদা বেগমতো তআর শ্বশুর-শাশুড়ীর জন্যে মন উজার করে দিয়েছিলেন। কখনো বিরক্ত হয়নি তাদের সেবা করতে। তবে কেন শেষ জীবনে এসে তার জীবনটা এরকম। ছেলে-বউদের একটু ভাল ব্যবহার, সম্মান, ভালবাসা এইটুকু আশাতো করতেই পারেন। এটাতো অন্যায় চাওয়া নয়, বরং এটা প্রাপ্য। তবে কেন.............................
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×