somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালালা, তালেবান এবং আলেম-সমাজ

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মালালা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্কুল-বাসেই গুলিবিদ্ধ হয়। পাকিস্তানের স্থানীয় মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রায় সবাই নিজ অবস্থান থেকে এর সমালোচনাসহ নিন্দা জানাচ্ছেন। কিন্তু পাকিস্তানের আলেম সমাজ এ ব্যাপারে একেবারে নীরব। টিভি টকশো-তে আলেমদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি, যাচ্ছে না। অথচ এই টকশো-তেই ফোন করছে তালেবানের নামে অনেকেই। তারা সরাসরি এর দায় স্বীকার করছে এবং নিজেদের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু শরিয়ার বৈধতার ব্যাপারে পাল্টা প্রশ্ন করলেই তালেবান নামধারীরা ফোন রেখে দিচ্ছে। অর্থাৎ শরিয়াভিত্তিক কোনো যুক্তি তাদের কাছে নেই। তাহলে এ অন্যায়ের সমালোচনা ও নিন্দাজ্ঞাপনে নেতৃত্ব-স্থানীয় আলেম সমাজ নীরব কেন?
পাকিস্তানে আমেরিকান ড্রোন-হামলায় হাজারো মালালার মৃত্যু হচ্ছে। এটি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী নৃশংস নীতির অংশ। এ ড্রোন হামলাকে কেউ সমর্থন করে না, করার প্রশ্নই আসে না। পাকিস্তানের ভিতরে-বাইরে এ নিয়ে প্রবল সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় অতীতেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এ নিন্দায় আবার আলেম-সমাজ সরব, যারা মালালার ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন।
আফগানিস্তানে তো অবশ্যই, পাকিস্তানে এবং আমাদের এই বাংলাদেশেও এক ধরনের অন্ধ অবোঝ গোঁড়া ধরনের লোক রয়েছে, যারা এখনো তালেবানকেই স্বচ্ছ ধর্ম ইসলামের নিটোল প্রতিনিধি ভাবে! আল্লাহ মাফ করুন, এরাই যদি নিখুঁত ইসলামের প্রতিনিধি হয়; অন্তত তাদের মতানুসারে, তাহলে ইসলামের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে। কারণ, ইসলামের ইতিহাস মানে যুদ্ধোন্মাদনার কোনো ইতিহাস নয়, নয় তা গোত্রাবদ্ধ আধিপত্য বিস্তারের নৃশংস ও আত্মঘাতী প্রচেষ্টা। অথচ তালেবান মানে সীমাহীন পীড়ন-উৎপীড়ন-নিপীড়ন, নির্মম জোরজবরদস্তি এবং নিজের পক্ষে ঝোল টানাটানির ধুন্ধুমার ইতিহাস। এখানে ইসলামের ঔদার্য, সৌহার্দ্য-সহানুভূতি এবং মহানুভবতার কোনো স্থান নেই।
মালালা সামান্য একটা মেয়ে। নিজের আবেগের বশেই হোক বা মুক্তমনা পিতা-মাতার প্রশ্রয়ে, বিবিসির ব্লগে লিখে মনের দুঃখ-ক্ষোভ মেটানোর প্রয়াস পায়। কিন্তু তালেবান এতে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এক মালালাই যেন আমেরিকার পর তাদের সব চেয়ে ভয়ঙ্কর শ্ত্রু! আরে বাবা, এক মালালা যদি আপনার বিপক্ষে লিখে, পাক-আফগানে তো আরো মালালা রয়েছে, তারা আপনার হয়ে লড়ছে না কেন? আপনি যদি সৎ হন, আদর্শ যদি আপনার অমলিন ও নিখুঁত হয়, এক মালালার লেখায় তা কি কালিমালিপ্ত হতে যাবে কেন? আসলে মনস্তাত্ত্বিকদের কথাটাই বোধ হয় ঠিক যে, নিপীড়ন-নিষ্পেষণে যাদের বেড়ে উঠা, তারা অন্যের প্রতি সদয় হতে পারে না। সে হিসাবে তালেবানের জন্য অবশ্যই করুণা জাগে। আবার রুশ-মার্কিনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এ কষ্ট ও পীড়ন-সহা মানসিকতাই সাহায্য করছে বেশি। কিন্তু আধিপত্য-বিরোধী সংগ্রামী মানুষও বিজয়ের পর স্বৈরাচারী নিপীড়ক হিসাবে আবির্ভূত হয়। আর নিপীড়ন তো তালেবানের মজ্জাগত অধিকার!
ইসলাম সর্বজনীন ও সর্বকালীন ধর্ম। এখানে স্থানিক-কালিক অজুহাতে কালোকে সাদা এবং সাদাকে কালো বলার কোনো সুযোগ নেই। সে তালেবান হোক আর মালাউন হোক। মালালার ওপর আক্রমণ অমানবিক, পাশবিক এবং অবশ্যই ইসলামের মূলনীতি বিরোধী। কারণ, একে তো সে অ-প্রাপ্ত বয়স্ক, অপরদিকে সে হল নারীদের অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু তার অবস্থান কোনোভাবেই ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, বরং স্ব-ঘোষিত ইসলামের একমাত্র বৈধ (?) প্রতিনিধি তালেবানের বিরুদ্ধে। তালেবান-বিরোধিতা আর ইসলাম-বিরোধিতা এক কথা নয়, তালেবানই বর্তমান ইসলামের অ-বিকল্প ঠিকাদার নয়। তাই মালালার ওপর অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ইমানেরই দাবি।
আর হ্যাঁ, এক মালালাকে নিয়ে এখন প্রচণ্ড তোলপাড়, মহা শোরগোল, উতাল-পাতাল চিৎকার! মনে হয় পাকিস্তানে কোনো মানুষ, নিদেন পক্ষে কোন নারী বা শিশুর অপঘাতে মৃত্যু হয় না। হয়, হয়, বিলক্ষণ হয়। পাকিস্তান হল এক অন্ধকার মৃত্যুপুরী। সর্বত্রই আজরাইলের নিত্য আনাগোনা। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। এর জন্য প্রধানত দায়ী অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকা। এ বিষয়ে পৃথিবীর সচেতন বিবেকবান কোনো মানুষেরই মনে সংশয় নেই। আমেরিকাও কিন্তু ড্রোন হামলার বৈধতা নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করে না। সাম্রাজ্যবাদের অমোঘ কৌশল হিসাবে একে নিদারুণভাবে অব্যাহত রাখে মাত্র। কিন্তু তালেবান এখানে ব্যতিক্রম। এরা নিজ অপরাধের ব্যাপারে অনুতপ্ত তো নয়-ই, বরং পাল্টা বলছে যে, সে বেঁচে উঠলে মৃত্যু পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাবে! এই হল তালিবানি মানসিকতার আসল পরিচয়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানে যে সব ব্যক্তিবর্গ, লেখক-কলামিস্ট এ আক্রমণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাদেরকেও হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে!
মাওলানা মুফতি তকি উসমানির ওয়েবসাইটে হামিদ মীরসহ একাধিক সাংবাদিক-কলামিস্টের কলামগুলো শোভা পাচ্ছে, যা একান্ত মালালার সমর্থনে লেখা। যদিও মুফতি তকি উসমানিসহ দেওবন্দি ধারার অপরাপর সকল মুফতি-ই এব্যাপারে নীরব। শুধু বেরেলী ধারার জনা পঞ্চাশেক মুফতি মালালা-আক্রমণের বৈধতাকে শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এর পাল্টা কোনো ফতওয়া এখনো আসে নি। দেওবন্দি ধারার নেতৃত্ব-স্থানীয় আলেমদের এ নীরবতা কি মালালার পক্ষে না বিপক্ষে, এটাই এখন বড় প্রশ্ন! প্রশ্নের উত্তর হয়ত কোনো দিন পাওয়া যাবে না। বরং তার প্রতিধ্বনিই শুনতে পাবো শুধু। তাই শেষ করছি রবি ঠাকুরের পংক্তি দিয়ে-
“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে”
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×