somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাকিব-আল-নাহিয়ান
"তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে চমৎকার কোনো কাজ করা। আর কোনো কাজ তখনি চমৎকার হবে যখন তুমি তোমার কাজকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথ

আশরাফুল...

০৮ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




"আমি এ বিষয়ে আমার চিন্তা ও নিজে যতটুকু জানি,তা অনেক আগেই ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসি কে জানিয়ে দিয়েছি।এই খবর শুনে তাই আমি মোটেই বিস্মিত হইনি।খবরটা আমার জন্য যেমন হতাশার,তেমনই কষ্টের,কিন্তু বিস্ময়ের নয়।খুবই পাশবিক ও অমানবিক একটা ভয়াবহ অন্ধকার জগৎ থেকে এই জুয়ার চক্র নিয়ন্ত্রিত হয়।

ও ছিল অসম্ভব প্রতিভাধর একটা কিশোর।সম্ভবত ওর যখন ১৫ বছর বয়স,তখনই কিছু লোক ওকে এই জালে ঢুকিয়ে ফেলেছে।ওর জন্য আমার সবসময়ই কষ্ট লাগে।এসব ব্যাপার আমার চোখ এড়ায়নি।

যে সময়ে আশরাফুল এই পথে পা বাড়িয়েছে,তখন তার কাছে খুব একটা বিকল্পও ছিলনা।বিশাল পরিবারের চাহিদা মেটাতে ক্রিকেট থেকে শুরুর দিকের আয় তার জন্য মোটেও যথেষ্ট ছিলনা।সে তখন একটা গ্রেট হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ছোট্ট বালক ছিল।কিন্তু তখনই তার বাসায় ১০ সদস্যের বিশাল এক পরিবার।এর বাইরেও সম্ভবত গোটা পাঁচেক পরিবারের দৈনিক চাহিদা তাকে মেটাতে হত।শুধু একজন উঠতি ক্রিকেটারের বেতন দিয়ে এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল।আমরা এই মহাদেশে বসে বাংলাদেশের ওই বাস্তবতা কল্পনাই করতে পারবনা।আমরা আসলেই এক ভিন্ন দুনিয়ায় বসবাস করি।

আশরাফুলকে এই অন্ধকার জগতের হুমকি ও ভীতি মাথায় নিয়েই সারাজীবন খেলে যেতে হয়েছে।তাই তাকে দায় দেয়ার আগে আরও অনেক কিছু নিয়েই ভাবতে হবে।আশরাফুলের মত জীবন-যাপন করে তবেই আশরাফুলকে দোষী বলতে আসা উচিৎ মানুষের!!!"

---জেমি সিডন্স(প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেট কোচ,বাংলাদেশ)

ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রথম থেকেই আশরাফুলের বিশাল একজন ফ্যান।আশেপাশের অনেকেই ওর বিশেষ গুণগ্রাহী না।অবশ্য তাতে দোষ দেয়ার উপায় নাই।ওর আউট হওয়ার ধরন দেখতে দেখতে মাঝেমধ্যে আমিই হতাশ হয়ে যেতাম।আশেপাশের লোকজন আশরাফুলকে কাছে পেত না।তাই আশরাফুল বাজে খেললে প্রথম থেকেই সকল পচানি এবং খোচানির স্বীকার আমি।অতিষ্ঠ হয়ে একদিন আশরাফুলের মোবাইলে কল দিলাম,

-"ব্যাটা,ইয়ে ফালাইতে খেলতে নামো?"

ওপাশ থেকে একটু নীরবতা।তারপর চিকনভাবে একজন বলে উঠল,

-"দুঃখিত ভাই।এরপর থেকে আরও ভালো খেলার চেষ্টা করব।"

এই কথা শোনার পর আসলে আর কিছু বলার থাকেনা।সেইসকল পচানি আর খোচানি মাথা পেতে নিলাম।কখনই আর নিজের রাগ টিভির রিমোট বাদে আর কারও উপর ঝাড়ার চেষ্টা করিনাই।

আশরাফুলের ফিক্সিং এর কাহিনী যেদিন শুনলাম ঘুনাক্ষরেও বিশ্বাস করিনাই।যেই ছেলে আইসিএল এর ১০ কোটি টাকা,কিছুদিন আগে ২৫ লাখ টাকার গাড়ির লোভ পায়ে ঠেলে জাতীয় দলের হয়ে খেলে যায় সে সামান্য কয়েক লাখ টাকার জন্য যে এটা করবেনা সে ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ ছিলাম।আশেপাশের সেই তারা কিছু ম্যাসেজ পাঠাল।সবার বক্তব্য মোটামুটি এক,

"কিরে?তোর আশরাফুল এইটা কি করল? :D ......"

আমি কারও ম্যাসেজের কোন জবাব দেইনাই।আমি নিশ্চিত ছিলাম,যা বলা হচ্ছে তা ভুল।কিছুদিনের মাঝেই আসল রহস্য প্রকাশ পাবে।তখন ম্যাসেজের উত্তর কল করে দেয়া যাবে।কিন্তু যা ভাবি আসলেই সব সময় তা হয়না।আশরাফুল নিজের মুখেই আমাকে এবং আমার সাথে আরও অনেকের দৃঢ় বিশ্বাসকে ভাংচুর করল।যে আশরাফুলকে আশার ফুল হিসেবে দেখতাম সে আমাকে কমপ্লিট ফুল বানিয়ে দিল।

এখন একটু ভিন্ন কথায় আসি।আমাদের দেশে এমন অগুণতি মানুষ আছে যারা দেশের জন্য কখনই ভালো কিছু করেনাই।সারাজীবন দেশের অনিষ্ট করে নিজের পকেট ভারী করেছে।দেশকে পুঁজি রেখে নির্লজ্জ সব ব্যবসায় নিজের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়িয়ে গেছে।আপনি আমি সকলেই জানি এদের কখনও ধরা যায়না অথবা ধরা হয়না।জাতীয়ভাবে তাদের কালো টাকা সাদা করবার হাজারো উপায় বের করা হয়।তারা সাদাকে কালো করে,কালোকে সাদা।দিনকে রাত আর রাতকে দিন করতে তাদের সময় লাগেনা।অথচ সরকারিভাবে নিয়ম জারি করে তাদের অনেককে আবার নতুন করে ঋণ দেয়া হয়।হাজার কোটি টাকা যে দেশে কিছুই না,ক্ষেত্র বিশেষে লাখ টাকাই সে দেশে আজীবন নিষেধাজ্ঞার দাবীদার।

আমি বলছিনা আশরাফুল বেকসুর খালাস হোক।আর্থিক অনটন,পারিবারিক সংকট কোনকিছুই ফিক্সিং এর মত একটা ঘৃণ্য অপরাধকে জাস্টিফাই করেনা।তবে যারা আজীবন দেশ বেঁচে খেয়ে গেছে দয়া করে আশরাফুলকে সেই দলে ফেলবেন না।আপনাদের চোখের সামনে আপনাদের টাকায় কেনা মার্সিডিজে করে দুর্নীতি ঘুরে বেড়ায়,আর রিকশার ছিদ্র পর্দার মাঝে,বৃষ্টিবিঘ্নিত আপনি তাদের গাড়ির কালো কাঁচের ছায়ায় নিজের অসহায় ছবি দেখতে দেখতে মনের ভুলেই হয়ত অশ্রাব্য কিছু গালি হাওয়ায় ছুঁড়ে দেন।আপনার এবং আমার যোগ্যতা কিন্তু অতটুকুই।আজ আমরা আশরাফুলকে একা পেয়ে আমাদের যোগ্যতার সীমা থেকে বের না হই।যে ছেলেটা অকপটে সমগ্র জাতি,দেশ,পৃথিবীর সামনে একজন অদ্ভুত বাংলাদেশির মতই নিজের দোষ,নিজের অযোগ্যতাকে স্বীকার করে নেয়,তাকে কথাকাজে পিষে ফেলতে আমরা আজ অনেক বেশি যোগ্য না হই।যদি একান্তই না পারেন,একসময় সে কি করেছিল দয়া করে একবার ইউ টিউবে সার্চ দিয়ে দেখে নিবেন।জানি আশেপাশের আপনাদের অনেক কষ্ট হবে,তবে গালির মাত্রার পারদের মাপ কতখানি হওয়া উচিৎ তা ঠিক করে নিতে আপনাদের ওই চোখজ্বালা নিয়েই যে একটু দেখতে হবে।

আশরাফুলের বিচার হোক।তবে তা কোনক্রমেই যেন আজীবন নিষেধাজ্ঞার মাপকাঠিতে না যায়।আমরা তাকে আবার লালসবুজের পতাকায় দেখতে চাই।ও শূন্য করুক,দরকার হলে মাইনাস করুক,কথা দিচ্ছি মুখ ফুটে কোন খোঁচানি পচানির জবাব দেবনা।

আশরাফুল ছাড়া শুধুমাত্র আর একজনেরই নিজদোষ স্বীকার করার সৎ সাহস ছিল।তিনি হলেন আমার আরেক প্রিয় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্যাপ্টেন হ্যান্সি ক্রনিয়ে।তার শেষ হয়েছিল এক অস্বাভাবিক,সন্দেহজনক প্লেন ক্র্যাশে।আল্লাহ না করুক,আশরাফুলের এমন পরিনতি না হোক।আশরাফুল নায়ক ছিল,নায়ক আছে,নায়ক থাকবেই।ওর প্রতিটি স্কুপ-ড্রাইভ-পুল বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন দিনের জয়গান ছিল,জয়গান আছে,জয়গান থাকবেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৫:৩১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×