somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গতির ঝড় তুলবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টাইম মেশিনে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণের মতোই এতদিন কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে মনে করা হতো অতিমাত্রায় রসপূর্ণ কল্পবিজ্ঞান। তবে এই কল্পবিজ্ঞানকে এবার সেই কল্পনার জগত থেকে বাস্তব জগতে নিয়ে আসার সব রকম আয়োজন সম্পন্ন করলেন ফরাসি নাগরিক হ্যারোশ, মার্কিন নাগরিক ওয়াইনল্যান্ড। গবেষণাগারে হাতেনাতে কোয়ান্টাম কণার চরিত্রকে ধরিয়ে দিয়ে জিতে নিলেন এ বছরের পদার্থ বিজ্ঞান শাখার নোবেল পুরষ্কার। তাদের দেখানো এই পথে অচিরেই তৈরি হবে হাজার কোটি গুণ গতিময় কোয়ান্টাম কম্পিউটার-এমনই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিজ্ঞানীমহল। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের মতে এই দুই বিজ্ঞানীর গবেষণায় কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় এক নতুন দুয়ার খুলে গেছে যার পথ ধরে অতি উচ্চগতির কম্পিউটার তৈরির গবেষণা শুরু করা সম্ভব হয়েছে। গত শতকে কম্পিউটারের আগমন বদলে দিয়েছে মানব সভ্যতাকে। ঠিক তেমনি এ কোয়ান্টাম কম্পিউটার হয়ত চলতি শতকেই আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেবে।

স্বপ্নের নাম কোয়ান্টাম কম্পিউটার: কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পেছনের ধারণাটা খুবই সোজা-সাপটা। আমাদের পরিপার্শ্বের দিকে তাকালে আমরা একটি বস্তুকে হয় ‘এটা’ নইলে ‘ওটা’ দেখি। সোজাভাবে বললে বলা যায় কোনো কিছু কখনই একই সঙ্গে দুটি অবস্থা ধারণ করতে পারে না। কিন্তু পরমাণুর প্রোটন এবং ইলেকট্রন একই সঙ্গে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘুরতে পারে অথবা একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন শক্তি অবস্থান ধারণ করতে পারে। আমাদের দৃশ্যমান এই জগতে সবকিছুই নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুযায়ী চমৎকারভাবে চললেও কোয়ান্টাম বিশ্বে ব্যাপারটি ঠিক উলটো। এখানে সবকিছু বিশৃঙ্খল, ইংরেজীতে যাকে বলে কেওয়াস। এখানেই শেষ নয়। কখনো যদি দুটি এরকম কণা মিলে এক হয়ে যেতে পারে তখই ঘটবে সব ভ’তুরে ঘটনা। যদি একটি কণার কোনো অংশে পরিবর্তন আনা হয় তবে তার প্রভাব আসবে অন্যটির উপর। যা বিজ্ঞানের ভাষায় সজ্জাকরণ এবং সুপারপজিশন নামে পরিচিত। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যাকে দূর থেকে ঘটনো ভৌতিক কান্ডকারখানা হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। এই সজ্জাকরণ ও সুপারপজিশন কম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে কম্পিউটারের হাতে চলে আসতে পারে অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার নামে পরিচিত।

গতির ঝড়ে এলোমেলো: বর্তমানে আমরা যে গতানুগতিক মানের কম্পিউটার ব্যবহার করি তার বিশাল তথ্যভান্ডার সংরক্ষন করার ক্ষুদ্রতম একককে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় বিট। বাইনারী পদ্ধতিতে প্রতিটি বিট শুধুমাত্র ১ (এক) এবং ০ (শূন্য) এই দুটি অবস্থা সংরক্ষন করতে পারে। যেমন- ডেসিমাল ১০ যার বাইনারী রূপান্তর হবে ১০১০। যা সংরক্ষণের জন্য আমাদের দরকার হবে কমপক্ষে ৪-বিটের রেজিস্টার। অপরদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে এই ক্ষুদ্রতম একককে বলা হবে কিউবিট। আর প্রতিটি কিউবিট একধিক অবস্থা সংরক্ষন করে রাখার মতো সামর্থবান। সেজন্য প্রতিটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্যালকুলেশন ও মেমরীর দিক দিয়ে হবে বিশাল ক্ষমতার অধিকারী। একটি অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোচিপ বা কার্ড সংরক্ষন করতে পারবে লক্ষ-কোটি টেরাবাইট তথ্য। কিংবা একইসাথে এবং অতিদ্রুত সমাধা করতে পারবে লক্ষ লক্ষ তথ্যের নির্ভুল গননা। এই গতিকে ঝড়ের সাথে তুলনা করলে আজকের ডিজিটাল কম্পিউটারকে মনে হবে এক পসলা গুড়ি বৃষ্টির মতোই। তথ্য প্রক্রিয়াকরনের দানব কোয়ান্টাম কম্পিউটার অ্যাটম আর ইলেকট্রনের শক্তিতে কম্পিউটিং-এর গোটা ভুবনকে এলোমেলো করে দেবে।

শুরুটা যেভাবে: আজ থেকে ১২১ বছর [১৯৩৩ সালে] আগে ভূতুরে কোয়ান্টাম কণার অদ্ভতুড়ে কান্ড-কারখানা ব্যাখ্যা করার জন্য অনেকটা কাল্পনিক এক পরীক্ষা বর্ণনা করেছিলেন আরউইন শ্রোয়েডিংগার। যেখানে বলা হয়েছিলো কোয়ান্টাম তত্ত্বের বাইরে বন্ধ একটি বাক্সের মধ্যে একটা বেড়াল একই সঙ্গে জীবিত এবং মৃত অবস্থায় থাকতে পারে। আর কোয়ান্টাম কণা যদি উপস্থিত থাকে তবে ওখানে বেড়াল একই সঙ্গে জীবন্ত এবং মরা অবস্থায় থাকতে পারবে। কোয়ান্টাম শাস্ত্রমতে, ‘দেখা’ হল পরিবেশের সঙ্গে সংঘাত বা মোলাকাত। বিজ্ঞানের নিয়মে এমন সঙ্ঘাত বা মোলাকাত হলেই বস্তু তার কোয়ান্টাম চরিত্র হারাতে শুরু করে।
চ্যালেঞ্জকে হার মানানো: সংঘাত এড়িয়ে কোয়ান্টাম কণাকে আলাদা করা ছিলো আকাশ কুসুম কল্পনার মতো। কেননা আলাদা করার সঙ্গে-সঙ্গে কয়েক মুহুর্তেই পরিবেশের প্রভাবে তারা কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলতো। কিন্তু সেই অসাধ্যকে সাধন করেছেন ফরাসি নাগরিক হ্যারোশ, মার্কিন নাগরিক ওয়াইনল্যান্ড। তারা ল্যাবরেটরিতে এমন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে একটি কণার অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী কোয়ান্টাম অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করা যাবে। এমনকি এভাবে বৈদ্যুতিকভাবে চার্জিত একটি পরমাণু বা আয়নকে আলো বা ফোটনের সঙ্গে আলাদা করে তাদের নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু কি পর্যবেক্ষণ? না। তারা ইতোমধ্যে দুটো আয়নের ওপর লেজার রশ্মি প্রয়োগ করে কিছু সহজ সরল গণনা কার্যসম্পন্ন করার পর আয়নগুলোতে রক্ষিত তথ্যের কোনো ক্ষতি না করে সেগুলোকে প্রসেসরের আশেপাশে ঘোরাতে এবং একই গণনা কাজ পুনরায় করতেও সক্ষম হন। অন্যভাবে বলতে গেলে, একটি মৌলিক প্রথাগত কম্পিউটার যে কাজগুলো করে তারাও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর সাহায্যে সেই একই কাজগুলো করতে সমর্থ হন।

আরো আছে যা: বর্তমানে প্রচলিত অনলাইন ব্যাংকিং, কেনাকাটা, বিল পরিশোধের মতো ব্যাপারগুলি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠিন করার জন্য জটিল ধরণের এলগরিদম ব্যবহার করা হচ্ছে যা মোটেও শতভাগ নিরাপদ নয়। কেননা প্রচলিত কম্পিউটারের গণনার সীমাবদ্ধতার জন্য যথেষ্ঠ পরিমান কঠিন কোড তৈরী করা সম্ভব হয় না। কিন্তু যদি প্রচলিত কম্পিউটারের জায়গায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার বসানো হয় তবে এত কঠিন কোড তৈরী করা সম্ভব যে কোন হ্যাকারের পক্ষে তা গণনা করে বের করা সম্ভব হবে না। এছাড়া কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বদৌলে আগামী দিনে এমন ঘড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে, যা বর্তমানের সিজিয়াম ঘড়ির চেয়ে শতগুণ নিখুঁত সময় দেবে। কাজেই অদূর ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর জগতে তাঁরা এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা যে আরো বড় বড় সাফল্য লাভ করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এখন কেবল অপেক্ষা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং আমাদের জীবনকে আরো কতটা পাল্টে দিতে পারে

আমার এই লেখাটি গত শনিবার সমকালে প্রকাশিত হয়েছে View this link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:২০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×