somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তানকে যমালয়ে রেখে মায়েরা ভালো নেই

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দেহে আজ ক্ষুধা নেই, দু চোখে নেই ঘুম। দুর থেকে যেন ভেসে আসছে সহকর্মীদের আর্তনাদ "ভাই, আমাকে বাঁচান।" আমার বিজ্ঞ বন্ধুরা বলবেন ওরা শ্রমিক, ওরা আমার সহকর্মী হয় কিভাবে? আমার চোখে ওরা শুধু শ্রমিক নয়, ওরা তৈরি পোশাক শিল্পের শিল্পী, তারা মানুষ, তারা আমার ভাই আমার বোন, তারা আমার অতি আপনজন আমার সহকর্মী। আমার দৈনিক ২৪ঘন্টার ১১ঘন্টা সময় ব্যয় হয় যাদের সাথে তাদের কংক্রিটের নিচে রেখে আমি কখনোই ঘুমাতে পারব না। তাদের অভুক্ত রেখে আমি কখনোই খেতে পারব না।

আজ আমার চোখের সামনে বারবার আমার মায়ের ছবি ভেসে আসছে। সন্তানকে যমালয়ে রেখে কোন মা আজ ভালো নেই। আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আমার মায়ের উৎকণ্ঠিত মুখ। আমার মা আমাকে প্রতিনিয়তই বলেন যমপুরীর এই চাকরি ছেড়ে অন্য কোন ট্রেডে চাকরির চেষ্টা করতে। গার্মেন্টস শিল্পে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই তিনি ফোন করে আমার খবর নেন এবং আমি সুস্থ আছি জানতে পেরে তিনি হাঁফ ছাড়েন। তিনি নিশ্চিত হতে চান আমি যে কারখানায় কাজ করছি সেখানে এমন ঘটনা ঘটবেনা।

সাভারের রানা প্লাজায় যারা কর্মরত ছিলেন তাদের মায়েরাও কখনো চাইনি তাদের সন্তান এভাবে প্রাণ হারাবে। ক্ষুধা, অভাব, দ্বারিদ্রতা ও বেকারত্ব নামক সামাজিক সমস্যার কাছে হার মেনে প্রতিটি মা তাদের সন্তানকে তৈরি পোশাক শিল্পে পাঠান। মায়েদের সন্তানরাও মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে অমানুষিক পরিশ্রম করে মাস শেষে যখন মায়ের কাছে টাকা পাঠাতে পারেন তখন পরিশ্রমটুকুর কথা অতি সহজেই ভুলে যান। মা যদি জানতেন তার আদরের সন্তান এ মাসের টাকা না পাঠিয়েই সেই লাশ হয়ে ফিরে যাবে তখন মা কখনোই তার সন্তানকে এ যমালয়ে আসতে দিতেন না। তাজরীন গার্মেন্টস থেকে রানা প্লাজা দূরত্ব খুব বেশী নয় হয়ত এমন কেউ আছে যার কাছের কেউ পুড়েছে তাজরীন ফ্যাশন এ এবং সে আজ চাপা পরে আছে রানা প্লাজার কংক্রিটের নীচে।

তৈরি পোশাক শিল্পের এই শিল্পীদের অনেকে মানুষ হিসেবে মানতে নারাজ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা মানুষ ছিল না, ছিল ২০০০০ টাকা দামের কোন সস্তা প্রাণী যাকে চাইলেই ব্যবহার করা যায়। আমার জানতে ইচ্ছে হয় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাতে ঘুমাতে পেরেছেন কিনা? শত শত প্রাণের আর্তনাদ তাদের হৃদয়ে আঘাত করতে পেরেছে কিনা?

বাংলাদেশের সবাই পোশাক শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ৭৫% আসে পোশাক শিল্প থেকে। তাই আমার দেশের টাকা দিয়ে যিনি কোটি টাকার গাড়িতে চরছেন উনার গাড়ি ক্রয়ের টাকার ভেতর পোশাক শিল্প থেকে আসা টাকারও ভাগ রয়েছে।

আমরা যারা পোশাক শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত আছি তারা মারা যাবার উদ্দেশ্যে এই শিল্পের সাথে জড়িত হইনি বরঞ্চ একটু ভালোভাবে বেচে থাকার জন্যই এই শিল্পের সাথে জড়িত হয়েছি। এখন তৈরি পোশাক শিল্পে যদি শিল্পীই না থাকে তাহলে শিল্পের মূল্য কোথায়? আর কত প্রাণ ঝরলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই শিল্পের দিকে সুনজর দিবেন। আমরা চাইনা এই শিল্পের আর একটি শিল্পীও কোন প্রকার অঘটনে ঝরে যাক এবং যারা এই শিল্পীদের হত্যাযঙ্ঘের সাথে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানাই।

বাংলাদেশ সরকার, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সহ তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত সকল সংস্থাকে যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আজই তৎপর হতে হবে।
কারখানাটি সঠিক বিল্ডিং কোড মেনে হয়েছি কিনা,
কারখানাটি স্থাপনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা,
কারখানাটির অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা আছে কিনা,
কারখানাটির অভ্যন্তরের তাপমাত্রা ও শব্দ কাজ করার উপযোগী কিনা,
কারখানাটির চলাচলের পথ বাধামুক্ত আছে কিনা এবং পর্যাপ্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা আছে কিনা,
কারখানাটির অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা এবং নিয়মিত ফায়ার ড্রিল হয় কিনা,
কারখানাটি কমপ্লায়েন্সের কতকটি ইস্যু বাস্তবিকই মেনে চলে কিনা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের এখনই খতিয়ে দেখতে হবে। অন্যথায় মৃতের সংখ্যা কেবলই বাড়বে। হয়ত একদিন আমিও থাকব ঐ সারিতে অথবা থাকবে আপনাদের কোন আপনজন।

জীবনের চেয়ে অর্থ কখনোই বড় হতে পারেনা। উৎপাদন বেশী হলে আপনি হয়ত আরও বাড়ি করতে পারবেন, গাড়ি করতে পারবেন, তৈরি করতে পারবেন আরও কারখানা বা বানাবেন টাকার পাহার। কিন্তু পোশাক শিল্পের চালিকা শক্তি ঐ সস্তা শ্রমিকরা যদি না বাচে তাহলে আপনার কারখানার চাকা কে ঘোরাবে? তাই কোন বিষয়কে অবহেলা না করে যথাযথ গুরুত্ব দিন, নিজে বাঁচুন, দেশকে বাঁচান, আর সাথে বাঁচান তৈরি পোশাক শিল্পের লাখো শিল্পীদের।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×