somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিতী বনাম দেশপ্রেম

১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালি কত টুকু দেশপ্রেমিক তার একটু ব্যখ্যা দেই,
যদি প্রশ্ন করে ১৯৭১ সালে গ্রামে গঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো কেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তাহলে একদল বলবে পেটে লাথি পরেছিল তাই, আরেক দল বলবে দেশপ্রেমের জন্য, আর কারো কারো মতামত হল হুদাই-হুজুকে বাঙালি। আমি ভাই দ্বিতীয় দলে। যদি কোন হুজুক থেকে থাকে তবে সেটা দেশপ্রেমের হুজুক। আমাদের দেশের মানুষের দেশপ্রেমের কোন কমতি দেখা যায়না। টং দোকান গুলোতে সর্বদায় তর্ক চলছে নেতারা কি করল কত টাকা মারল, কি করলে দেশের আরো উন্নতি হইত, কি করলে পদ্মা সেতুর জন্য অনুদান ঋণ পাওয়া যাইত ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা শুনলে মনে হবে সবাই দেশটাকে উদ্ধারের কাজে নেমেছে। সেচ্ছাসেবক! আমার মনে হয় বর্তমানে খুব কম গণতান্ত্রিক দেশ আছে যেখানে জনগন রাজনিতী নিয়ে এতো বেশি চিন্তিত আর প্রশাসনের এত বিষয় সম্পর্কে গ্যাত। অধিকাংশ মানুষই জানে যে দেশটার বারটা বাজছে। কিন্তু বারটা বাজছে কেন? ভারতের এতো উন্নতির পেছনে মূল নাকি তাদের দেশপ্রেম। তাইলে কি আমাদের দেশের প্রতি একটুও মায়া দয়া নাই? (আমরা দেশের সেতু তৈরি করার জন্য নিজের আখের গুসায়া পদ সাইরা দিতে পারি আবার জিগাই মায়া দইয়া নাই?!)।

টং দোকানে বসে দোকানদারকে বললাম “মামা মাথা গুইনা ভুনা চা আর বিড়ি দ্যাও।“ মামা চা বানাতে বানাতে শুরু করল “মামা দেশের কি অবস্থা দেখসেন মন্ত্রিরা চুরি কইরা টাকার পাহাড় বানাইতেসে। এগুলারে জুতা দিয়া পিটান উচিৎ।“ জবাবে যখন বললাম “তুমিও তো রাতের আন্ধারে সবজি বেইচা টাকার পাহাড় বানাইতেস, সেই বেলা?!” তার উত্তর “কি করব কোন মামা ঘরে দুইটা বাচ্চা আর বউ খাওয়াইতে হয়। খালি চা বেইচা কি আর এত গুলা মুখ চালান যাই।“

পাস্পোর্ট করার জন্য পুলিশ এসেছে বাসাই। আমাদের এলাকার রাস্তা খুব খারাপ। সে চা ঘরে ঢুকেই গজর গজর শুরু করলো “দেশের রাস্তা ঘাটের কি অবস্থা। এই কন্টাক্টার সব কইটা চোর। ইঞ্জিনিয়ার গুলাতো ডাকাত। এদের গারদে ভরে –এর উপর আচ্ছা করে বেতান উচিত। শালা!” বলে কাগজ পত্রের লেখালেখি শেষে বলে বসলো “১০০০ টাকা দিন। মানুষের উপকার করি। এই ছেলে বিদেশে গিয়ে টাকা-পয়সা ইনকাম করে দেশে পাঠাবে তাই এই টাকাটা নেয়ার আমাদের হক আছে। তার পাস্পর্টের জন্য আমরা খাটতেসি। সেই খাটুনির একটা দাম আসেনা? হাদিসে আসে মুজুরের গায়ের ঘাম শুকানোর আগে তার মজুরি পরিশোধ কর।“ আমার আম্মা একটু বোকা সোকা মানুষ তিনি বলেই বসলেন “ইয়ে আপনাদের অফিস থেকে বেতন দেইনা?” তার উত্তর “সেই টাকা দিয়ে কি আর সংসার চলে আপা। এখন বাজারে জিনিস পত্রের যা দাম। আর টাকাটা তো শুধু আমি একা নিবনা। ওর পাস্পর্টটা যেন তাড়াতাড়ি হয় তাই উপরের মহলে স্পিড মানি দিব।“ বুঝেন ঠেলা!

পেনশনের টাকার জন্য এ, জি, অফিস এ গিয়েছি। দাড়িওয়ালা টুপি পরা কপালে পাঁচ ওয়াক্ত নামজের ছাপ। তিনি আবার আযান দিলে নামাজ পরার আগ পর্যন্ত কোন কথা বলেন না। ভাবলাম এই লোকের কাছে কাজ দ্রুত হবে। তার কাছে যাওয়া মাত্রই “বাবা তুমি ছোট মানুষ, তুমি এইগুলা বুঝবানা। বাসাই বড় কেউ থাকলে তাকে পাঠাও।“ আমি বললাম “জী! বড় কেউ নাই যা বলার আমাকে বলেন।“ তার সুন্দর হাসি দিয়ে উত্তর “পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে। পুরাটাই আমার জন্য না। অনেক উপর পর্যন্ত টাকা দিতে হবে।” যখন বললাম “কেন? আমার বাপ তো কোন দুই নাম্বারি করেনাই। তার কাগজ পত্রে তো কোন সমস্যা নাই।“ তার রাগি কন্ঠে উত্তর “এই জন্যই বলসিলাম বড় কাউকে নিয়া আস। ছোট মানুষ তুমি এইসব বুঝবানা। এখন যহুরের আযান দিসে আমি আর কথা বলবনা। লাঞ্চের পরে বড় কাউরে নিয়া আস।“ মরেও বেচারা শান্তি পাইলনা। তার সারাজীবনের কষ্টের ফসল নিয়াও নোংরা দুর্নিতী।

আমি দেখি ইমান, দেশপ্রেম সব ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হয়ে গ্যাছে মাথায়। আমরা ভুলে গেছি কনটা ভালো কনটা খারাপ। আমরা পাপ আর পুন্নের মদ্ধে তফাৎ ভুলে গেছি। আমাদের কাছে নিজের ঘরের শান্তির জন্য ঘুষ খাওয়ায়া দোষের না। আমাদের ধারনা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরে রোজা রাখলেই সাচ্চা মুসলিম হয়ে গেলাম এখন আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারব উপর ওয়ালা সব দোষ মাফ করে দিবেন। দেশপ্রেমের কোন কমতি আমাদের নাই। বহু দেশের বহু জাতির সাথে আলাপ করে বুজেছি আমরা মানে বাঙালিরা নিজেদের দেশকে যতটুকূ ভালোবাশি আর খুবকম জাতি আছে যারা তাদের দেশকে এইভাবে অনুভব করে। কিন্তু আমাদের বাঙালি জাতির যে পরিমান নিতী ও মুল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে তাও খুবকম জাতির মাঝে দেখা যায়।

মালেয়শিয়ায় তিনটি জাতি যারা প্রত্যেকেই মালেশিয়ান। এদের মধ্যে একটা হোল চিনা মালায়শিয়ান। তারা অনেক বৎসর আগে মালেয়শিয়ায় এসেছিল জীবিকার খোজে। তারপর ওখানেই থেকে গেছে। কয়েক প্রজন্ম পরে এখন তারা জন্মগত ভাবেই মালেয়শিয়ান। তবুও তাদের কে যদি প্রশ্ন করা হয় “তুমি কোন জাতি?” সোজা উত্তরঃ
“আমি চাইনিজ।“
“মালায়শিয়া কেমন লাগে?”
“মালায়শিয়া ভালো তবে চাইনা আরও ভালো।“
“যদি চিন তোমাকে ফিরিয়ে নেয় তবে কি তুমি চিন চলেযাবে?”
“অবশ্যই!”
এতটুকুনও দেশপ্রেম নাই মনের মধ্যে। তবুও তাকে ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে যদি বলি “আশেপাশেতো কোন পুলিশ নাই এখন রঙ সাইড দিয়ে গাড়ি চালাও।“ সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলবে “এইটা কি বল? আমি আইন ভাঙব কেন?” ইহা হইল নিতী, যা নিয়া আমি এতক্ষন ভেজর ভেজর করে যাচ্ছি।

আমরা এতটাই নিতীহীন যে আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষক ক্লাসে ভালো করে পড়াননা টিউশনিতে ছাত্র-ছাত্রি কমে যাওয়ার ভয়ে। নিজেরা সিন্ডিকেট করে ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রি ভাগাভাগি করে নেয়। একটা জাতির শিক্ষকরা নিজেদেরকে পন্য বানিয়ে বিক্রি করছে সেই জাতির জন্য এরচাইতে খারাপ আর কি হতে পারে। আমাদের শিক্ষকরা আমাদের এই শিক্ষা যে দিচ্ছে টাকার জন্যে দরকার হলে নিজেকে পন্য বানাও। প্রাইভেট পড়ানোর সময় শিক্ষকদের দেখেছি যে তার ছাত্র ধরে রাখার জন্য তাদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের গল্প করত, অনেকে আবার ইচ্ছে করে একজন ছেলে একজন মেয়ে গ্রুপ করে দিত। আমার মতে দেশের বারটা বাজানো বন্ধ করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হউয়া উচিৎ সকল ধরনের টিউশোনি বন্ধ। এরপরও যারা স্কুল কলেজে শিক্ষকতা করে যাবে তারাই শুধু শিক্ষক হিসাবে থাকবে। যাদের আরো বেশি টাকা দরকার তারা অন্য ধান্দা করুক। এতে অন্তত পরবর্তি প্রজন্মে টাকার জন্য নিজেকে পন্য বানানর ধারনাটা থাকবেনা। হইত একটা ফেইল করা ডিগ্রীহীন প্রজন্ম আসবে তার মাঝেও কিছু ভালো, সৎ ও নিতীবান মানুষ পাওয়া যাবে।

আমরা কত নিচ নিতীহীন প্রজন্ম তৈরি করছি তার প্রমাণ এই দেশের সেরা বিদ্যা পিঠের শ্রেষ্ঠ সন্তান গুলো।

শুধু শিক্ষক না রাস্তার ঝারুদার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের মাথা পর্যন্ত সকলেই প্রতিদিন দুর্নিতির করছে, আঙ্গুল বাকা করে টাকা ইনকামের চিন্তা করছে অথবা জেনে শুনে আইন ভাংছে।


যদি বলেন বাঙালি দেশপ্রেমিক কিনা? তাহলে বলবো বাঙ্গালির চাইতে বড় দেশপ্রেমিক দুনিয়াই নাই কিন্তু ইথিক্স বা নিতীর অভাবে আজকে বাঙ্গালির এই দুর্বস্থা। আমরা প্রতিটা দেশপ্রেমিক জার জার অবস্থা থেকে দেশের ক্ষতি করে যাচ্ছি। আমি কোন দেশপ্রেমিক চ্যাম্পিয়ন মন্ত্রী বা দুইটাকার জন্য রাস্তার পাশে ফকিরের মত দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের রক্ষকদের কথা বলছিনা আমি বলছি ম্যাঙ্গ পাবলিকের কথা। আমরাই দেশটার বারটা বাজাচ্ছি।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×