somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠগী: এক খুনী জাতি

১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আঠারো শতকের কথা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিলুপ্ত হয়েছে, ব্রিটিশ সূর্য ধীরে ধীরে সারা ভারতের মধ্য আকাশে উঠছে, স্বাধীন ভারতীয় রাজাগণ ব্রিটিশ রাজের কাছে ধীরে ধীরে রাজ্যহারা হচ্ছে। এই সময় ভারতীয় উপমহাদেশে এক অরাজকতাময় অবস্থা বিরাজ করছিল। লোকজনের হাতে কোন কাজ নেই, বাড়িতে চুলোয় আগুন নেই। তাই দেশ বিদেশে মানুষ কাজের সন্ধানে ঘুরতে লাগল। কিন্তু তাদের অনেকেই আর বাড়ি ফিরে আসেনি। শুধু গরীব অনাহারী মানুষই নয়, অনেক ধনী ব্যবসায়ী বাণিজ্যের কাজে বিদেশ গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক তীর্থ যাত্রী তীর্থ যাত্রা শেষে আর ফিরে আসেনি। এই সব নিখোজ মানুষের পরিবার তাদের জন্য দিনের পর দিন পথ চেয়ে চেয়ে দিন কাটিয়েছে, তারপর একসময় বাঘ খেয়ে ফেলেছে বলে মনে করে চোখের পানি মোছা শেষ করেছে। ওই সব নিখোজ হওয়া ব্যক্তিদের কথা কেউ মনে রাখেনি। এক ইংরেজ ইতিহাসবিদ ওই সব নিখোজ হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করেন। তিনি দেখতে পান যে, মোঘল আমলের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষ নিখোজ হচ্ছে। আজ আমার গল্পটা এই নিখোজ হওয়া মানুষদের নিয়ে। তাহলে শুরু করা যাক ঃ

আট দশটা সাধারণ গ্রামের মতই সাধারণ একটি গ্রাম, অধিকাংশ গ্রামবাসীই খুবই গরীব। সবার সাথেই সবার ভাল সম্পর্ক। কিন্তু কিছু পরিবারের পুরুষরা বছরের একটি র্নিদিষ্ট সময়ে কাজের জন্য বাইরে যেত, যেমনটা গ্রামের অন্যান্য অধিবাসীরা যেত। কিন্তু সমস্যা হল এরা র্নিদিষ্ট কিছু লোকই এক সাথে কাজে বের হত। এরা অন্য কারো সাথে তারা বাইরে কি কাজ করে তা বলত না। এমনকি তাদের বউদের কিছু জিজ্ঞাসা করলে তারা এড়িয়ে যেত। এই খানেই আসল সমস্যা, তারা আসলে কি এমন করত যা অন্য কাউকে বলা যাবে না। আসলে তারা ছিল ইতিহাসের সবচাইতে ভয়ংকর ঠান্ডা মাথার খুনী যারা মানুষ খুন করেই নিজেদের পেট চালাত। এদের মানুষ খুন করার জন্য কোন ধারালো অস্ত্র লাগত না। এদের প্রধান অস্ত্র হল হলুদ রুমাল (!!!)। তাহলে সব খুলেই বলি। ঘটনাটা অনেকটা এই রকম। কোন এক দূর দেশের ধনী ব্যবসায়ী বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে কোন এক দূর দেশ যাচ্ছেন। পথে প্রতি পদে পদে বিপদ, তাই ধনী ব্যবসায়ী তার সাথে কয়েকজন পেয়াদা নিয়েছেন। দুপুর বেলা দেখেন ২০-৩০ জনের একটি দল তাদের দিকেই আসছে। দলের দলপতি ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসা করল যে, তারা কোন পথে যাচ্ছে। সরল বিশ্বাসে ব্যবসায়ী তাদের যাত্রা পথ বলল। নতুন দলটির দলপতি ব্যবসায়ীকে বলল যে, তারাও এই পথেই যাবে নতুন কোন কাজের সন্ধানে, তো তারা চাচ্ছে যে, ব্যবসায়ীর সাথে যাবে। ব্যবসায়ী দেখল যে, দলে নতুন সদস্য হলে বিপদের আশঙ্কাও কম তাছাড়া নতুন দলটির সবাই খুবই গরীব লোক, তাই তাদের কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কাও কম। তবুও এদেরকে কি বিশ্বাস করা যায় ? অনেকটা তাচ্ছিলের সাথেই তিনি রাজী হলেন। রাজী হলেও তিনি তাদের কোন রকম ছাড় দিতে রাজী নন। এই সব চাষাদের কোন বিশ্বাস নেই। তো পথে যেতে যেতে তিনি কাউকে তার কাছে আসতেই দিলেন না। অবস্য তারাও কোন ঝামেলা করল না। কেবল মাত্র তাদের দলপতি ব্যবসায়ীর সাথে ভাব জমাবার চেষ্টা করল। ব্যবসায়ী দেখল দলপতি লোকটি খারাপ না। বেশ হাসিখুশি, খুব মজার কথা বলতে পারে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ব্যবসায়ীর সাথে দলপতির এমন ভাব হল যে, দেখলে মনে হবে যেন তারা কত কালের বন্ধু। তো অন্ধকার শুরু হলে একটি ভাল জায়গায় তারা রাত কাটাবার যাত্রা বিরতি করল। রাতের খাবার শেষ হবার পর সবাই এক সাথে বসে নিজেদের সুখ দুঃখ নিয়ে আলোচনা করছিল। ব্যবসায়ী আর দলপতি যেন মানিকজোড়, কেউ কাউকে ছেড়ে যেন থাকতেই পারে না। হঠাৎ ব্যবসায়ী খেয়াল করল যে, নতুন দলটির সবাই যেন তাদের কে ঘিরে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে, যেন কোন মতলব আছে। কিন্তু দলপতি যখন তার বন্ধু তখন তার আর কিসের ভয়। হঠাৎ পেছন থেকে একজন বলল, ঠাকুর "জীরানী দেও"। এর পরের ঘটনা এত দ্রুত ঘটল যে ব্যবসায়ী বা তার পেয়াদারা কিছু বুঝে উঠার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। এক ঘন্টার মধ্যেই নতুন কবর খোড়া হল, যেখানে ব্যবসায়ী ও তার পেয়াদারা চির নিদ্রায় শায়িত হল। কেউ কোন দিন জানতেও পারবে না কি হয়েছিল তাদের ভাগ্যে। নতুন দলটি খুব খুশি কারন তারা তাদের প্লান মত কাজ করতে পেরেছে। এখন তারা সব টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে। একটি টাকাও কম বেশী হবে না। তারা কত পেয়েছিল, কেউ কোন দিন জানতেও পারেনি। হয়ত ২০ টাকা অথবা ভাগ্য খুব ভাল হলে ৫০ টাকা। তাদের খুন করার ধরনটা ছিল অনেকটা এই রকম, প্রথমে কয়েকজন মিলে প্রত্যেকের হাত-পা ধরে রাখত এবং অন্য একজন "হলুদ রুমাল" গলায় পেচিঁয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলত।

আজ এই র্পযন্তই, পরবর্তী পর্বে আমরা তাদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানব।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×