somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ!!!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ৫০ জনের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। তাঁদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ দলটির ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের আটজন সদস্য রয়েছেন। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের নাম আছে তালিকার শুরুতে।

প্রকাশিত তালিকায় বিএনপির দুজন কেন্দ্রীয় নেতার নামও আছে। তবে এ তালিকার অন্তত ২৪ জনই মৃত।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ফোরামের প্রতিনিধি সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধীদের ঠিকানাসহ নামের এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা ৫০ জন যুদ্ধাপরাধীর নাম প্রকাশ করেছেন। ১৯৭৩ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর যে ১১ হাজার স্বাধীনতাবিরোধী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসরের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের সবার নামের তালিকাও প্রকাশ করা হবে।

ফোরামের প্রতিনিধি সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর অধীনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানানো হয়। ঘোষণাপত্রে বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানানোসহ মোট ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। আগামী নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিহত ও তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ঐক্য না করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ফোরামের নেতারা।
তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সোবহান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাশেম আলী, সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট শেখ আনসার আলী এবং মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালালির অভিযোগে সাজা পাওয়া জামায়াতের রোকন এ বি এম খালেক মজুমদারের নাম আছে। এ ছাড়া রয়েছে ইংল্যান্ডে বসবাসরত ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম সারোয়ারের নাম।

জামায়াতের বর্তমান শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের অর্ধেকেরও বেশি ব্যক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন জামায়াতের নেতারা। দলের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের কাছে এই তালিকা প্রকাশ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

ফোরামের প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় থাকা দুই বিএনপির নেতা হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জয়পুরহাটের বিএনপির সাবেক সাংসদ আবদুল আলীম।

চারদলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নামও আছে তালিকায়। আরও আছে ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টির নেতা মোহাম্মদ আবদুল হান্নান, ইসলামিক পার্টির নেতা টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বেলা গ্রামের ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল বাছেদ।
তালিকায় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়ার স্কুলশিক্ষক ওবায়দুল্লাহ মজুমদার ও জামালপুরের আশরাফ আলীর নাম আছে। আশরাফ আলী ঢাকার পুরানা পল্টনে সেবা নামের একটি সংগঠন পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে।

তালিকায় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ৫০ জনের মধ্যে অন্তত ২৪ জন বর্তমানে মৃত। তাঁদের মধ্যে আছেন−সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী, জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খান, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুর রহিম ও জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার কোরবান আলী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান সরকারের গর্ভনর ডা. এম এ মালেক, সদস্য নওয়াজেশ আলী, পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর নূরুল আমীন, মুসলিম লীগের সাবেক নেতা খান এ সবুর খান, জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, তৎকালীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির মাওলানা ফরিদ আহমেদ, অবজারভার-এর তৎকালীন মালিক হামিদুল হক চৌধুরী, ইনকিলাব-এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল মান্নান প্রমুখের নাম আছে তালিকায়। তালিকায় থাকা বাকি ছয়জনের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রতিনিধি সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার আগামী নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন না দিতে রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তার পরও কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে ফোরাম তাঁদের প্রতিহত করবে।

এ কে খন্দকার বলেন, নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করলে দল হিসেবে জামায়াত নিবন্ধন পায় না। কারণ, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত নয়। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সহায়তা নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সেক্টর কমান্ডার (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করতে হবে। বিষয়টি দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী বলেন, অনেক হতাশার মধ্যেও আশার কথা এই, দেশে এখনো অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তিনি জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। বিএনপির সাবেক সাংসদের এই স্লোগানে আগত অতিথিরা উল্লাস প্রকাশ করেন।

মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা আজ সংগঠিতভাবে কাজ করছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আজ বহুধাবিভক্ত। এটা কাটাতে হবে।

কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে শুধু দলীয় অর্জনের বিষয় হিসেবে দেখলে চলবে না।

লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী বলেন, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।

ফোরামের পক্ষে যুদ্ধাপরাধীদের নামের তালিকা ঘোষণা করেন ড. সারওয়ার আলী। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সাংবাদিক হারুন হাবীব।

ফোরামের সমন্বয়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন অর রশিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনসহ দেশের প্রতিটি বিভাগ থেকে আসা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতারা বক্তব্য দেন।

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ৫ নভেম্বর ২০০৮
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×