somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেমন্তের উত্তরবঙ্গ

১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বঃ অভিযাত্রিক

অভিযাত্রিক হবার নেশাটা অনেক আগেই রক্ত-অস্থি-মজ্জায় ঢুকে গিয়েছিল। এবার ছিল ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করে নেওয়ার যে দীর্ঘ পদক্ষেপ তার একটা কিস্তিশোধ মাত্র। গন্তব্য-বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ স্থান। ঢাকা থেকে প্রায় পাঁচশ’ কিমি দূরের বাংলাবান্ধা। আমাদের দেশের অনেকেই হয়তো বলবেন বাংলাদেশের সর্বউত্তর (Extreme north) হল তেতুলিয়া। একদিক থেকে এটা ঠিক। স্থূলভাবে ঠিক। কিন্তু স্থলবন্দরের মর্যাদা পাবার পর থেকে বাংলাবান্ধাকে এখন আলাদাভাবেই চেনা উচিত। তাছাড়া মহানন্দার অপার সৌকর্য, পরিষ্কার আবহাওয়ায় হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন আর এর সাথে বোনাস হিসেবে ভারতের নির্লজ্জ আগ্রাসন নগ্ন চোখে প্রত্তক্ষকরণ তেতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধাতেই সবচেয়ে ভালো হয়। এইসব কারণে বাংলাবান্ধার স্বকীয়তা আজ মাননীয় (Esteemed)।

আমি যাত্রা শুরু করি আমার বাসা থেকে। যাত্রার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সর্বউত্তরে পৌঁছানো এবং সেটা বাসা থেকে এবং সেটা আম্মার কাছ থেকে দোয়া ও বিদায় নিয়ে। ২০১০ সালের ৩ নভেম্বর যখন আমি জুরাইনের ভাড়া বাসা থেকে বের হই তখন বাজে সকাল ১১টা ২৬ মিনিট। ধুলাউড়ানো সড়কের বাঁদিক দিয়ে হাঁটা শুরু করি। আমার সাথে কেবল আমিই। ১৭ মিনিটের মধ্যে যাত্রাবাড়ী এসে পৌঁছলাম। যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় তখন চলছিল এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ। এটা হলে নাকি যানজট অনেক কমে যাবে; ঢাকার দক্ষিণ-পূর্বাংশে যানজট বলে কিছুই থাকবে না! আর যেহেতু অত্র অঞ্চল থেকে যানজট বিদায় নিয়েই নিচ্ছে, তাই অত্র অঞ্চলে যাতায়াতকারী এবং বসবাসকারী প্রাণীদের আখেরি ভোগান্তিদানের একনিষ্ঠ কর্মযজ্ঞই মহোৎসাহে চলছিল। সাথে বোনাস হিসেবে জনজট তো ছিলই। কিছু আবুলদের বরকতে এখনও অবশ্য এসব আছে। আমাকে এইসব ঝক্কি-ঝামেলায় যেতে হয়নি। আমার কাজ একটাই- পূর্বের হয়ে যাওয়া ও করে ফেলা ভুলগুলো শুধরে চোখকান খোলা রেখে হাঁটতে থাকা।

দুপুর পৌনে একটা নাগাদ খিলগাঁও এসে পৌঁছলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। দেড়টার দিকে রামপুরা টিভি সেন্টার পার হলাম। বিটিভির অঙ্গনে ঢোকার সৌভাগ্য হয়নি। তাছাড়া সেখানকার নিবেদিতপ্রাণ (সরকারদলীয়) কর্মীগণ দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসাতে সদা সচেষ্ট থাকেন। এ অবস্থায় আমার উচিত হবে না এমন কিছু করা যাতে তাদের কর্মে কোন ব্যাঘাত ঘটে। অবশ্য আমার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মন্ত্রীর একটা সুপারিশ পেলে (চেষ্টা করলে পাওয়া যেত) টিভিতে আমার মুখখানা কার্যসিদ্ধির আগেই দেখিয়ে নিতে পারতাম। যাহোক রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে দুপুর সোয়া দুটো নাগাদ আমেরিকান দূতাবাস (অথবা বাংলাদেশের সত্যিকারের নীতিনির্ধারণী সদরদপ্তর) –এর কাছাকাছি এসে পৌঁছলাম। পাঠকদের কাছে আমার আগেই ক্ষমা চেয়ে নেওয়া দরকার বলে মনে হচ্ছে। কারণ আমি মূল ঘটনার চেয়ে পার্শ্বঘটনার পুথিগত আর ব্যক্তিগত বর্ণনাই বেশি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে চলতে গিয়ে আমার মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ-হতাশা-দুঃখ তৈরি হয়েছে; কোথাও কোথাও অবশ্য নির্মল আনন্দও পেয়েছি, আশান্বিত হয়েছি। হোক আমার কাঁচা হাত কিন্তু এগুলো লিখতে না পারলে লিখেও আমি শান্তি পাবো না যে।

কিছুক্ষণ পর নির্মাণাধীন যমুনা ফিউচার পার্ককে পাশ কাটালাম। এখানে নাকি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল হবে। তিনটার কিছু আগে কুড়িল বিশ্বরোড আসলাম। ওখানকার যাত্রীছাউনিতে মিনিট ছয়েক বিশ্রাম নিলাম। যাদের ময়মনসিংহ যাওয়া পড়ে তারা হয়তো ঠিকই ধরতে পারবেন আমি কোন ছাউনির কথা বলছি। নগরীর চিরায়ত যন্ত্রণায় বিরক্ত হলেও একটা দিক দিয়ে কিছুটা মুক্ত ছিলাম। তা হল- মানুষজনের কৌতূহল আর অবাক চাউনি। আস্তে আস্তে তা কেটে যাচ্ছিল। মিথ্যা বলবো না-সেটা আমার ভালোও লাগছিলো। মানুষজনের কৌতূহল আর অবাক চাউনি এসময় টনিকের মত কাজ করে।

যেকোনো কিছুর একটা লক্ষণীয় দিক থাকে। আমার কাছে সেদিনের চোখে পড়ার মত দিকটি ছিল বিমানবন্দর এলাকার চলমান দীর্ঘ যানজট। দুই ঈদ ও হরতাল (এখন অবশ্য হরতালেও কোথাও কোথাও ছোট ছোট যানজট হয় শুনেছি) ছাড়া ঢাকা নগরীতে যানজট থাকবে না এটা তো বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু তাই বলে বিমানবন্দর এলাকার মত মহাগুরুত্বপূর্ণ সড়কে! আমি আমার যাত্রাপথের প্রায় ৪০ মিনিট কেবল এই যানজটই দেখলাম। স্বস্তি কেবল একখানেই- ওটা ছিল আমার উল্টোদিকে আর আমি ছিলাম রাস্তার বাঁদিকে। বিকাল চারটা নাগাদ হযরত শাহজালাল (রহঃ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছলাম। ওখানে কোন যানজট ছিল না। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। শীত আসেনি, কিন্তু আসি আসি করছে এরকম হেমন্তের বিকাল হয় অসাধারণ মনোরম আর তা যদি ব্যস্ততম ফাঁকা রাস্তার একপাশে একলা উপভোগ করা যায় তা হলে তো অতুলনীয়। পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তবে শর্ত হল প্রকৃতিকে অবচেতন মন থেকে ভালবাসতে হবে।

ঠিক করলাম (আসলে বাসা থেকে বের হবার আগেই ঠিক করে এসেছিলাম) মেজো খালার বাসাতে সেদিনের মত যাত্রাবিরতি করবো। খালারা উত্তরা থাকেন, হাজি ক্যাম্পের কাছাকাছি। বাকি পথ আস্তে আস্তে হেঁটে সোয়া চারটার দিকে খালার বাসার দরজায় নক করলাম। রাতে খালা-খালু আমাকে কোন পথ ধরে কিভাবে যেতে হবে তার একটা ধারণা দিলেন। তার উপর চাকরির সুবাদে খালুর ছিল প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতাজাত মূল্যবান উপদেশ আর খালার অকৃত্রিম আদর-যত্ন নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলাম। লক্ষ্য- আজকের রাতটা ভালো করে ঘুমানো। কারণ আমার অভিজ্ঞতা বলে, সামনের রাতগুলো আমাকে অচেনা জায়গায় বিপদ মাথায় নিয়ে ঘুমাতে হবে। তবে একদিক দিয়ে আনন্দও লাগছিলো। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি যাবার যে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আমার আগের জার্নিতে হয়েছিলো তার সম্ভাবনা যে কাল থেকে বাড়তে শুরু করবে। অভিযাত্রিকের আসল স্বাদ তো কাল থেকেই পাওয়া যাবে।

বিঃ দ্রঃ এখানে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য
(চলবে............


Never lose hope...., Never stop expedition....
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×