somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ মহিষাসুর বধ এবং অন্তরের অসুরসেনারা

১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রীশ্রীচণ্ডীগ্রন্থে দেবী দুর্গার কাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় আবার গ্রন্থের মধ্যম চরিত্র বা দ্বিতীয় খণ্ডের মহিষাসুর বধে বলা হয়েছে,‘পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশতবর্ষব্যাপী এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নেয়। স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাঁকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হন। মহিষাসুরের অত্যাচারের কাহিনী শুনে তাঁরা উভয়েই ক্রেধান্বিত হন। সেই ক্রোধে তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করে। প্রথমে বিষ্ণু ও পরে শিব ব্রহ্মার মুখমণ্ডল হতে মহাতেজ নির্গত হয়। সেই সাথে ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সাথে মিলিত হয়। সুউচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজঃপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করে। কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূত এই দেবীকে কাত্যায়নী নামে অভিহিত করা হয়। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দেবী কাত্যায়নী আবির্ভূতা হয়েছিলেন,শুকা সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কাত্যায়ন দেবীকে পূজা করেন এবং দশমীতে দেবী মহিষাসুর বধ করেন। এরআগে এক এক দেবের প্রভাবে দেবী দেহের এক এক কাঠামো সৃষ্টির পাশাপাশি প্রত্যেক দেবতা তাঁদের আয়ূধ বা অস্ত্র দেবীকে দান করেন। হিমালয় দেবীকে তাঁর বাহন সিংহ দান করেন। এ দেবীই অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্মী রূপে মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন (শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে,মহালক্ষ্মী দেবী মহিষাসুর বধ করেন। ইনিই দুর্গা। বাঙালীরা এঁকে দশভূজারূপে পূজা করে থাকেন) তারপর দুর্গা দেবী ও তাঁর বাহনের সিংহনাদে ত্রিভূবন প্রকম্পিত হতে লাগল। মহিষাসুর সেই কম্পনে ভীত হয়ে প্রথমে তার সেনাদলের বীর যোদ্ধাদের পাঠাতে শুরু করলেন। দেবী দুর্গা ও তাঁর বাহন সিংহ প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ করে সকল অসুরসেনাকে বিনষ্ট করলেন। এরপর মহিষাসুর স্বসয়ং দেবীর সাথে যুদ্ধে নামেন। যুদ্ধকালে ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর নানারূপ ধারণ করে দেবীকে ভীত ও বিমোহিত করার চেষ্টা করে । কিন্তু দুর্গাদেবী সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। তখনও অসুর অহংকারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করছিল। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। দেবীদুর্গা মহিষাসুরের কণ্ঠে পা দিয়ে শুল দিয়ে বক্ষবিদীর্ণ করে অসুরকে বধ করেন। অসুরসেনারা হাহাকার করতে করতে পালিয়েছিল আর দেবতারা ফিরে পেয়েছিলেন স্বর্গের অধিকার।’ এতক্ষণ শ্রীশ্রীচণ্ডীগ্রন্থ থেকে যে বর্ণনা দেয়া হল তা প্রায় সবারই জানা। প্রশ্ন থাকতে পারে এই বর্ণনার পুনরাবৃত্তি কেন। কারন একাটই -আমরা এমন একটি ভূখণ্ডে বাসকরি যে ভূখণ্ডের মানুষেরা সহজেই সবকিছু ভুলে যায়। ভুলে যাবার শংকা থেকেই শ্রীশ্রীদুর্গার এই মর্তে আগমনের সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট সামনে রেখে কিছু বলার অভিপ্রায় পূরণকরা।

আগেই বলেছি,মহিষাসুর এবং তার অসুরসেনারা স্বর্গ-মর্ত্যে যে বিভৎস তাণ্ডব শুরু করেছিল তাতে শ্রীশ্রীদুর্গার আগমন ছিল অনিবার্য। দুর্গাদেবী এসেছিলেন এবং অসুর বিনাশ করেছিলেন। সে সময়ের অসুরেরা ছিল স্পষ্ট তাদের কর্ম (অপকর্ম) ছিল সরাসরি। মুখোশ ছিলনা কারও। ‘অন্তরে-বাহিরে’ তারা ছিল অভিন্ন। অহংকারী অসুরদের চিনতে কোথাও কোন সমস্যা হয়েছে বলে আমি অন্ততঃ শুনিনি। মহিষাসুর এতই পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছিল যে, দেবতারা পর্যন্ত তার তাণ্ডবে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। শ্রীশ্রীচণ্ডীগ্রন্থে বর্ণিত মহিষাসুর এবং তার অসুরসেনারা এ সময়ের পৃথিবীতে নেই। এবিষয়ে কারও দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। এ সময়ের পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য নব্যঅসুরের তাণ্ডব।এরাও মহিষাসুরের মত মহাপরাক্রমশীল। আমাদের এই শ্যামল-শুভ্র বাংলাদেশেও বীরদর্পে এমন হাজারও অসুরের পদচারণা। আপনার ডানে কিংবা বামে তাকান,সেখানেও অসুর। কোথায় নেই অসুর?সবখানে তার বসবাস। শুধু বাইরে কেন আমি আমার অন্তরে যখনই বিবেকের আলো ফেলি তখনই সেখানে অসুর দেখি (কপাল ভাল আমার অন্তরের যে অসুর সে কুম্ভকর্ণের চেয়ে বেশী সময় ধরে ঘুমায়)আপনার অন্তরের দিকে তাকান সেখানে অসুর নেই একথা কি বলা যাবে ? শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে বর্ণিত অসুরদের সহজেই চেনা গেছে তবে আমাদের সময়ের অসুরদের চেনা বড় কঠিন। এরা কালেভদ্রে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয় বরাবরই থাকে সাধুসন্তের মুখোশে আবৃত । ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর যুদ্ধকালে নানারূপ ধারণ করে দুর্গা দেবীকে ভীত ও বিমোহিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের আত্মার ভেতর বাড়িতে অসুরসেনারা বাস করে বলে একালের মহিষাসুরেরা অতি সহজেই আমাদের ভীত ও বিমোহিত করে ফেলে। আমরা সহজেই স্বর্গচ্যুত হই।

দুবেলা দুমুঠো ভাত,মোটা কাপড় ,নিশ্চিন্তে নিদ্রা,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একসাথে একই আকাশের নীচে একই বায়ু বুকভরে নেয়া,একই নদীর জলে তেষ্টা মেটানো, সোনালী কিংবা সবুজেভরা ফসলের মাঠ,বৃক্ষছায়ার পর্ণকুটির আর রাতের উঠানে জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ প্লাবন,এইতো আমাদের স্বর্গ। আমাদের এই স্বর্গ বারবার লণ্ডভণ্ড করে নরক বানিয়ে দেয় যে শক্তি, যে আত্মা সে আত্মা অসুরের,সে শক্তিও অসুরের, দেবতার নয়। কলিকালে অসুরেরা যখনই মুখোশ ছেড়ে বাইরে এসেছে তখনই তারা মানুষের কাছে পরাভূত হয়েছে। অসুরহীন পৃথিবীতে কি দেবী আসতেন? আসতেন না। তাঁর সৃষ্টি এবং আগমন অসুর বিনাশ করে ধরাধামকে পুতঃপবিত্র করার জন্য। পবিত্র গ্রন্থসমূহ তাই বলে। তাই শরৎ এলেই বাংলার প্রান্তরে প্রান্তরে বেজে ওঠে দুর্গাদেবীর আগমনী বার্তা। স্বস্বর্গ-মর্ত্য মাতিয়ে দেবী আসেন, আনন্দে উদ্বেল ভক্তরা তাঁকে বরণ করেন পরম মমতায়,শ্রদ্ধায়। কদিন বাদেই সবাইকে কাঁদিয়ে দেবী আবার স্বর্গে ফিরে যান। সন্তানতুল্য অনুরাগীদের কি দিয়ে যান দেবী? অসুরের বক্ষ বিদীর্ণ করা ‘শুল’? না। তিনি দিয়ে যান তাঁর অসুরবিনাশী অমোঘ চেতনা । যে চেতনা দিয়ে অসুর বিনাশ করা যায়। দেবী জানেন বাইরের অসুর ‘শুল’ দিয়ে বিনাশ করা যায়। অন্তরের অসুরকে ‘শুল’ দিয়ে বিনাশ করা যায় না। তাকে বিনাশ করতে হয় আত্মার বিকাশ দিয়ে,আত্মার শুদ্ধতা দিয়ে। শারদীয় দুর্গোৎসবের সবটুকই পণ্ডশ্রম হয়,যদি দেবীর এই দানে আত্মার উদ্বোধন না ঘটে। দুর্গোৎসব থেকে পাওয়া দেবীর আশির্বাদ দিয়েই পরিশুদ্ধ করতে হবে নিজের বিবেককে,আর সেই পরিশুদ্ধ বিবেকের আলো ফেলতে হবে নিজের আত্মায়। প্রথমেই বধ করতে হবে নিজ অন্তরে যে অসুরের বসবাস তাকে। দেবীদুর্গা সম্মিলিত শক্তির আধার হয়ে যেমন করে বিনাশ ঘটিয়েছিলেন মহিষাসুরের,তেমনি আলোকিত-পরিশুদ্ধ এমনসব অন্তর্গত অসুরবিনাশী মানবাত্মার সম্মিলিত জয়ধ্বনিতেই নাশ হবে কলিযুগের অসুরেরা। অন্যথায় কোনভাবেই নয় ,কোনদিনই নয়। # [email protected]
--সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু ,সম্পাদক- ‘জাগো মানিকগঞ্জ’

http://www.zagomanikganj.com
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×