somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২য় বিশ্বযুদ্ধ বাধার পেছনের কারন

১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে ২য় বিশ্বযুদ্ধ বাধার পেছনের কারন যেগুলো খুবই গুরুত্ব পূর্ণ সেগুলো আমি একটু তুলে আনতে চাই। বেশির ভাগ পাঠকই একটী বিষয়ে একমত হবেন যে, জার্মানির হিটলারের কারনেই ২য় মহাযুদ্ধ বেধেছিল। সরল চোখে এটি সবাই দেখে থাকেন। কিন্তু, বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিচার করলে এ্কথা আসলে ভুল। কেননা কেবলমাত্র হিটলার এর জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী নন। তৎকালীন দুনিয়াতে বিশেষত ১ম মহাযুদ্ধের পরবর্তী দুনিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ঔপনিবেশিক সংঘাতগুলিই এ যুদ্ধের দিকে দুনিয়াকে ঠেলে দিয়েছে। হিটলার সেখানে একজন বড় খেলোয়াড় ।
হিটলার তার 'মাইন কাম্ফ' বইতে একটী নাৎসি রাষ্ট্রের যে সমস্ত নীতি ও লক্ষ্যর কথা বলেছিলেন সেগুলো পুরন করতে কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। যেমন,
[১]চিরন্তন সংগ্রামে মানুষ হয়েছে সর্বাপেক্ষা শ্রেশ্ষ্ঠ, আর চিরন্তন শান্তিতে মানুষ হবে ধ্বংস।
[২] যদি যুদ্ধের উদ্দশ্যে কোন মৈত্রী অনুস্থিত না হয় তবে তা নিতান্ত বাজে এবং অর্থহীন।
[৩] ইউরোপে কখনও দুটি রাষ্ট্রশক্তিকে মাথা তুলে দাড়াতে দিও না। জার্মানির পাশে ইতমধ্যে এমন কোন রাষ্ট্রশক্তি থাকলে অথবা ভবিষ্যতে গড়ে উঠার সম্ভাবনা থাকলে তাকে ধ্বংস করাই হবে মহত্তম কাজ।
[৪] বিশ্বরাষ্ট্রসঙ্ঘ বা ঈশ্বরের কাছে আবেদন করলেও জার্মানির দখল করা রাজ্যগুলো ফেরত পাওয়া যাবে না, একমাত্র সশস্ত্র বলপ্রয়োগ ছাড়া। তিব্র প্রতিবাদের দ্বারাও নয়, একমাত্র তরবারির শক্তিতেই এ সমস্ত দেশের পুনরুদ্ধার সম্ভব। সুতরাং পররাষ্ট্র নীতিতেও এ তরবারির সহযোগিতা খুজতে হবে।
[৫] পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হল জার্মানির সমস্ত ভূমি ও দেশগুলো ফেরত পাওয়া।
[৬] কেবলমাত্র ১৯১৪ সালের জার্মান রাষ্ট্রসীমানার উদ্ধারই জার্মানির দাবী নয়।
[৭] পূর্ব ইউরোপ ও বিশেষভাবে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে নতুন দেশ কেড়ে নিয়ে জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তার করতে হবে।
[৮] বর্তমানে ব্রিটেন ও ইতালিকে হাতে রেখে ফ্রান্সকে ধ্বংস করতে হবে। এ দ্বারা ইঙ্গ-ফরাসী 'আঁতাত' বা মৈত্রী ভেঙ্গে যাবে। ফলে, জার্মানির গতি স্বছন্দ, পা্শ্বদেশ সুরক্ষিত ও কাঁচামালের পথ সুগম হবে।
[৯] যে রাষ্ট্র জাতির শ্রেষ্ঠত্ব বিকাশের উপাদানগুলো এভাবে পরিপুষ্ট করে সে রাষ্ট্র একসময় বিশ্ব এর প্রভু হতে পারবে।
এই ছিল তৎকালীন নাৎসি জার্মানির স্পস্ষ্ট উদ্দেশ্য ও নীতি।
জার্মানির ভারসাই সন্ধি ভঙ্গ, পররাজ্যগ্রাস সাম্রাজ্য বিস্তার, ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি এবং যুদ্ধযাত্রার কোন 'মতলব' হিটলার গোপন করেন নি।
সবাই এক্ষেত্রে প্রপ্শ্ন করতে পারেন যে, হিটলারি জার্মানির এ সমস্ত মতলব জানার পরও ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকার মত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো হিটলারকে বাধা দিলেন না? কেন এতবড় যুদ্ধের দিকে দুনিয়াকে ঠেলে দিলেন?
এর প্রধান কারন হচ্ছে ইউরোপে নবগঠিত রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি ধনতান্ত্রিক পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর তীব্র বিদ্বেষ এবং তাদের নিজেদের মধ্যকার স্বার্থসঙ্ঘাত ও বিরোধ।
রাশিয়ায় কমিউনিজম যাতে মাথা তুলে দাড়াতে না পারে সেজন্য পশ্চিমা দেশগুলো অনেক আগ থেকেই অর্থাৎ গোঁড়া থেকেই চেষ্টা করছিলো। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী Lloyd George ১৯৩৩ সালে এক বক্ত্রিতায় স্পস্তভাবে বলেন যে যদি শক্তিবর্গ জামানিতে নাৎসিদের পতন ঘটায় তাহলে নিশ্চয় কোন রক্ষণশীল, সমাজতান্ত্রিক বা উদারনৈতিক শাসন প্রতিস্থিত হবে না। হবে চরম সাম্যবাদ বা Extreme Communism এর প্রতিষ্ঠা। কমিউনিস্ট রাশিয়ার চেয়ে কমিউনিস্ট জার্মানি অনেক বেশি বিপজ্জনক হবে। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ পারলামেন্টের হাউস অব কমন্স এর সভায় তিনি আরও স্পস্ত করে বলেন ইউরোপে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রক্ষণশীলদের একমাত্র বড় আশ্রয় জার্মানি এবং ২/১ বছরের মধ্যেই এজন্য জার্মানির দিকে আমাদের তাকাতে হবে। জার্মানি ইউরোপের ঠিক মাঝখানে। সুতরাং জার্মানির আত্মরক্ষার প্রাছির যদি ভেঙ্গে যায় এবং কমিউনিস্টরা যদি তাকে পেয়ে বসে তাহলে গোটা ইউরোপ সাম্যবাদী হয়ে পড়বে। সুতরাং জার্মানিকে নিন্দা না করে বরং তাকে সাদর আহবান জানানো উচিৎ।
এভাবে ব্রিটিশরা হিটলারি জার্মানিকে বন্ধুর মত গ্রহন করল এবং তারা হিটলারের পক্ষপাতি হয়ে উঠল । ব্যংক অব ইংল্যান্ড জার্মানির অস্ত্রসজ্জার জন্য অর্থের যোগান দিতে শুরু করল। Vikers Armstrong Company জার্মানিকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করলো ।
[সুত্রঃ 'দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস' - বিবেকানন্দ মুখপাধ্যায়, ১ম খণ্ড]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×