somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রিমন০০৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন , মনে রেখো যদি কোন মুসলমান কোন অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায় ,তাদের অধিকার খর্ব করে ,তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরূদ্ধে অমুসলিম নাগরিকদের পক্ষ অবলম্বন করব । (আবু

গোবরে পদ্মফুল---বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী’র গৌরব “বাবুল আক্তার” ( ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গোবরে পদ্মফুল---বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী’র গৌরব “বাবুল আক্তার” ( ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

...
সময়টা ২০০৮ সালের মার্চ কিংবা এপ্রিলের কোন এক মধ্য দুপুর। অপরাধ বিষয়ক রিপোর্টিংয়ের কারণে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের ফোন নম্বরগুলো ফোনবুকে সংরক্ষিত থাকে। হঠাৎ করেই ফোন আসে সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনারের সরকারী নম্বর থেকে। আমার জানামতে ঐ পদে কর্তব্যরত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক কিছুদিন আগে বদলী হয়েছেন এবং গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার আশিকুল হক ভূঁইয়া বাড়তি দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফোন রিসিভ করেই তাই বললাম,“কী খবর আশিক ভাই, কিছু আছে নাকি?” ওপ্রান্তে অপরিচিত কণ্ঠ - “দাদা আমি আশিক নই, আমার নাম বাবুল আক্তার।কোতোয়ালীতে নতুন জয়েন করেছি।”

বাবুল আক্তার ! নামটা কেমন জানি গেঁয়ো টাইপের। তাছাড়া যেচে ফোন করলেন আমাকে। একটু অবাক আমি। কী চায় লোকটা? তবু একটু খুশি হওয়ার ভাব দেখিয়ে জানতে চাইলাম ফোন করার কারণ।

তিনি বললেন, “দাদা, আমি যেখানেই যাই, সাংবাদিকদের সাথে সম্পর্ক রেখে আমি কাজ করতে পছন্দ করি। কারণ আমাদের কাজ আর আপনাদের কাজ তো একই। আপনাদের কাছে অনেক খবর থাকে, যা পুলিশকে সাধারণত: দিতে চায় না পাবলিক। কয়েকদিন হলো আমি এখানে জয়েন করেছি। এ ক’দিন সাংবাদিকদের সম্পর্কে কিছু খবরাখবর নিয়েছি। শুনলাম আপনার কথা। আপনার দুটো লেখাও আমি পড়েছি। তাই ফোন দিলাম। এখানে যদ্দিন আছি, আপনার সাথে একটা সম্পর্ক রেখে কাজ করতে চাই।”

ফোন করায় যতটুকু অবাক হয়েছিলাম, তার পরের কথাগুলো শুনে সন্দেহ হলো। মানুষ তো তেমন সুবিধার নন। জয়েন করেই সাংবাদিককে ফোন করে সম্পর্ক রাখার কথা বলছে। তার মানে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা। নামটাও কেমন গেঁয়ো। সব মিলে তো মনে হচ্ছে বেশ সামারিবাজ অফিসার। এরপর আরো টুকটাক কথা বলে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে তিনি লাইন কেটে দিলেন।

তার সম্পর্কে আরো খোঁজ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। দুই একজনের কাছে জানতে চাইলেও তারা ঠিক বলতে পারছেন না বাবুল আক্তার মানুষটা কেমন। সন্দেহটা আরো গাঢ় হলো। যা ভেবেছি ঠিক তাই। লোক তেমন সুবিধের নয়। তার সাথে আরো কয়েকবার ফোনে কথা হয়। প্রতিবারই অনুরোধ করেন থানায় চা খেতে যাওয়ার। যাওয়া হয়নি।
সপ্তাহখানেক পরের কথা। জামালখান মোড়ে একদল ছিনতাইকারী ছিনতাই করে পাশের বড় ড্রেনে নেমে পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশের টিম। কিন্তু মোবাইল টিম আসার আগেই সেখানে পৌঁছে যান বাবুল আক্তার। নিজেই নেমে পড়েন ময়লা আবর্জনাপূর্ণ ড্রেনে। ধাওয়া করেন তাদের বহুদূর। ঘটনাটা তখন নগরীতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। আমিও আন্দোলিত হই সংবাদটা পেয়ে। কারণ আমাদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায়, নালা নর্দমায় একটা পাঁচশ টাকার নোটও যদি পড়ে যায়, নিজে তুলি না; চারপাশে দেখতে থাকি, টোকাই শ্রেণীর কোন ছেলেকে পাওয়া যায় কিনা। প্রয়োজনে তাকে বিশ টাকার কড়কড়ে একটা নোট দিয়ে ঐ পাঁচশ টাকার নোটটা তুলে নিই। ভাবি, যে মানুষটা নির্দেশ দিলে তিন থানার ওসি (কোতোয়ালী জোনের অন্তর্ভুক্ত তিনটি থানা কোতোয়ালী, খুলশী ও বাকলিয়া) ঐ নালায় নামতে বাধ্য, সেখানে তার মতো একজন সিনিয়র অফিসার নালায় নেমে পড়েছেন কর্তব্যের খাতিরে! অনুমান করতে কষ্ট হলো না তার দায়িত্ববোধ সম্পর্কে। মনে মনে অনুতপ্ত হলাম, তার সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্ম নিয়েছিল বলে।

বাবুল ভাইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা তারপর থেকেই। কখন যে সম্পর্কটা এতোটা অন্তরঙ্গ হয়ে পড়েছে, জানি না। সিএমপিতে থাকাকালীন বিষয়টা এমন হয়ে পড়েছিল যে নগরীতে যা-ই ঘটুক না কেন, তার রহস্য ভেদ থেকে পুরো গ্রুপটাকে পাকড়াও করা পর্যন্ত যা-ই হোক তা হতো বাবুল ভাইয়ের নেতৃত্বে। আর তিনি কোন আসামী ধরতে কোন অভিযানে যাচ্ছেন, অভিযানে সফলতা কতটুকু আসলো, তা জানার অধিকার আদায় করে নিয়েছিলাম আমিসহ চট্টগ্রামের আর দুই একজন সাংবাদিক। পরিচয় পর্ব থেকে ততদিনে আমরা দুজন হৃদ্যতার কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। আমার সাথে তার অলিখিত একটা চুক্তি ছিল যে অপরাধীদের নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করার আগে বা পরে আমি তাদের সাথে একান্তে কিছু সময় কাটাতে চাই। কারণ আমি দেখেছি পুলিশ সামনে থাকলে অপরাধীরা অনেক সময় মারের ভয়ে কিছু কথা স্বীকার করে আবার সহযোগীদের সম্পর্কে বলতেও দ্বিধা করে। কিন্তু তাদের সাথে একান্তে সময় কাটানো গেলে খবরের অন্তরালের অনেক খবরও বেরিয়ে আসে। বলা বাহুল্য বাবুল ভাই আমাকে সে সুযোগটুকু করে দিতেন।

বাবুল ভাই ছিলেন কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার। অর্থাৎ কোতোয়ালী জোনের আন্ডারে থাকা কোতোয়ালী, খুলশী ও বাকলিয়া থানার সমস্যা দেখভালের দায়িত্ব ছিল তার। কিন্তু দেখেছি যেখানেই সমস্যা সেখানেই বাবুল আক্তার। সিএমপির বারো থানাতো আছেই, এও দেখেছি, জেলার বিভিন্ন থানার ওসি এসে ধর্ণা দিচ্ছে তার কাছে। দেখেছি রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, চকরিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ এমনকি বরিশাল, পিরোজপুর , সিলেটের দুর্ধর্ষসব অপরাধীকে গ্রেফতার করে তিনি সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে খবর দিচ্ছেন। তার একটাই কথা ছিল কে ধরেছে তা তো দাদা বড় কথা নয়, তার চেয়ে বড় হলো সে ধরা পড়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে আছে কিনা।
চট্টগ্রাম জেলায় ডাকা তের তান্ডবে ঘুমাতে পারছে না সাধারণ মানুষ । খলিল ডাকাত তার নাম। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে বাচ্চারা না ঘুমালে খলিলের নাম বলে ভয় দেখানো হতো। তাকে ধরার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের রাতের ঘুম হারাম। কিন্তু না, খলিলের চতুরতার কাছে বারবার পরাস্ত হতে হচ্ছিল তাদের। কারণটা ছিল খলিল একটা মোবাইল সীম দুবার ব্যবহার করতো না। তাছাড়া যখন যেখানে যতোক্ষণে যাওয়ার কথা থাকতো তার এক মিনিট আগে বা পরে হতো না। যেখানে ডাকাতি করতে যাবে তার অন্ততঃ তিন চারদিন আগে নির্দিষ্ট বাড়ির আশপাশ রেকি করে ম্যাপ তৈরি করে ফেলতো আসবে কোনদিকে, যাবে কোনদিকে, পুলিশ আসতে কতো সময় লাগতে পারে ইত্যাদি। হাটহাজারীতে এক বিয়ে বাড়িতে এ ধরনের একটি ডাকাতির ঘটনার পর গৃহকর্তা বাবুল আক্তারের নাম শুনে ছুটে আসেন কোতোয়ালী থানায়। বাবুল ভাই রাজী হন। তারপরের ঘটনা চট্টগ্রামবাসীর নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা। ধরা পড়ে একে একে খলিলসহ তার গ্রুপের নয় সদস্য । খলিল নিজেও অবাক হয়ে যায়। কারণ সে কখনো কল্পনাও করে নি, তার ছোটখাটো কিছু ভুল বাবুল আক্তারের কাছে অস্ত্র হয়ে ধরা দিতে পারে। এটিই প্রথম কিংবা একমাত্র ঘটনা নয়। চট্টগ্রামে একপর্যায়ে ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেল চোর কেউই নগরীর কোতোয়ালী জোনে অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাতে খুব যে তাদের সুবিধা হয়েছে তা বলা যাবে না। কারণ এরপর দেখা গেল যেখানেই অপরাধ সেখানেই বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে যেতেন বাবুল আক্তার।

তার সাথে অন্তরঙ্গভাবে মেশার সুযোগে দেখেছি, বাবুল ভাই অর্থ কিংবা উপঢৌকনের হাতছানি কত অবলীলায় উপেক্ষা করেছেন। টেরিবাজার ব্যবসায়ি সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মান্নান ভাইয়ের কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম। তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরো বেড়ে গিয়েছিল সেটি শুনে। পর্দার কাপড় কিনতে ভাবীকে নিয়ে টেরিবাজার গেছেন বাবুল ভাই। দোকানদার কী করবে না কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। বাবুল ভাই পর্দার কাপড় দেখাতে বললেন। দোকানদার সবচেয়ে ভালো কোয়ালিটির পর্দার (গজ সাড়ে সাতশ টাকা) কাপড় দেখালেন। বাবুল ভাই হেসে তার সীমাবদ্ধতার কথা দোকানদারকে জানালেন। এও বললেন, এত দামী পর্দা কেনা মানে বেতনের পুরোটাই চলে যাবে। দোকানদার নাছোরবান্দা। তিনি এটাই দেবেন এবং টাকা নেবেন না। বাবুল ভাই নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। পরে দোকানদারের অনুরোধে তিনি পর্দার কাপড় নিলেন, তবে শর্ত একটাই কিস্তিতে পরিশোধ করে দেবেন এবং তা-ই করলেন তিনি।

জেলখানায় অপরাধীদের কাছে ‘বাবুল আক্তার’ নামটি আতঙ্কের প্রতিশব্দ। নতুন কেউ চট্টগ্রাম জেলখানায় ঢুকলে যদি জানা যেত যে সে বাবুল আক্তারের কাছে ধরা পড়েছে তবে বন্দীদের মধ্যে তার অন্যরকম কদর হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো তার হাতে ধরা পড়েছে, এমন অনেক আসামী জেল থেকে মুক্ত হয়ে প্রথমে তাকে সালাম করতে থানায় এসেছে। পরবর্তীতে তারাই তার সোর্সের ভূমিকা নিয়ে ধরিয়ে দিত অপরাধীদের।
তার উপর সাধারণ মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা আছে বলেই আমি মনে করি তিনি আজো বেঁচে আছেন। তাকে হাত দুয়েক সামনে থেকে গুলি করা হয়েছিল একবার । কিন্তু ট্রিগার চাপলেও গুলি আটকে যায়। দশ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার নাটক সাজিয়ে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের হাতে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু নাম গোপন করে এক ব্যক্তি তাকে আগে থেকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন বলে তিনি বেঁচে যান। চেষ্টা হয়েছিল তাকে দলীয় ক্যাডার পরিচয় দিয়ে সরকারের কাছে তার ইমেজ ক্ষুন্ন করার। তাও ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় ষড়যন্ত্রকারীরা। তাঁকে বদলী করা হয় হাটহাজারী রেঞ্জে। এ কথাও শোনা গিয়েছিল যে তার বদলীর সংবাদ পেয়ে জেলখানায় অপরাধীরা মিষ্টি মুখ করেছিলেন।

আমরা বিশেষ করে সাংবাদিকরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না, তার মতো একজন ক্ষুরধার চৌকষ কর্মকর্তার এমন করুণ পরিণতি। তিনি নির্বিকার। তার কথা , ‘আমাকে কোথায় দেবে, তা ডিপার্টমেন্টের ব্যাপার। আমি এখানে থাকলেও যা করতাম, যেখানে যাবো সেখানেও একই কাজ করবো। পুরো বাংলাদেশ আমার কাছে এক; কোন তফাৎ নেই।” চলে গেলেন তিনি হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হয়ে। সেখানেও তিনি পাল্টালেন না। ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’ কথাটার সার্থক রূপায়ন দেখেছি তার মধ্যে। হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও ভুজপুরের অনেকেই বাবুল ভাইয়ের জন্য মন্দিরে পূজো দেয়া, মানত করা কিংবা মসজিদে মিলাদ পড়াতে দেখেছি। দুর্ধর্ষ খলিল ডাকাত বাবুল ভাইয়ের হাতে ধরা পড়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন তাকে, যে তার এলাকায় খলিল ডাকাতি করে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, তার সে চেষ্টার বাস্তবায়ন হয়নি। আর কখনো হবেও না। কারণ সে এখন জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে চলে গেছে ওপারে। তা অনুপস্থিতিতে মাথা চেড়ে উঠার চেষ্টা করেছিল আরেক দুর্ধর্ষ ডাকাত কাদের। কিন্তু বিধি বাম। তাকেও চলে যেতে হয়েছে খলিলের কাছে। এভাবে উত্তর চট্টগ্রামের ত্রাস খ্যাত ওসমান ওরফে কিলার ওসমান কিংবা শেয়াখতের অপরাধ জীবন থেমে গেছে তার কারণেই। এদের মৃত্যুর পর তাদের লাশ রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়েছে, লাশের উপর থুথুর বৃষ্টি বয়েছে আর বাবুল ভাই সাধারণ মানুষের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিচ্ছেন একটু একটু করে। তারপরের বিষয় তো ইতিহাস। তার বদলীর কথা উঠলেই সাধারণ মানুষ দলমত নির্বিশেষে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, মানববন্ধন করে, আর পুলিশ বিভাগ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হন।
শুধুমাত্র অপরাধ দমনেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়তো এমন আত্মার টান তিনি অনুভব করতে পারতেন না। তাঁর ভেতর মনুষ্যত্ববোধ ছিল বলেই তিনি এমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। দুটো উদাহরণ দিই। ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়াকালীন এক গরীব স্কুল ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ কবে দেয় তার বাবা মা। অথচ সে ঐ স্কুলের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। কী করা যায়? শিক্ষক বাবুল ভাইকে বিষয়টি জানান। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটি এতটাই গরীব যে স্কুল ড্রেস সেলাই করার সামর্থ্য তার নেই, পাঠ্যপুস্তকসহ আনুষঙ্গিক খরচ তো দূরের কথা। বাবুল ভাই এলাকার দুজন বিত্তশালী ব্যবসায়িকে ডেকে বিষয়টি জানালেন। বাবুল আক্তার কোন একটা প্রয়োজনে তাদের ডেকেছেন, এটাই তাদের জন্য বড় ব্যাপার। দেখা গেল স্কুল ড্রেস সেলাই করে দেয়া শুধু নয়, এসএসসি পর্যন্ত তার লেখাপড়ার খরচ চালাতেও সানন্দে রাজী তাঁরা।

দ্বিতীয় ঘটনাটা বলি। হাটহাজারীতেই অর্থাভাবে চুরি করতো এক যুবক। ধরা পড়ার পর সে বাবুল ভাইকে খুলে বলে তার অপরাধ জীবনের আদ্যোপান্ত। বাবুল ভাই জেল থেকে মুক্ত হয়ে তার সাথে দেখা করতে বললেন। একদিন সে ঠিক হাজির হলো। বাবুল ভাই তাকে কিছু টাকা দিয়ে আখ মাড়াইয়ের মেশিন কিনে দেন একটা। যুবক থ। বুঝতে পারছে না, এটা আদৌ সম্ভব কিনা। প্রথম দিন সে দেড় হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছে। তা থেকে একটাকাও খরচ না করে নিয়ে এলো বাবুল ভাইয়ের কাছে। বললো, “স্যার আমার উপার্জনের প্রথম টাকা আপনার নিতেই হবে। বাবুল ভাই ফিরিয়ে দিলেন তাকে। ক’দিন পর আবার এলা সে। বলো “স্যার দাঁড়ানো অবস্থায় পা দেখা যায় এমন কোন ছবি পাইনি আপনার। আমি ক্যামেরাম্যান আনছি। একটা ছবি তুলতে দিয়েন। অতঃপর ছবি তোলা হলো। তার পরের কাহিনী ...। যুবকটি বাবুল ভাইয়ের ছবিটা বাঁধিয়ে তার ঘরের দরোজার সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন ব্যবসা শুরুর আগে ঐ ছবিতে বাবুল ভাইয়ের পায়ে সালাম করে ব্যবসা শুরু করে। এ ঘটনাটা যখন ভাবি, চোখে জল নেমে আসে। এ ধরনের মানুষের জন্য বিক্ষোভ হবে, সমাবেশ হবে, মানববন্ধন হবে; এটাতো খুব স্বাভাবিক। তার প্রথম দিককার দুটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা বলি।

২০০৭ সালের ১৮ মে। নরসিংদীর ভেলানগরে দেশ কাঁপানো একটি ঘটনা ঘটে। একই বাড়ির ৬ সদস্যকে কে বা কারা খুন করে। ঘটনার ৪ দিন পর লাশের পচা গন্ধে এলাকার মানুষ জানতে পারে বিষয়টি। সি মার্ডার’ হিসেবে পরিচিতি পায় ঘটনাটি। বাবুল আকতার তখন র‌্যাবে কর্মরত। নরসিংদী তার কর্মক্ষেত্র নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি চান নরসিংদীর ঘটনা নিয়ে কাজ করার। দিনের পর দিন রাতের পর রাত নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে থাকেন বিষয়টি নিয়ে। অবশেষে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে বিরু নামে একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন তিনি। বিরুকে ধরার জন্য তাকে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ হয়ে সিলেট ঘুরে ভৈরব আসতে হয়েছে। ভ্রমণ করতে হয়েছে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পথ। তার এ কর্মদক্ষতার জন্য তৎকালীন তত্ববাবধায়ক সরকার কর্তৃক তিনি প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল-সেবায় ভূষিত হন। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে স্কুলশিক্ষিকা তানিয়াকে কুয়াকাটায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে স্বামী তাকে ভাড়াটে খুনী দিয়ে খুন করায়। ভাড়াটে খুনী ছিল একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ড্রাইভার। শুধু এটুকু তথ্যের ওপর ভর করে খুনীকে ধরতে সক্ষম হন তিনি। খুনিকে ধরতে ঢাকা শহরের প্রতিটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে দিনের পর দিন ধরণা দিয়ে নিজের পরিচয় আড়াল করে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিন মাস পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে ওই খুনিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন তিনি।

সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন বলেই অল্প সময়ের এ চাকরিজীবনে তিনি একবার পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ’বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল-বিপিএম [সাহসিকতা], দু’বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক [পিপিএম], একবার আইজি ব্যাজ ও চারবার চট্টগ্রাম রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নির্বাচিত হয়েছেন। শেষ বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তাকে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম পরিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন পুলিশের মহাপরিদর্শক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘স্যার আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সাহসী অফিসার।” প্রধানমন্ত্রী মুচকি হেসে পিঠ চাপড়ে দিলেন তার।

বাবুল ভাই সম্প্রতি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে উন্নীত হয়েছেন। এ খবর শোনার পর সারা দেশেই তাকে নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লবিং শুরু হয়ে যায়। স্বীকার করতে দোষ নেই, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)তে আনার জন্য আমরাও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সফল হইনি। তিনি চলে গেছেন সমুদ্র পাড়ে, কক্সবাজার সদর জেলায়। তাকে বিদায় দেয়ার দিন কাঁদছে হাটহাজারীর মানুষ, কাঁদছেন বাবুল আক্তার। ক’দিন আগেও ফেসবুকের মাধ্যমে জানালেন তিনি সাগরপাড়ে গিয়েও মনটা বিশাল হয়নি এখনো, পাহাড়ের জন্য মন টানছে।

বাবুল ভাই-র এ টানটা অব্যাহত থাকুক। খুব স্বার্থপরের মতো শোনালো না, কথাটা? কী করবো বলেন, আমরা যে এমনই। না পেতে পেতে মনটাও কেমন জানি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। বন্ধুত্বের টানটা এভাবে আগে যে অনুভব করিনি। দূরে গেলেই বুঝি টানটা এমন টানটান হয়ে পড়ে।

পোস্টঃ ঋত্বিক নয়ন
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×