somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার

১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক সর্বাত্মক জনযুদ্ধ। দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ দেশমাতৃকাকে শৃঙ্খলমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে। শুধু রাজাকার, আলবদর, আলশামস ইত্যাদি সহযোগীর নিজের দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার সৈন্যদের সক্রিয়ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে। এছাড়া তারা সরাসরি বাঙালী নিধনে মেতে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস তারা হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ইত্যাকার অপকর্মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু বাঙালীর অপ্রতিরোধ্য মুক্তিযুদ্ধ যখন বিজয়ের দ্বার প্রান্তে, তখন আলবদরদের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা ও তার নিষ্ঠুরতম বাস্তবায়ন মুক্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়। বিজয়কে যখন আর কোনভাবেই ঠেকানো গেল না, রোধ করা গেল না নতুন রাষ্ট্রের নতুন স্বাধীনতার অভ্যুদয়কে, সেই প্রত্যাশাদীপ্ত শুভক্ষণে আলবদরের ঘাতকরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা হাতে নেয়। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর এই ৬ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রখ্যাত চিকিৎসক, লেখক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাংবাদিক প্রমুখকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করে। আর বৃদ্ধিজীবী হত্যার এই কর্মকা-ের পুরোভাগে ছিল আলবদর আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীন। জাতিকে মেধাশূন্য করে নতুন স্বাধীন দেশের উন্নতি-অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে আলবদরেরা একে একে হত্যা করে প্রফেসর গিয়াসউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, ড. আবুল খায়ের, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. সিরাজুল হক খান, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. ফয়জুল মহি, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ডা. মোহাম্মদ মর্তুজা, ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বি, প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লা কায়সার, সৈয়দ নাজমুল হক, নিজামউদ্দিন আহমদ,মুহম্মদ আখতার, আ ন ম গোলাম মোস্তফাসহ আরও অনেককে। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়ে সমগ্র জাতি যেমন বেদনার্ত, তেমনি তাদের স্বজনরাও দীর্ঘ একচল্লিশটি বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন দুঃখ, ক্ষোভ, অভিমান আর হতাশার ভারী পাথর। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একাত্তরের নরঘাতকদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয়েছে একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে।
এবার বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই পুরোধা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিচার কাজ শুরু হয়েছে এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে বিচারের প্রতীক্ষায় থাকা বুদ্ধিজীবীদের স্বজনদের যেমন আশ্বস্ত ও ভারমুক্ত করবে, তেমনি জাতিও এর মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হওয়ার উপলক্ষ খুঁজে পাবে। দীর্ঘ চারটি দশক ধরে ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করতে না পারার ব্যর্থতাও লাঘব হবে এসব ঘাতকের সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন ও যথাযথ শাস্তি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে।
বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই হোতা স্বাধীনতার পর থেকে বিদেশে আছে বলে জানা যায়। তাদেরকে যথাযথ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরত এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এছাড়া আরও যারা এই নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকেও গ্রেফতার করা জরুরী। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারী এবং বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের বিচারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত এই বিচার শেষ হবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×