somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

islam

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় বৃদ্ধ বয়সে কারাবরণ সৌভাগ্য মনে করছি : মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ:

মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ দেশবরেণ্য বুজুর্গ হজরত হাফেজ্জী হুজুর (র.)-এর বড় ছেলে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রধান। এই বয়োবৃদ্ধ আলেম এরই মধ্যে কয়েকবার স্ট্রোক করেছেন। ডায়াবেটিস ছাড়াও নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে না পারলেও রাসুলের প্রতি ভালোবাসায় হুইল চেয়ারে বসেই তিনি আন্দোলনের মাঠে নেমে আসেন। ২২ সেপ্টেম্বর সরকার তাকে গ্রেফতার করে। রাসুলের প্রতি ভালোবাসার অপরাধে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি লাভ করেন তিনি। আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে তার একটি সাক্ষাত্কার নেয়া হয়।
বয়োবৃদ্ধ এই আলেমের কাছে কারাগারে নিক্ষেপের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহানবী (সা.)কে অবমাননার প্রতিবাদ এবং রাসুল (সা.)-এর মর্যাদা রক্ষায় পবিত্র কোরআনে নির্দেশ আছে। প্রতিটি মুসলমানের জন্য তা পালন করা উচিত। সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ে রাসুলের মর্যাদা এমন অবস্থানে ছিল যে, তারা রাসুলের শানে সামান্য বেয়াদবিও সহ্য করতেন না। প্রিয় রাসুলকে গালমন্দ করা, তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন বা অবমাননাকর চলচ্চিত্র নির্মাণ নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর অপরাধ। এই সময় মুসলমানদের প্রধান শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়রা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও ইসলামের নবীকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাদের দেশে ইসলামবিরোধী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। মাত্র দিন কয়েকের ব্যবধানে আমেরিকায় ইহুদি নির্মাতা কর্তৃক ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের চলচ্চিত্র ও ফ্রান্সের পত্রিকায় রাসুলের অবমাননাকর কার্টুন ছেপে তারা মুসলমানদের প্রতি ঈমানি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করে মুসলমানদের সত্যিকারের উম্মতে মুহাম্মাদীর পরিচয় দেয়া দায়িত্ব। আমি সে দায়িত্ব পালন করতেই পথে নেমেছিলাম। কিন্তু সরকার আমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে।
রাসুল (সা.)-এর মর্যাদা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, মহানবী (সা.)-এর অবমাননার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী তাওহিদি জনতা ব্যাপকভাবে ফুঁসে উঠেছে। অসংখ্য মানুষ জীবনও দিয়েছেন। আমাদের দেশেও একই ধারাবাহিকতায় আমজনতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন বিগত কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম খেলাফত আন্দোলনই এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দশ হাজার ছাত্র স্মরণকালের বৃহত্ মানববন্ধন পালন করেছেন। এই ইস্যুতে ২২ সেপ্টেম্বর ইসলামী ও সমমনা ১২ দল পল্টন ময়দানে মহাসমাবেশের ডাক দেয়। কিন্তু পশ্চিমাদের পদলেহী জালিম সরকারের পুলিশ বাহিনী ওপর মহলের নির্দেশে সমাবেশস্থল ও এর আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে আমাদের সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয়। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করলে সরকার চরম অমানবিক পন্থায় তা দমনের পদক্ষেপ নেয়। সরকার তৌহিদী জনতার প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও হরতাল ঠেকাতে আমাকেসহ ৩৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। আমাকে গ্রেফতার করায় হরতাল আরও ভালো হয়েছে। আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় বৃদ্ধ বয়সে কারাবরণ নিজের জন্য সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য মনে করছি। জালেম সরকারের প্রতি জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। হরতাল পালনে দেশের কোথাও কোনো পিকেটিং হয়নি। ৯০ ভাগ উম্মতে মোহাম্মাদী ঈমান আকিদার তাগিদে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালনে সাড়া দিয়েছেন।
আওয়ামী সরকারের হঠকারিতা ও ধর্মবিদ্বেষী আচরণের নিন্দা করে তিনি আরও বলেন, ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে এ সরকারের উদ্যোগে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধান থেকে মুছে দেয়া এবং রাসুল (সা.)-এর অবমাননার বিষয়টি কেউ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। বিদেশিদের মদতপুষ্ট এই সরকার রাসুল (সা.)কে অবমাননা করে পশ্চিমাদের নির্মিত চলচ্চিত্রের লোকদেখানো নিন্দা জানিয়ে নিজেদের ধর্মভীরু প্রমাণ করতে চাইলেও ইসলামী দলগুলোর ডাকা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি, শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে তাদের ভণ্ডামির মুখোশ উন্মোচন করেছে। এরা যে বিদেশিদের দালাল এবং ইসলামবিরোধী অপশক্তি তা বুঝতে আর কারও বাকি নেই। মুসলমানদের প্রাণের নবী রাসুল (সা.)কে অবমাননা এদেশের মুসলমান নীরবে মেনে নেবে না। মুসলমানদের আবেগ নিয়ে খেলা করার পরিণতি তাগুতি সরকারের জন্য কঠিন পরিণতি ডেকে আনবে বলে আমি মনে করি। সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমাদের ব্যঙ্গ চলচ্চিত্রের নিন্দা জানিয়েছিলেন। ব্যাপারটা যে কতটা ঠুনকো আর খেলো এ ঘটনা তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। মানুষের কাছে নিজেকে মুসলিম দরদী হিসেবে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে বিবৃতি দেয়া আর বিপরীতে মানুষের আবেগকে প্রতিহত করতে রাষ্ট্রের সর্বশক্তি নিয়োগ এখন আর অপ্রকাশ্য কোনো বিষয় নয়।
নবীজি (সা.)-এর প্রতি অবমাননা এবং সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়াকে একই পর্যায়ভুক্ত অপরাধ সাব্যস্ত করে তিনি বলেন, মার্কিন চলচ্চিত্রে ইহুদিরা মহানবী (সা.)কে অবমাননা করেছে। আর বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতার জোরে সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে তদস্থলে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র স্থাপন করে জঘন্যতম অপরাধ করেছে। মহান আল্লাহর মর্যাদাকে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বিগত ৩৩ বছর সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস লিপিবদ্ধ থাকায় দেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। এ মূলনীতিটি সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার জন্য দেশে কোনো মিছিল-সমাবেশও হয়নি। দাবিও ওঠেনি। তা সত্ত্বেও আল্লাহর প্রতি আস্থা-বিশ্বাস কার স্বার্থে বাদ দেয়া হয়েছে? এতে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত হানা হয়েছে। আল্লাহর বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকারের সরাসরি এ যুদ্ধ ঘোষণার ফলে বাংলাদেশে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অবস্থান বাংলাদেশে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ইসলাম, কোরআন, কা’বা শরীফ ও বিসমিল্লাহ নিয়ে শতাধিক স্থানে কটূক্তি করেছে। আমেরিকায় মহানবী (সা.)কে অবমাননা করলে প্রতিবাদ করব। আর বাংলাদেশে আল্লাহর নাম মুছে দেয়া হবে, ইসলাম ও মহানবী (সা.)কে অবমাননা করলে প্রতিবাদ হবে না, এটা কোনো ঈমানদারের নীতি হতে পারে না।
ইসলামী ও সমমনা ১২ দল ঘোষিত ২৩ সেপ্টেম্বরের হরতালের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, হরতালে বিএনপির সমর্থন দেয়া তো দূরের কথা, বরং আমাকেসহ ৩৩ জনকে গ্রেফতার করেছে, পুলিশের হামলায় অনেক আহত হয়েছে, আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার—এ জুলুমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদও তারা করেনি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, জিয়া ও শেখ মুজিবের মর্যাদা রক্ষার জন্য, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ শত শত দিন হরতাল পালন করে, অথচ আল্লাহর মহানবী (সা.) ও ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় তারা কোনো কর্মসূচি পালন করে না। জিয়াউর রহমান সংবিধান সংশোধন করে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন করেছিলেন। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটি বাতিল করলেও বিএনপি তেমন কোনো প্রতিবাদ করেনি। ইসলামী ইস্যু থেকে দূরে থেকে বিএনপি এখন সেক্যুলার সাজার চেষ্টা করছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সেক্যুলারিজমের লেজুড়বৃত্তি করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না। ঈমান ও দেশ রক্ষার আন্দোলনে যারা সাড়া দেবে, আমরা তাদের স্বাগত জানাব।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×