somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবাধিকার বিড়ম্বনা:

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক.
গত বছরের ফেব্রুআরির ঘটনা। গাদ্দাফী বিরোধী আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে তখন।গাদ্দাফী ও যথারীতি তার বাহিনী লেলিয়ে দিলেন।রাজপথে নামল ট্যাংক আর আকাশে যুদ্ধবিমান।মারা পড়ল অসংখ্য মানুষ।মানবাধিকার রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থ হলেন গাদ্দাফী-যা কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত নয়।তাই প্রথমে তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হল।পরে আসল ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।সর্বশেষে হস্তক্ষেপ করল ন্যাটো।ন্যাটোর মুহুর্মুহু বিমান হামলায় মারা পড়ল হাজার খানেক মানুষ।অবশেষে নাটকের যবনিকা পতন...ঠিক একই সময়ে বাহরাইনের শিয়ারা শাসকগোষ্টীর বিরুদ্ধে নামল রাজপথে।এখানেও যথারীতি সেনা লেলিয়ে দেয়া হল।আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্রে তারা পাখির মত গুলি করে মারল আন্দেলনকারীদের।তবে এটা মানবাধিকার লংঘনের মত গুরুতর ঘটনা ছিল না।তাই যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহবান জানাল।

দুই.
এবার একটু পেছনে ফেরা যাক।১৯৮০ সালে সাদ্দাম হোসেন বিনা উস্কানিতে ইরান আক্রমণ করে বসলেন।ইরান ছিল সদ্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারত।তাই এটা কোন আমলযোগ্য অপরাধ হল না।আমেরিকা একদিকে যুদ্ধ বিরতির আহবান জানাল।অন্যদিকে সাদ্দামকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হল জাহাজ ভর্তি অস্ত্র।সাদ্দাম হয়ে উঠলেন আমেরিকা-পাশ্চাত্যের স্নেহভাজন ব্যক্তি।তাই সাদ্দাম কুর্দি-শিয়াদের বিরুদ্ধে ক্রসেড শুরু করলে আমেরিকা বলল-এগুলো নিতান্তই ইরাকের আভ্যন্তরীন ব্যাপার। এমন বিষয়ে নাক গলানো কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।১৯৯১ সালে আবার একই সাদ্দাম আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করে কুয়েত আক্রমণ করে বসে।ফলে আমেরিকার নেতৃত্বে গঠিত হল কোয়ালিশন ফোর্স।সাদ্দাম আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হলেন।তারপর মানবাধিকার লংঘনের গুরুতর অভিযোগে ইরাকের উপর আরোপ করা হল নিষেধাজ্ঞা।ইরাকের শিশুরা মরল লাখে-লাখে,ঝাঁকে-ঝাঁকে।তবে যে সাদ্দামকে কেন্দ্র করে এই নিষেধাজ্ঞা তার নাতি-নাতনির কিচ্ছু হল না।

তিন.
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মায়ানমার।এর সামরিক জান্তা একটু স্বাধীনচেতা টাইপের।আমেরিকার মোড়লিপনা মানতে নারাজ।আবার মায়ানমারের সাথে চায়নার বেশ দহরম-মহরম সম্পর্ক।তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল।বলা হল মায়ানমারের মানবাধিকার রেকর্ড তেমন একটা ভাল নয়।অভিয়োগ সত্য।তবে একই অভিযোগ আনা যেত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকার এই জারজ সন্তান ২০০৮ সালে গাজা উপত্যকায় ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে,তখন।তবে তা আর হল না।বরং ইসরায়েলকে এক জাহাজ অস্ত্র দিয়ে বলা হল একটু সংযম প্রদর্শন করতে।আর জাতিসংঘের নিন্দা প্রস্তাবে আমেরিকা বরাবরের মতো ভেটো দিয়ে বলল-“নিজ নাগরিককে রক্ষার অধিকার পৃথিবীর সব দেশেরই আছে”।

চার.
এখন মানবাধিকার কর্মী প্রসঙ্গে আসা যাক।বিল ক্লিনটন।আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট।মানবাধিকার বিশেষ করে নারীর অধিকার নিয়ে বেশ স্বোচ্চার ছিলেন তিনি।তবে ভদ্রলোক এক কান্ড করে বসলেন।স্ত্রী হিলারীকে বঞ্চিত করে ওভাল হাউসে মণিকার সাথে অবৈধ প্রণয়ে মাতলেন বছরের পর বছর। অবশ্য এজন্য তিনি জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন।ফলে নারী-অধিকার লংঘনের মত গুরুতর পাপ নিমিষেই মাফ হয়ে গেল!

পাঁচ.
চেরি ব্লেয়ার।সাবেক ব্রিটিশ ফাষ্ট লেডি।শুধু অন্যায় ইরাক আগ্রাসনকে সমর্থন করেই ক্ষান্ত হননি;সহধর্মিণী হিসেবে স্বামীকে যুগিয়েছেন অফুরন্ত অনুপ্রেরণা আর সৈন্যদের অদম্য উৎসাহ।বক্তৃতা-সভা-সেমিনার সবখানেই ছিলেন যুদ্ধের পক্ষে মুখর।তবুও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ মানবাধিকার কর্মীর!আগমনে এদেশের মানবাধিকার পাড়ায় আনন্দের উচ্ছ্বাস বয়ে য়ায়।ফলে তাকে স্বাগত জানাতে উপচে পড়ে মানবাধিকার কর্মীদের ঢল!

আবার গাদ্দাফী প্রসঙ্গে ফেরা যাক।যুদ্ধ পরবর্তী লিবিয়ায় অন্তবর্তী সরকার গঠিত হল।এ সরকারের মানুষগুলো গাদ্দাফী বিরোধী হলে কী হবে-এদের কিছুসংখ্যক আবার একটু স্বাধীনচেতা টাইপের;পাশ্চাত্যের মর্জিমাফিক দেশ চালাতে নারাজ।তারা নিজেদের দেশ গড়বে নিজেদের মত।ফলে এদেরকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হল।তারপর গাদ্দাফী হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সরাসরি বহিস্কার. . .শত হোক স্বৈরশাসক, শত হোক অত্যাচারী-তবু্ও তিনি তো একজন মানুষ।মানুষ হিসেবে তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল,অধিকার ছিল আত্মপক্ষ সমর্থনের।তবুও তাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হল. ..এ তো আর যেমন তেমন পাপ নয়! এ যে সরাসরি মানবাধিকার লংঘনের পাপ!এ পাপ একবার ধরলে কি আর সহজে ছাড়ে?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×