somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমবায় সমিতির কোনো শাখা রাখা যাবে না

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমবায় সমিতিগুলোর কোনো শাখা অফিস থাকতে পারবে না।
অননুমোদিত শাখা খুলে সারা দেশে জনগণের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগের কারণেই সমবায় আইন সংশোধন করে এ বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর আইনের খসড়াটি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয়েছে। ওই কমিটির অনুমোদনের পর সংসদে তা বিল আকারে তোলা যাবে।

খসড়া আইনের নিবন্ধন অধ্যায়ে ১-এর (জ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ছাড়া কোন সমবায় সমিতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন শাখা খুলিতে পারিবে না এবং এই আইন জারির পূর্বে কোন অনুমোদিত শাখা অফিস থাকিলে ছয় মাসের মধ্যে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল সমিতির সঙ্গে একীভূত হইবে অথবা আবেদনক্রমে উক্ত শাখা অফিস এই আইনের অধীনে প্রাথমিক সমিতি হিসেবে নিবন্ধিত হইতে পারিবে।' অর্থাৎ ওই শাখা ছয় মাসের মধ্যে বিলুপ্ত না করে মূল সমিতির বাইরে আলাদা সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম চালাতে পারবে। এর অর্থ দাঁড়ায়, কোনো সমবায় সমিতির শাখা অফিস থাকতে পারবে না। নতুন এই বিধানের কারণে সমবায় সমিতিগুলোকে আইন পাসের ছয় মাসের মধ্যে সব শাখা অফিস গুটিয়ে ফেলতে হবে।

এ খাতের সংশ্লিষ্টরা নতুন আইন প্রণয়নে সমর্থন জানালেও শাখা বাতিল আইনের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা বলছেন, জাতীয় পর্যায়ের বেশির ভাগ সমবায় সমিতির জেলা পর্যায়ে শাখা রয়েছে। নতুন আইনের কারণে শাখা বন্ধ করা হলে সদস্যদের আমানতও ফেরত দিতে হবে। এতে বহু সমবায় সমিতি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নতুন আইনের প্রস্তাবিত ধারাটি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা খসড়া আইনে বলা হয়েছে।
এই আইন জারির পর সমবায় সমিতির আইনের অধীনে নিবন্ধিত প্রাথমিক সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক, কেন্দ্রীয় সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো প্রাথমিক কেন্দ্রীয় বা জাতীয় সমবায় সমিতির নামের সঙ্গে 'ব্যাংক' শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কোনো সমবায় সমিতির নামে আগে থেকে ব্যাংক শব্দ থাকলে তা আইন জারির তিন মাসের মধ্যে সংশোধন করতে হবে। একই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো সমবায় সমিতি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।

আর কোনো সমবায় সমিতি তার সদস্য ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আমানত গ্রহণ বা ঋণ দিতে পারবে না। এসব বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান খসড়া আইনে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত (এখনো নিবন্ধন পায়নি) সমবায় সমিতিগুলোর বাহারি বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ঝোলানোর ক্ষেত্রেও নতুন আইনে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, এ ধরনের সমবায় সমিতির নামের সঙ্গে কমার্স, ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট, কমার্শিয়াল ব্যাংক বা সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। এসব শব্দ ব্যবহারকারী সমিতিকেও সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা খসড়া আইনে আছে।

বিভিন্ন সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, এসব প্রতিষ্ঠানে পরিচালকরাই সব শেয়ারের মালিক। খসড়া সমবায় আইনে মালিকানা সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'কোন সদস্য বা ক্ষেত্রমতে সমিতি কোন সমবায় সমিতির মোট শেয়ার মূলধনের এক-পঞ্চমাংশের অধিক শেয়ার ক্রয় করিতে পারিবে না।'

খসড়া আইনের পঞ্চম অধ্যায়ের ২৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'কোন সদস্য বা প্রাক্তন সদস্য বা বহিষ্কৃত সদস্যের নিকট সমিতির কোন পাওনা থাকিলে তাহা আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবদ্দশায় তাহার বিরুদ্ধে বা তাহার মৃত্যুর পর তাহার মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারের বিরুদ্ধে যে কোন সময় মামলা রুজু করা যাইবে এবং ওই সদস্যের মনোনীত ব্যক্তি বা তাহার উত্তরাধিকার না থাকিলে তাহার মৃত্যুর তারিখ হইতে বা বহিষ্কার আদেশের তারিখ হতে লিমিটেশন অ্যাক্ট ১৯০৮ অনুযায়ী তামাদি মেয়াদ গণনা করিতে হইবে।'

সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ধীরাজ কুমার নাথ বলেন, এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই নতুন আইন করা প্রয়োজন। তবে খসড়া আইনে রেজিস্ট্রেশনসহ বেশ কিছু বিষয় রয়েছে, যা পেশাজীবী সমবায় বিশেষ করে তাঁতি, মৎস্যজীবী, জেলে, রিকশাওয়ালাদের সমবায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমবায় বিভাগের আরো আলোচনা করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তবে খসড়া আইনের এ ধারা কার্যকর করা হলে সমবায় খাতে ধস নেমে আসার আশঙ্কা করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

দেশে মোট সমবায় সমিতির সংখ্যা এক লাখ ৭৮ হাজার ৮৮০টি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি রয়েছে, যেগুলোর প্রায় প্রতিটিরই সারা দেশে শাখা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। নতুন আইন করা হলে এসব শাখা আর থাকবে না। ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতের কার্যকরী মূলধন চার হাজার ৮৮৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ সময় ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১৪৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

বিশিষ্ট এক সমবায়ী বলেন,'সমবায়ের ২০০১ সালের আইন অনুযায়ী অনুমোদন নিয়েই সারা দেশে শাখা খুলেছি। সেখানকার গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি নানা খাতে বিনিয়োগ করেছি। নতুন আইন করে সরকার শাখাগুলো বন্ধ করে দিলে আমরা ঋণের অর্থ আদায় করতে পারব না। ফলে আমাদের পক্ষে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়াও সম্ভব হবে না। আবার যেসব সদস্য জামানতের বিপরীতে সমবায় থেকে ঋণ দিয়েছে, তারা শাখা বন্ধের কথা শুনলে সে ঋণ আর ফেরত দেবে না। এসব অনুমোদিত শাখা বন্ধ হলে শাখাগুলোতে কর্মরত কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিও থাকবে না।'

তিনি আরো বলেন, কিছু সমবায় সমিতির অবৈধ কাজের কারণে নতুন আইন করে সবাইকে শাস্তি দেওয়ার পথে হাঁটছে মন্ত্রণালয়। নতুন আইন অনুযায়ী শাখাগুলো বন্ধ করা হলে ৫০ লাখ লোক কর্মসংস্থান হারাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৯০ লাখ লোক।



সূত্র:View this link
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×