♣♣♣ মদীনার মুসাফির.......৩ ♣♣♣
কাবা শরীফের তাওয়াফ শেষে আমরা যাচ্ছি সাফা মারওয়া পর্বতের মাঝে সায়ী বা ভ্রমন করার জন্য। সাফা একটি পর্বত মারওয়া আরেকটি পর্বত, এই পর্বত দুটির মাঝে দৌড়ানো ওমরাহ এর একটি অন্যতম কাজ। সাফা মারওয়া কেন দৌড়াতে হয় কেনই বা আমরা এটিকে দায়িত্ব হিসাবে পালন করবো এর কিছু ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে। আপনাদের সাথে সাফা মারওয়া পর্বতের পূর্ব ইতিহাস নিয়ে একটু কথা বলতে চাই যেহেতু আমি লেখার শুরুতে ওয়াদা করেছিলাম প্রতিটি স্থানের আগের ইতিহাস আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।
হযরতে আদম আঃ এর পুত্র শীষ আঃ কাবা ঘর নির্মানের পর কয়েক হাজার বছর কাবা ঘরে কোন রকম সংস্কার হয়নি এবং সেখানে কেউ ইবাদাতের জন্যও যায়নি। মক্কা তখন পতিত নগরীতে পরিনত হয়। মক্কার আসে পাশে ছিলোনা কোন মানুষের আনা গোনা। একসময় কাবা ঘর কয়েক ফিট বালির নিচে হারিয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ ইচ্ছা করলেন তিনি তার ঘর কাবাকে আবার মানুষের তীর্থস্থান বানাবেন। তাই ইব্রাহীম আঃ এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়লা কাবা শরিফকে পূনরুদ্ধার করতে আগ্রহী হলেন।
ইব্রাহীম আঃ এর কোন ছেলে সন্তান নেই। ৭০ বছর বয়সে আল্লাহ তায়লা ইব্রাহীম আঃ কে পুত্র ইসমাঈল দান করলেন। কিন্তু আল্লাহ এবার ইব্রাহীম আঃকে পরীক্ষা করতে লাগলেন। তিনি নির্দেশ দিলেন ইব্রাহীম তুমি তোমার পুত্র ঈসমাঈল ও স্ত্রী হাজেরা কে মক্কা নামক স্থানে রেখে চলে আসো।
ইব্রাহীম আঃ ততক্ষনাত আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে নিজ দেশ ফিলিস্তিন থেকে পুত্র ও স্ত্রীকে মক্কা নগরী নিয়ে আসলেন। তখন সেখানে কোন মানুষজন ছিলোনা। চারদিকে ধুধু প্রান্তর কোন প্রানীর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। এবার আল্লাহ বললেন ইব্রাহীম হাজেরা ও ইসমাঈকে রেখে তুমি তোমার দেশে ফিরে যাও,তোমার স্ত্রী পুত্রের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। যাবার সময় হাজেরা আঃ ইব্রাহীম আঃকে বললেন আমি জানি আপনি যা করছেন আল্লাহর নির্দেশেই করছেন এই মরু প্রান্তরে আপনি আমাদের রেখে যাচ্ছেন আমরা কি করে বাঁচবো ? ইব্রাহীম আঃ আকাশের দিকে ইশারা দিয়ে বললেন চিন্তা করোনা আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন।
কিছুদিন যাবার পর শিশু ইসমাঈল আঃ ও মা হাজেরার সবটুকু গচ্ছিত খাবার শেষ হয়ে যায়। দুধের শিশু ঈসমাঈল আঃ মা এর বুকে কোন দুধ পাননা,পানির কাঁদছেন। মা হাজেরা অস্থির হয়ে পানির সন্ধান করতে লাগলেন। একবার তিনি সাফা পর্বতে দৌড় দেন, মরুভুমির মরিচিকার কারনে তিনি বিপরীত দিকের পর্বত মারওয়ায় পানি দেখতে পান ( বাস্তবে পানি নেই)।এভাবে তিনি মোট সাতবার দৌড়ান। আর মা হাজেরা আঃ এই সাত বার দৌড়ানো আল্লাহ তায়লা এতো পছন্দ করলেন যে কেয়ামত পর্যন্ত এই পর্বতদূটির মধ্যে দৌড়ানোকে হজ্বের অংশ বানিয়ে দিলেন।
ক্লান্ত ও জীর্ন হয়ে মা হাজেরা ঈসমাঈল আঃ কাছে ফিরে আসেন। এসে দেখেন ইসমাঈল আঃ মাটিতে পা দিয়ে আঘাত করে কান্নাকাটি করতে করতে বালু মাটিতে একটি গর্ত তৈরী হয় এবং সেখান থেকে পানির প্রবাহ শুরু হয়। আর সেটিই হলো বিখ্যাত জম জম কুপ। যাম্মা শব্দের অর্থ থেমে যাওয়া, জমে যাওয়া, বাধা দেয়া, আর যমযম অর্থ প্রাচুর্য। কেউ কেউ বলেন, মা হাজেরা গর্তের চারিদেকে বালু দিয়েবাঁধ দেন এবং বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে থেমে যা। এখান থেকেই এই কূপের নাম হয়েছে যামযাম, আমরা বলি যমযম। কেউ লিখেছেন, মা হাজেরা (আ.) যদি এভাবে চারিধার বেঁধে না দিতেন তবে এই কূপের পানি সারা পৃথিবীকে প্লাবিত করে ফেলতো।
এ কথাটা গ্রহণ করতে কারো মনে যদি হয় এটাও কি সম্ভব? তবে আমি বলবো মোটেই অসম্ভব নয়। কারণ আজ প্রায় পাঁচ হাজার বছর যাবত এই কূপ থেকে পানি উঠছে। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে লাখ লাখ লোক এই পানি পান করছে। পৃথিবীর বহু দেশ থেকে আগত হজ্জ ও উমরাকারীগণ বড় বড় গ্যালন ভরে পানি নিয়ে যাচ্ছেন।এত পানি এত বছর যাবত মানুষ নিতে থাকলে হয়ত বা সমুদ্রও এত দিনে শুকিয়ে যেত। যমযম কুপের পানি মানুষ আজো বরকত ও রোগমুক্তির জন্য পান করে।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখতে চাই জমজমের পানি পান করতে হয় দাঁড়িয়ে এবং কাবার দিকে মুখ করে যখন সব পানি বসে পান করার নির্দেশ আছে।এটি হযরত ইসমাঈল আঃকে সন্মান ও ইজ্জত দানের একটি অংশ।
তখনকার দিনে মরুভুমিতে যেখানেই পানি পাওয়া যেতো সেখানেই শুরু হতো মানুষের বসবাস, বিভিন্ন কাফেলা যাবার সময় যখন দেখলো এখানে পানি আছে তারা সেখানে তাবু করতে আরম্ভ করলো এবং শেষে সেখানেই বসবাস শুরু করলো।
এভাবেই শুরু হলো মক্কা নগরীর নতুন যাত্রা, প্রায় কয়েক লাখ বছর পরে মক্কা ফিরে পেলো নতুন প্রান,মানুষ ফিরে পেলো তাদের আশ্রয় আর ভালোবাসার স্থান মক্কাতুল মুকাররামা.........চলবে
আগের পর্বঃ
মদিনার মুসাফির...১
মদিনার মুসাফির...২
মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.
গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন
গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি
(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।
ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা
সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন